ঐতিহ্যবাহী, আধুনিক, এথনিক—রুপালি গয়না দেখা যায় এই তিনটি ধারায়। এ রঙের কদর যেন চিরায়ত। গয়নায় রুপার ব্যবহার সব সময়ই জনপ্রিয়। তবে রুপা ছাড়াও অন্য ধাতু দিয়ে তৈরি হচ্ছে রুপার রঙের গয়না। সেগুলোর চাহিদাও কম নয়। প্রতিদিনের ব্যবহারে তো আছেই, অনুষ্ঠান বা দাওয়াতে তো পরা হচ্ছেই। বিয়ের সাজেও অনেক কনে বেছে নিচ্ছেন রুপালি গয়না।
রুপা ছাড়াও রুপালি
গলার সঙ্গে আটকানো চোকার কিংবা ভারী ঝোলানো মালা—চলতি ধারায় চলছে অনেক কিছুই। তবে গোটা দুনিয়ায় এখন এথনিক নকশার জয়গান। যে কোনো পোশাকের সঙ্গেই পরা যায় এ ধরনের রুপালি গয়না। সাধারণ সুতি শাড়িও নজর কাড়ে যদি সঙ্গে থাকে ভারী রুপালি গয়না। সূক্ষ্ম কাজের ফুল, লতাপাতা, জ্যামিতিক নকশা যেন নিজেদের মতো করে তৈরি করে ফেলে নানা গল্প।
রুপালি গয়নাগুলো বানানো হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ধাতু দিয়ে। রুপা তো আছেই। দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম, জার্মান সিলভার, টাইটানিয়াম, টিন, নিকেল দিয়ে সরাসরি রুপালি রঙের গয়না তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া তামা, লোহা, পিতল, ইত্যাদি দিয়ে গয়না বানিয়ে ওপরে দেওয়া হচ্ছে রুপার প্রলেপ। দাম কম হওয়ায় এসব গয়নার চাহিদা বেশি। জানালেন কনক দ্য জুয়েলারি প্যালেসের স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার লায়লা খায়ের।
নকশায় বৈচিত্র্য
হাতে বানানো গয়নার আবেদন সব সময়ই ভিন্ন। কারিগরদের সময়ও লাগে অনেক। প্রতিটি কারিগরেরই থাকে আলাদা দক্ষতা। অনলাইনভিত্তিক দোকান গ্লুড টুগেদারের স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার মেহ্নাজ আহ্মেদ জানান, ‘একেকটা গয়নার নকশা সঠিকভাবে উঠে আসতে সময় লাগে দেড় মাসের মতো। প্রতিবার নতুন সংগ্রহে অন্তত ৮-১০টার মতো নতুন গয়না বানাই আমি। কারিগরদের হাতে শুধু নকশাগুলো উঠে আসতেই সময় লেগে যায় চার মাসের মতো।’
বিভিন্ন ধরনের নকশা থেকেই গড়া হয় গয়নাগুলো। ধাতব পাত, তারের কাজ, ডাইসের কাজ, মীনাকারির মাধ্যমে নতুন গয়না বানানো হচ্ছে। পাথর ছাড়াও হাতে এঁকে মীনাকারির কাজ করা হয় রুপালি গয়নার ওপর। এর সঙ্গে আটকে দেওয়া হচ্ছে বিডস, পাথর, মুক্তার মতো পাথর ইত্যাদি। রুপার প্রলেপ দেওয়া ছাড়াও নির্দিষ্ট রাসায়নিকে ডুবিয়ে নিলেও চলে আসে রুপালি রং।
কনের সাজে রুপালি ছোঁয়া
বিয়ের কনেরাও আজকাল বেছে নিচ্ছেন রুপার গয়না। দেশীয় কাতান বা জামদানির সঙ্গে মানিয়েও যাচ্ছে বেশ। কনের সাজে অনেকে তামার ওপর রুপার প্রলেপ দেওয়া গয়না পরার সাহসও দেখাচ্ছেন। কিছুদিন আগে সংগীতশিল্পী সভ্যতা নিজের বিয়ের অনুষ্ঠানে হালকা গোলাপি জামদানির সঙ্গে রুপালি রঙের গয়না পরে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। সোনালি রঙের গয়না ভালো লাগে না বলেই বেছে নিয়েছিলেন রুপার রং, জানালেন সভ্যতা।
বিয়ের এই গয়না বানানোর পেছনের গল্প শোনালেন অনলাইন দোকান সিক্স ইয়ার্ডসের স্বত্বাধিকারী লরা খান। বানানো ছিল এমন একটি কানের দুলের নকশার ওপর ভিত্তি করে গয়নার সেটটি বানানো হয়। গয়নার বাইরের ধাঁচটি পুরোনো দিনের নকশার মতো হলেও ভেতরের নকশা আধুনিক। সীতাহারের মতো লম্বা করে তৈরি করা হয়েছিল মালাটি। লরা খান জানান, অনেক কনেই এখন বিয়ের জন্য বেছে নিচ্ছেন রুপালি রঙের গয়না। হলুদ, মেহেদি, আক্দ কিংবা বিয়ের মূল অনুষ্ঠানেই পরে নিচ্ছেন এ ধরনের গয়না। এতে পুরো লুকেই চলে আসছে স্নিগ্ধতা ও ভিন্নতা।
মানিয়ে যায় সব পোশাকের সঙ্গে
রুপালি রঙের গয়না মানিয়ে যায় সব ধরনের পোশাকের সঙ্গেই। সব রঙের সঙ্গেও। ভারী বা হালকা নকশার গয়নাগুলোতে মূলত পুরোনো ও আধুনিক নকশার সমন্বয়ে আনা হচ্ছে ফিউশনধর্মী নকশা।
ফাংকি নকশার প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে তরুণ বা কিশোরীরা। অন্যদিকে পুরোনো নকশার রুপালি গয়নাগুলো বেছে নিচ্ছেন সব বয়সীরাই।