ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী রুম্পা হত্যা মামলায় তার বন্ধু আব্দুর রহমান সৈকতের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। গতকাল রবিবার তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তার বিরুদ্ধে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস।
অপরদিকে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মামুনুর রশিদ জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। শনিবার রাতে সৈকতকে আটক করে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল তাকে রমনা থানার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। ২২ বছর বয়সি সৈকত স্বীকার করেছেন, রুম্পা তার প্রেমিকা। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় রুম্পার সঙ্গে তার কথা হয়। সৈকত এক সময় স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন।
শুনানিতে যা বলা হয়েছে : আদালতে সৈকতের পক্ষে আইনজীবী আবদুল হামিদ ভূঁইয়া বলেন, এক সপ্তাহ আগেই আসামির বাবা মারা গেছেন। তারও সপ্তাহ খানেক আগে তার চাচা মারা যান। ঘটনার পর ডিবি পুলিশ ফোন করে ডাকলে সৈকত সেখানে উপস্থিত হন। তিনি সাদা মন নিয়ে ডিবি অফিসে যান। সদ্য বাবা হারানো একটা ছেলের পক্ষে এ ধরনের হত্যা ঘটানোর মতো মানসিক অবস্থা থাকাটা অস্বাভাবিক। তাছাড়া এই মেয়ের যন্ত্রণায়ই সম্প্রতি তিনি স্টামফোর্ড ছেড়ে অন্যত্র ভর্তি হন।
জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন খান বলেন, যেহেতু আসামি পক্ষের আইনজীবী নিজেই স্বীকার করছেন মেয়ের যন্ত্রণায় বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছে, সুতরাং তার সঙ্গে মেয়ের সম্পর্কের বিষয়টি প্রমাণিত। আর এ ক্ষোভ থেকে আসামি এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। মোবাইল ফোনের কল রেকর্ড পরীক্ষাসহ প্রাপ্ত আলামত যাচাই-বাছাই করতে তাকে রিমান্ডে নেওয়া জরুরি।
আদালতে প্রতিবেদন : ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের বিষয়ে ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস আদালতকে জানান, রুম্পা ও সৈকতের প্রেমের সম্পর্ক সম্পর্কে অবনতি ঘটে। ৪ ডিসেম্বর তারা স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বাইরে দেখা করেন। তখন কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা বলেন সৈকত। রুম্পা বারবার অনুরোধ করলেও সৈকত সম্পর্ক রাখতে রাজি হচ্ছিলেন না। এ নিয়ে দুই জনের মনোমালিন্য ও বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। এর জের ধরে ঐ দিন রাত পৌনে ১১টায় সৈকত তার কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে রুম্পাকে ৬৪/৪ সিদ্ধেশ্বরীর বাড়িটির ছাদে নিয়ে যান। একপর্যায়ে রুম্পাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেন—এটাই প্রাথমিকভাবে জোর সন্দেহ করা হচ্ছে।
ডিবি জিজ্ঞাসাবাদে সৈকত : সূত্র জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সৈকত জানিয়েছে, প্রায় দুই বছর ধরে রুম্পা ও সৈকতের সম্পর্ক। স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে দুই জনই কালচারাল সংগঠনের সদস্য হওয়ায় তাদের ঐ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রুম্পার পরিবারের সদস্যরা তাদের দুই জনের সম্পর্কের কথা না জানলেও সৈকতের পরিবারের সদস্যরা জানতেন। কিন্তু চার মাস হলো তাদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল। রুম্পা প্রায়ই সৈকতকে বিয়ের চাপ দিয়ে আসছিল। তবে সৈকত আর্থিক সংকট ও ক্যারিয়ার না হওয়ার কারণে এতো দ্রুত বিয়েতে রাজি হননি। একপর্যায়ে সৈকত নিজে থেকেই রুম্পাকে দূরে ঠেলে দেয়। রুম্পা যেন সৈকতকে ফোন করতে না পারে সেজন্য সে মোবাইলের সিমও কয়েকবার পরিবর্তন করে। কিন্তু রুম্পা তার পথ ছাড়েনি। সৈকতকে আবার তার সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের জন্য বান্ধবীদেরও দিয়ে চেষ্টা চালায়। এর পরও মন গলেনি সৈকতের। সূত্র জানায়, রুম্পার মৃত্যুর ঘটনায় ডিবি পুলিশ তার বেশ কয়েকজন বন্ধু এবং বান্ধবীকে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
ডিসি ডিবি (দক্ষিণ) যা বলেন : মামলার তদন্তের প্রধান সমন্বয়কারী ভারপ্রাপ্ত ডিসি ডিবি (দক্ষিণ) রাজীব আল মাসুদ জানিয়েছেন, এটা হত্যা না আত্মহত্যা তা আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। অনেকটা ধোঁয়াশার মধ্যে আছি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে আমরা বিষয়টি বুঝতে পারব। সৈকতকে রিমান্ডে আনা হয়েছে। রিমান্ডে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে। আশা করছি বিষয়টি খুব তাড়াতাড়ি পরিষ্কার হবে।
কললিস্ট : সূত্র জানায়, রুম্পার মোবাইল ফোনের কললিস্ট পরীক্ষা করে দেখা যায় যে, ঘটনার দিন থেকে আগের তিন দিনে মোট ২৪ বার রুম্পা সৈকতকে ফোন করেছেন। ঘটনার দিন রুম্পার সঙ্গে সৈকতের তিন মিনিট কথা হয়। এতে সৈকত রুম্পাকে উচ্চবাচ্য করে কথা বলেন। রুম্পার মৃত্যুর পর সৈকত নারায়ণগঞ্জ এলাকায় এক বন্ধুর বাসায় আত্মগোপনে যান। কিন্তু রুম্পার ঘটনায় তাকে আইনি জটিলতায় পড়তেই হবে এমনটি বোঝার পর সে তার বাসা খিলগাঁওয়ের গোড়ান এলাকায় চলে আসেন। সৈকতকে শনিবার রাতে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ডিবি পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের একটি টিম। নানা প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে গেছেন। আবার অনেক প্রশ্ন অকপটে উত্তর দিয়েছেন।
ভিডিও ফুটেজ : এ দিকে ভিডিও ফুটেজ সম্পর্কে তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, যে তিনটি ভবনের মাঝে রুম্পার মৃতদেহ পাওয়া গেছে, সেখানকার একটি ভবনের প্রবেশমুখে ৬টা ২৭ মিনিটে রুম্পার শারীরিক গঠনের মতো একজনকে ঢুকতে দেখা গেছে। কিছুটা অস্পষ্ট ঐ ছবি, ফলে সেটা রুম্পা কি না, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, গত বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে সিদ্ধেশ্বরীর ৬৪/৪ নম্বর বাসার নিচে রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার মরদেহ পাওয়া যায়। ২৫৫ শান্তিবাগে মা পারুল বেগম রুম্পা ও এক ছেলেকে নিয়ে থাকতেন। তার বাবা রোকনউদ্দিন হবিগঞ্জের একটি পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক।