রোববার ব্রিকলেনের বৈশাখী মেলা : এনগেজমেন্ট কমিটিতে সংশোধনী

ব্রিটবাংলা রিপোর্ট : পহেলা জুলাই রোববার ব্রিকলেনের ওয়েভার্স ফিল্ডে বসবে এবারের বৈশাখী মেলা। ইতোমধ্যে মেলার সব কিছু প্রস্তুত। মেলায় গান গাইতে আসবেন বাংলাদেশের বাউল শিল্পী আশিক এবং ব্যান্ড চিরকুট। এছাড়া ইউকের বাঙালী কমিউনিটির অহঙ্কার মামজি সঙ্গীত এবং নৃত্য পরিবেশন করবেন নাজ ও তার গ্রুপ বলি ফ্লিক্স। এদের পাশাপাশি স্থানীয় শিল্পীরাও গাইবেন। ওয়েভার্স ফিল্ডের প্রধান মঞ্চে দুপুর ১২টা থেকে শুরু হবে অনুষ্ঠান। চলবে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। তার আগে সকাল ১১টায় এলান গার্ডেন থেকে শুরু হবে বৈশাখী মেলার চিরাচরিত র‌্যালি। ব্রিকলেন, ওল্ডমন্টেগো স্ট্রীট এবং ভ্যালান্সরোড হয়ে দুপুর ১২টায় ওয়েভার্স গিয়ে শেষ হবে র‌্যালি। এদিকে মেলার এনগেজমেন্ট কমিটিতে শেষ মুহুর্তে সংশোধনী আনা হয়েছে। নির্বাহী মেয়র জন বিগস নিজ উদ্যোগে পুরনো তিন সদস্যকে পুনরায় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেন বলে জানা গেছে। কাউন্সিলের  ওয়েব সাইটে পুরো লিস্ট প্রকাশ করা হয়েছে।

https://www.towerhamlets.gov.uk/mela/index.htm

 

লেবার মেয়র জন বিগসের আমলে এবার তৃতীয়বারের মতো বৈশাখী মেলা হচ্ছে ব্রিকলেনে। এর আগে সাবেক মেয়র লুৎফুর রহমানের আমলে বৈশাখী মেলা ওয়েভার্স ফিল্ড থেকে সরিয়ে ভিক্টোরিয়া পার্কে স্থানান্তর করা হয়েছিল। আর মেলা পরিচালনার দায়িত্বে ছিল বৈশাখী মেলা কমিউনিটি ট্রাস্ট। সাবেক মেয়রের আমলে টেন্ডারের মাধ্যমে ৯ বছরের জন্যে বৈশাখী মেলা উদযাপনের কন্টাক্ট পেয়েছিল সিরাজ হকের নেতৃত্বে বৈশাখী মেলা কমিউনিটি ট্রান্স। কন্টাক্ট অনুযায়ী প্রতি তিন বছর পরপর কন্টাক্ট রিভিউর কথা ছিল। ২০১৫ সালের এপ্রিলে ইলেকশন কোর্টের রায়ে মেয়র লুৎফুর রহমানের পতনের পর পরবর্তী উপনির্বাচনে লেবার মেয়র জন বিগস ক্ষমতায় আসে বৈশাখী মেলা রিভিউর উদ্যোগ নেন। কিন্তু অডিটেড একাউন্টস জমা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় পরবর্তীতে রিভিউ হয়নি তবে কমিউনিটি ট্রাস্টের কাছ থেকে মেলা উদযাপনের দায়িত্ব নিজ হাতে নিয়ে আসে কাউন্সিল। এরপর থেকে এবার তৃতীয়বারের মতো বৈশাখী উদযাপন করে আসছে কাউন্সিল। এরআগেও কাউন্সিল নিজ উদ্যোগে বৈশাখী মেলা উদযাপন করেছিল।
এবার বৈশাখী মেলার বাজেট প্রায় ৩শ হাজার পাউন্ড। কাউন্সিল এবং বিভিন্ন স্পন্সর থেকে এই অর্থের যোগান হবে। তবে এবারের মেলা নিয়ে মেলা কিছু কান্ড ঘটে যাচ্ছে।
লাইভ ব্রডকাস্টিং নেই 
এবার কোনো বাঙালী টেলিভিশনের বৈশাখী মেলা সরাসরি সম্প্রচার করা হবে না। দীর্ঘদিন বৈশাখী মেলা লাইভ সম্প্রচার করেছে চ্যানেল এস। মধ্য এক দু’ বছর করেছে এনটিভি। তবে এবার কোনো টিভিতেই সেটি হচ্ছে না। নির্ধারিত সময়ের ভেতরে লাইভ দেখানোর জন্যে কাউন্সিল থেকে যে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছিল, তাতে কেউ সাড়া না দেওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে কাউন্সিল থেকে বলা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হল, লাইভ দেখানোর জন্যে টেন্ডার দিলেও এর বিনিময়ে যে অর্থ অফার করা হচ্ছে, আসলে লাভজনক নয়। তাই টিভিগুলো সেদিকে এতোটা আগ্রহ দেখায়নি। অন্যদিকে লাইভ দেখানোর সুযোগ না হলেও সবগুলো টিভিতে বিজ্ঞাপন দেওয়ার কথা বলেছিল কাউন্সিল। সেটাও হয়নি। সবগুলো টিভি বিজ্ঞাপন পায়নি।
এনগেজমেন্ট কমিটিতে রদবদল এবং …
নির্বাহী মেয়র জন বিগস দায়িত্ব নেওয়ার পর বৈশাখী মেলা ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে ওয়েভার্স ফিল্ড পার্কে ফিরিয়ে আনেন। একই বছর কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে একটি এনগেজমেন্ট কমিটি তৈরী করেন। এই কমিটি মেলার ব্যাপারে কাউন্সিলকে পরামর্শ দিয়ে থাকে। তবে এবার এই কমিটিতে পরিবর্তন করা হয়েছে। পুরনো কমিটি থেকে তিনজনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কমিটিতে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রতিনিধি হিসেবে সাবেক প্রেস মিনিষ্টার নাদিম কাদির। তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে চ্যানেল আই ইউরোপের এমডি রেজা আহমেদ সুয়েব চৌধুরী ফয়সাল এবং লেখক ও কলামিস্ট মাসুদ রানাকে বাদ দেওয়া হয়। বাদ পড়া একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানালেন, বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো আপত্তি নেই। তবে নূন্যতম সৌজন্যতাবোধের অংশ হিসেবে বাদ দেওয়ার আগে তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগই করা হয়নি কাউন্সিলের পক্ষ থেকে।
এবার বৈশাখী মেলা এনগেজমেন্ট কমিটির সদস্যরা হলেন কবি শামীম আজাদ, স্বাধীনতা ট্রাস্টের জুলি বেগম, বিবিসিসির সাবেক প্রেসিডেন্ট মাতাব চৌধুরী, ব্রিকলেনের ব্যবসায়ী আজমল হোসাইন, রেডব্রিজ কাউন্সিলের কাউন্সিলর জোৎসনা বেগম, রেইনবো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের মোস্তফা কামাল এবং লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সাবেক প্রেসিডেন্ট নবাব উদ্দিন।
টাওয়ার হ্যামলেটসে এতো কাউন্সিলর থাকতে রেডব্রিজের কাউন্সিলর কেনো বৈশাখী মেলার এনগেজমেন্ট কমিটিতে? এছাড়াও যাদেরকে বাদ দেওয়া হলো তাদেরকে কেনো আগে জানানো হলো না? এ নিয়ে প্রশ্ন উঠার পর চ্যানেল এস সংবাদে নির্বাহী মেয়র জন বিগস জানিয়েছেন, এই কমিটি করেছেন মেলা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সাবেক লিড মেম্বার আব্দুল মুকিত চুন্নু এমবিই। এদিকে আব্দুল মুকিত চুন্নু চ্যানেল এসে প্রচারিত সংবাদে এ বিষয়ে স্বচ্ছ কোনো বক্তব্য দেননি। উল্লেখ্য সাবেক লিড মেম্বার কাউন্সিলর আব্দুল মুকিত চুন্নু মেলা পরিচালনার দায়িত্বে থাকলেও গত ৩রা মের নির্বাচনের পর নতুন কেবিনেটে তার জায়গা হয়নি।

এনগেজমেন্ট কমিটি নিয়ে কমিউনিটিতে নানান কথা উঠার পর অবশ্য মেয়র নিজ দায়িত্বে এনগেজমেন্ট কমিটির সাবেক সদস্যদের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করেছেন বলে জানা গেছে। তাদের কাছে তিনি দু:খ প্রকাশ করে টাওয়ার হ্যামলেটসের ওয়েব সাইটে এনগেজমেন্ট কমিটিতে তাদের নাম পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করেন।
উল্লেখ্য লন্ডনের ব্রিকলেন বা বাংলা টাউনের বৈশাখী মেলার ইতিাহস বেশ পুরনো। ১৯৯১ থেকে ৯৬ সাল পর্যন্ত টাওয়ার হ্যামলেটসে দেশ বিকাশের উদ্যোগে হতো বৈশাখী মেলা। তবে বিশালাকারে প্রথম হয় বৈশাখী মেলা হয় ১৯৯৮ সালের ১০ মে। সিটিসাইড রিজেনারেশনের সহযোগিতা নিয়ে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। এর নেতৃত্বে ছিলেন বিশিস্ট ব্যবসায়ী মাহমুদ এ রউফ। এরপর ২০০০ সাল থেকে বৈশাখী মেলা ট্রাস্ট ব্রিকলেনে বৈশাখী মেলার আয়োজন করতে থাকে। নেতৃত্ব দেন সিরাজ হক। এরমধ্যে ২০০৯ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত কাউন্সিল মেলার আয়োজন করে। এরপর আবার মেলা ফিরে পান সিরাজ হক এবং মেলা চলে যায় ভিক্টোরিয়া পার্কে। ২০১৬ সালে মেয়র জন বিগস মেলা ফিরিয়ে আনেন ব্রিকলেনের ওয়েভার্স ফিল্ডে।

Advertisement