লুক্সেমবার্গ বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও বিস্তৃত ও গভীর করার নতুন সুযোগ অন্বেষণের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদেরকে তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশকে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেছে।প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তার প্রতিপক্ষ জেভিয়ার বেটেলের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করার সময় এই আশ্বাস প্রদান করা হয়েছে। প্রায় আধা ঘন্টা স্থায়ী কথোপকথনের সময় দুই প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের মধ্যেকার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন এবং বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতাকে আরও বিস্তৃত ও গভীর করতে নতুন সুযোগ অন্বেষণ করতে সম্মত হন।শেখ হাসিনা বাংলাদেশের চলমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় লুক্সেমবার্গকে অবিচল সমর্থক ও বিশ্বস্ত অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি লুক্সেমবার্গের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশে চলমান টিকাদানের অগ্রগতি এবং কোভিড-১৯ মোকাবেলা সম্পর্কে অবহিত করেন।তিনি গত বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের সময় লুক্সেমবার্গের গ্র্যান্ড ডিউকের পাঠানো একটি অভিনন্দন বার্তার কথা স্মরণ করেন।রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবাসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লুক্সেমবার্গের সহায়তা চাইলে জেভিয়ার বেটেল এই বিষয়ে লুক্সেমবার্গের সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেন।
রয়্যাল ইনস্টিটিউট অফ ব্রিটিশ আর্কিটেক্টস (আরআইবিএ) সাতক্ষীরার শ্যামনগরে অবস্থিত লুক্সেমবার্গের সাহায্যপুষ্ট ‘ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল’ ভবনটিকে ২০২১ সালের জন্য পুরস্কৃত করায় জেভিয়ার বেটেল তার সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।ডিজাইনার একজন বাংলাদেশি হওয়ায় শেখ হাসিনা ভবনটির স্থাপত্যেরও প্রশংসা করেন।কথোপকথনের সময় দুই প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় বিমান পরিষেবা চুক্তিটি শিগগির সম্পাদন করতে সম্মত হন। লুক্সেমবার্গ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালু করতে আগ্রহী।তারা উভয়ে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে তাদের সদিচ্ছা প্রকাশ করেন।শেখ হাসিনা আর্থিক খাত ব্যবস্থাপনায় লুক্সেমবার্গের দক্ষতার প্রশংসা করেন এবং এর থেকে উপকৃত হওয়ার সুযোগ গ্রহনের আগ্রহ ব্যক্ত করেন।প্রধানমন্ত্রী বেটেল আনন্দের সাথে উল্লেখ করেন যে, তার দেশে এক হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি বসবাস করে এবং বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী সেখানে পড়াশোনা করছে।শেখ হাসিনা জেভিয়ার বেটেলকে জানান যে, বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২৬ সালে জাতিসংঘের এলডিসি পর্যায় থেকে উত্তীর্ণ হবে এবং উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে জিএসপি+ এর মতো বাণিজ্য সুবিধার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে তার সরকারের সহযোগিতা চান।লুক্সেমবার্গের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতি আন্তরিক সহায়তা দিতে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছেন।উভয় নেতা অভিন্ন উদ্বেগের বিষয় সংশ্লিষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়েও আলোচনা করেন। শেখ হাসিনা অবকাঠামো, পানি শোধন, নগর উন্নয়ন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে লুক্সেমবার্গের জলবায়ু-স্মার্ট বিনিয়োগকে স্বাগত জানান।জেভিয়ার বেটেল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার সুবিধামত সময়ে লুক্সেমবার্গ সফরের আমন্ত্রণ জানান। এ সময় শেখ হাসিনা চলমান আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি দেখার জন্য জেভিয়ার বেটেলকে যথাশিগিগির বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।শুরুতে দুই নেতা দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উপলক্ষে এবং সর্বত্র বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা বজায় রাখার জন্য একে অপরকে অভিনন্দন জানান। শেখ হাসিনা বাজেটে সহায়তা এবং ভ্যাকসিন দানের মাধ্যমে মহামারি প্রভাব কমাতে বাংলাদেশকে সহায়তা করার জন্য ‘টিম ইউরোপ’কে ধন্যবাদ জানান।