: শাফিনেওয়াজ শিপু :
বেশ কয়েক দিন ধরে মনটা অনেক খারাপ ছিলো।
কারণ, লন্ডনের যে জায়গাটি আমার সবচেয়ে প্রিয়, সেই জায়গাটিও শেষ পর্যন্ত রক্ষা পেলো না আগুনের দাবদাহ থেকে।
গত সপ্তাহের ১০ তারিখে ক্যামডেন লক মার্কেটে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতির এখন অনেক উন্নতি হয়েছে।
এই ক্যামডেন লক মার্কেট মূলত ক্যামডেন মার্কেটের ভেতরেই অবস্থিত।
প্রথমেই বলে নিচ্ছি এই মার্কেটের সন্ধান আমি কীভাবে পেয়েছি।
একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আপুর টপস দেখে জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় থেকে কেনা হয়েছে? তখন উত্তরে এই ক্যামডেন মার্কেটের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারলাম এবং জানার সাথে সাথে যাওয়ার আগ্রহ বেড়ে গিয়েছিলো আমার। আর অপেক্ষা করতে না পেরে যাত্রা শুরু করলাম ক্যামডেন মার্কেটটি দেখার উদ্দেশ্যে।
কী এমন আছে এই মার্কেটে, যার জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থীর সমাগম হয়।
তবে না গেলে তো এই রহস্য কোনদিনই উম্মোচন হতো না। টিউব, বাস বা ট্যাক্সি যে কোনো যানবাহনে করে আপনি সহজে ক্যামডেন টাউনে যেতে পারবেন।
টিউব স্টেশন থেকে বের হওয়ার পর অনেক মানুষের সমাগম দেখে বুঝতে আর বাকি রইলো না যে, এখান থেকেই ক্যামডেন মার্কেটের যাত্রা শুরু।
চারদিকে শুধু মানুষ আর মানুষ। সেই সাথে রয়েছে দেয়ালে রঙের খেলা।
এতো সুন্দর দেয়ালচিত্র ও কারুকাজ লন্ডনের কোথাও দেখিনি।
তবে ক্যামডেন মার্কেটটিকে অনেকে আবার ‘ক্যামডেন লক’ নামেও চেনে।
লন্ডনে দর্শনার্থীদের জন্য এই মার্কেটটি খুবই জনপ্রিয়। এখানে প্রায় সহস্রাধিক দোকান রয়েছে। ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মার্কেটে বর্তমানে প্রতি বছর ২৮ লক্ষ দর্শনার্থীদের সমাগম হয়। এতো বিচিত্র রকমের জিনিসপত্র আমার মনে হয় না আর কোনো মার্কেটে পাওয়া যাবে।
সপ্তাহে প্রতিদিনই এই মার্কেটটি খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে ৭টা পর্যন্ত, তবে শনিবার ও রবিবারে পর্যটকদের সমাগম একটু বেশি দেখা যায়। কী পাওয়া যায় না এই মার্কেটে, হস্তশিল্প থেকে শুরু করে পোশাক, জুয়েলারি, মিউজিক, ব্রিক-এ-ব্রাক ও বিভিন্ন রকমের ফুড পর্যন্তও পাওয়া যায়। এমনকি সেই সাথে ভিনটেজ পোশাক ও দ্রব্য পাওয়া যায়।
যদি খাবারের কথা বলতে চাই, তাহলে বলবো- এমন কোনো খাবার নেই যে এইখানে পাওয়া যায় না। যেমন: অ্যারাবিয়ান ফুড থেকে শুরু করে আফ্রিকান ফুড, ইতালিয়ান, চাইনিজ, মেক্সিকান, ইন্ডিয়ান, এমনকি থাই ফুডও পাওয়া যায়। তবে খুব যে একটা বেশি দাম, তাও নয়।
আশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে, আপনি এই মার্কেটে সব ধরনের ব্রান্ডের পণ্য পাবেন। মজার ব্যাপার হলো, সবগুলোই হচ্ছে রেপলিকা।
এটি মূলত লন্ডনের অন্যতম দর্শনীয় স্থান, যেখানে প্রতি সপ্তাহে ২ লাখ ৫০ হাজার দর্শনার্থী বেড়াতে আসেন। তবে এই মার্কেটের ছয়টি দিক আছে, যেটি অনেকেরই অজানা। ক্যামডেন লক মার্কেট, স্ট্যাবেলস্ মার্কেট, ক্যামডেন লক ভিলেজ, বাক স্ট্রিট মার্কেট, ইলেকট্রিক বলরুম এবং ইনভারনেস স্ট্রিট মার্কেট।
ক্যামডেন লক মার্কেট রিজেন্ট ক্যানেলের পাশে অবস্থিত, যেখানে অনেক স্টল ও শপ রয়েছে। এখানে বিক্রি করা হয় বইপত্র, পোশাক-পরিচ্ছদ, জুয়েলারি ও হস্ত শিল্প।
এবার জেনে নেই স্ট্যাবেলস মার্কেটে কী পাওয়া যায়? এটি মূলত অনেক দোকান ও স্টল নিয়ে গঠিত, যেখানে বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক, গৃহস্থালীর জিনিস, আসবাবপত্র, বিভিন্ন দেশের হস্তশিল্প, শো পিস ও ইউনিক দ্রব্য পাওয়া যায়। তবে স্বল্পমূল্যে অনেক জিনিসপত্র পাওয়া যায় এই মার্কেটে।
বাকস্ট্রিট মার্কেট হচ্ছে আউট ডোর মার্কেট, যেখানে বিভিন্ন দেশের পোশাক পাওয়া যায়। এমনকি এই ক্যামডেন মার্কেটে অনেক ইভেন্টেরও আয়োজন করা হয় শুধুমাত্র দর্শনার্থী বা পর্যটকদের জন্য এবং অনলাইনের মাধ্যমে আপনি ইভেন্টের তারিখ ও স্থান সম্পর্কেও জেনে নিতে পারবেন।
এছাড়াও আপনি গাইডের সাহায্য নিয়ে পুরো জায়গাটির ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবেন। এমনকি এক মার্কেট থেকে আরেক মার্কেটে যাওয়ার নির্দেশগুলো তীর চিহ্নের মাধ্যমে রাস্তার উপরে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র পর্যটকদের সুবিধার জন্য।
এক কথায় মুগ্ধ নয়নে পুরো মার্কেটের সৌন্দর্য উপভোগ করলাম সারাদিন জুড়ে। আর এই মার্কেটের ইতিহাস সম্বন্ধে জানতে পারলাম। তবে মজার কথা কী, লন্ডনে এখনও অনেক মানুষ আছে, যারা অনেক বছর ধরে বসবাস করছেন, কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত ক্যামডেন মার্কেটের স্বাদ নিতে পারেনি। হয়তো ব্যস্ততার কারণে আর না হয় অজানার কারণে।
এতটুকু বলতে পারবো, যদি আপনি এই জায়গাটিতে যান, তাহলে উপভোগ করতে পারবেন পুরো মার্কেটের সৌন্দর্য। যেখানে একবার কেনো, বার বার আসতে মন চাইবে।
ছবি কৃতজ্ঞতা: শারমিন জান্নাত ভুট্টো
লেখক: শিক্ষার্থী ও সাবেক গণমাধ্যমকর্মী
ই-মেইল: topu1212@yahoo.com