উদ্যোগটি নিরাপদ সড়ক ও ভ্রমণ নির্দেশিকা হিসাবে বাংলাদেশে এক উজ্জল উদাহরণ হবে-
আনোয়ারুল ইসলাম অভি:ব্রিটেন কিংবা উন্নত দেশগুলোর আদলে বাংলাদেশের রাস্তাগুলোর অবকাঠামোর উন্নয়ন,নিরাপদ সড়ক ও রোড ম্যাপের ধারনাকে পরিচিত করার লক্ষ্যে লন্ডনে অনুষ্ঠিত হলো ‘রোড ম্যাপ অব বিয়ানীবাজার পৌরসভা‘র প্রকাশনা অনুষ্ঠান। ২০ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭ টায় পূর্বলন্ডনের ব্লুমুন মিডিয়া সেন্টারে এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
আহমেদ মোশতাকের কোরান তেলাওয়াত দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। তিন পর্বে ভাগ করা অনুষ্ঠানটি ছিল প্রাণজ।প্রথম পর্বে ‘রোড ম্যাপ অব বিয়ানীবাজার পৌরসভা’র ধারণা এবং লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করা হয়।
রোপ ম্যাপের ধারণা-লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে স্বাগতিক বক্তব্যে সমন্ধয়ক সাংবাদিক-কলামিস্ট ফারুক যোশী বলেন- ‘ব্রিটেন এর আদলে বাংলাদেশের রাস্তা গুলোর উন্নয়নে যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের উদ্যোগে ‘‘রোড ম্যাপ অব বিয়ানীবাজার পৌরসভার” যাত্রা শুরু। আজ প্রকাশিত হলো এর প্রিন্ট ভার্সন। নিকট ভবিষ্যতে রোড ম্যাপটি ‘অ্যাপস’ এ চলে আসবে এবং ডিজিটালাইজেশনের অংশ হিসাবে এর একটি ওয়েবসাইট ও করা হচ্ছে। যা নিরাপদ সড়ক ও রাস্তার বিস্তারিত তথ্য জানতে বিরাট ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাইগ্রেন্ট ভয়েস ন্যাশনাল ওগেনাজাইনেশনের চেয়ারম্যান, সাবেক চীফ এক্সিকিউটিভ অব জয়েন্ট কাউন্সিল ফর দ্যা ওয়েলফেয়ার এন্ড ইমিগ্রেন্ট এর সাবেক প্রধান নির্বাহী হাবিব রহমান। ‘এটা নি:সন্দেহে বাংলাদেশের জন্য ভালো উদ্যোগ। এই কাজটি বাংলাদেশের মানচিত্রে একটা নাম রেখে দিল যে, বিয়ানীবাজার বলে একটা জায়গা আছে।এবং যারা বাইরে থেকে যাবে এবং আমরা যারা নিজেরা বিলেত থেকে যাবো তখন আমাদেরও রোপম্যাপটি পথ নির্দেশন করবে।এটাকে এ-টু-জেড করা হয়েছে কাগজের মাধ্যমে। কিন্তু এখন আ্যাপস এর যোগ। যারা এই কাজের উদ্যোগ নিয়েছেন, তাঁরা নিশ্চয় সেটাকে ডিজিটাল করার উদ্যোগ নিবেন।’ -প্রধান অথিতির বক্তব্যে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধান অতিথি হাবিব রহমান।
বিশেষ অতিথির আলোচনায় এমসি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের পদার্থ বিদ্যার সাবেক অধ্যাপক আব্দুল মালেক বলেন- ‘বিয়ানীবাজারের মানুষ হলেও পৌর সভার সীমারেখা আমার জানা ছিলনা।এই রোডম্যাপ বইটি আমাকেও সচেতন করেছে।
পৌর শহরের অনেক ছোট বড় খাল -নালা এমনকি রাস্তার অনেকঅংশ কালের গর্ভে বিলীন হয়েছে বলে আমরা বলে থাকি।আসলে সেটা ভুল বলা হয়। এটা কালের গর্ভে বিলিন হয়নি।বাস্তবতা হলো- দুই পাশের নির্মিত বড়বড় ভবনের ভিতরে এই গুলো ঢুকে গেছে। ভূমিদস্যুরা গিলে ফেলেছেন। যতাযত কর্তৃপক্ষের সেদিকে দ্রুত নজর দেয়া দরকার।
এই কনসেপটটি যদি আমাদের নতুন প্রজন্মের হাতে দিতে পারি,তাহলে শিক্ষার্থীরা সেটাকে শিক্ষণীয় বিষয় হিসাবে নিয়ে মেনে চলবে বলে আমার বিশ্বাস।পৌর শহরে প্রতিটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের হাতে বইটি পৌছে দেয়া দরকার।’ -বলেছেন বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও রোটারী ক্লাব বার্মিংহামের সাবেক সভাপতি আজাদ চৌধুরী।
শিক্ষাবিদ এনায়েত সরোয়ার বলেন- এই ডেপোলাপমেন্টটি নি:সন্দেহে মাইল ফলক।মানুষের হাতের নিচে এখন সারা পৃথিবী। ইউনেস্কো কিছদিন আগে বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই সংবাদটি আমরা লন্ডন থেকে যে সময় জেনেছি ঠিক সময়ে বিয়ানীবাজারবাসীও জেনেছে। ডিজিটাল ডেভলাপমেন্টে আমরা এগুচ্ছি সেখানে এই রোডম্যাপটিও যুক্ত হোক দ্রুত। সে প্রত্যাশা ও শুভ কামনা করছি।
ব্যারিষ্টার এম মাসুদ আহমদ বলেন- ‘উদ্যোগের সাথে যারা জড়িত আছেন, তাদের দূরপ্রসারী চিন্তা আছে বিধায় একাজে উদ্যোগি হয়েছেন। শুভ উদ্যোগটি সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে যাক সে প্রত্যাশা করছি।’
‘লক্ষ্য যদি ঠিক থাকে তাহলে কোন কাজ মাঝপথে আটকে থাকেনা।প্রবাসে থেকেও নিজ অঞ্চলের জন্য এই রকম মহতি কাজ মানুষকে আলোর পথ দেখাবে সন্দেহ নেই’- বলে মন্তব্য করেন অনুষ্ঠানের আরেক বিশেষ অতিথি বাংলাদেশে থেকে বেড়াতে আসা বিয়ানীবাজারের মুড়িয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী আব্দুল জলিল।
রোড ম্যাপ অব বিয়ানীবাজারের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রকাশক কয়েসুজ্জামান রুনু প্রজেক্টারের মাধ্যমে রোড ম্যাপটির বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন-অনেক বিষয়ে আমাদের বাধ্যবাধকতা ছিল।সরকারীভাবে যেসব তথ্য প্রকাশিত আছে, সেই তথ্যউপাত্বের আলোকে আমরা ম্যাপটির কাজ করেছি। সঙ্গত কারণেই অনেক বিষয়ে আমাদেরও কনসার্ণ রয়েছে।সংশ্লিষ্টরা ভবিষ্যতে রাস্তার নামকরণে কোন আপডেট করলে আমরা সেইসব তথ্য দ্রুত আপডেট করবো।
রোপ ম্যাপ এর ডেভলাপার সফিক মিয়া বলেন- আপনাদের মন্তব্য গুলো আমরা নোট করছি,যাতে করে নির্ভলভাবে আপডেট করা যায়। এবং যাতে রোডম্যাপটি প্রকৃতভাবেই সবার উপকারে আসে।
আবৃত্তিশিল্পী ও সংবাদ পাঠিকা মুনিরা পারভিনের উপস্থাপনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সেন্টারের সাধারন সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, সংগঠক আশেক আহমদ আসুক, মনজ্জির আলী ।
দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শকদের বিভিন্ন মন্তব্য-প্রস্তাবনা-প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন সংগঠক আব্দুল মতলিব, আব্দুল সফিক, আতিকুর রহমান,সাংবাদিক আব্দুল কাদির মুরাদ, এনাম উদ্দিন, এম মাসুদ আহমদ, আহমেদ মোশতাক সহ অনেকে।
রোডম্যাটি ডিজিটালাইজেশনের সময় আশপাশের উল্লেখযোগ্য স্থাপনা, দর্শনীয় স্থান এবং রাস্তার পাশ দিয়ে বয়ে চলা বড় বড় খাল ও নালার সরকারী রেকর্ড অনুযায়ী আয়তন ইত্যাদি ওয়েবসাইটে সংযোজন করার পরামর্শ এসময় তুলে ধরা হয়।
প্রসঙ্গত, ব্রিটেন প্রবাসী কয়েসুজ্জামান রুনু তার জন্মভুমি সিলেট বিয়ানীবাজার এর পৌর শহর নিয়ে ইউরোপ এর আদলে রোডম্যাপ বাংলাদেশে প্রসারের লক্ষ্যে কাজ করছেন। রোডম্যাপ এর এটি একটি পাইলট প্রকল্প। যা নিরাপদ সড়ক এবং ভ্রমণ গাইড হিসাবে কাজ করবে বলে সংশ্লিষ্টরা মতপ্রকাশ করেছেন। দূরপ্রবাসে থেকেও নিজের অঞ্চলের জন্য তার এই চ্যালেঞ্জিং কাজে সমন্ধয়ক হিসাবে আছেন আরেক নিবেদিত প্রাণ ব্রিটেনপ্রবাসী বিশিষ্ট সাংবাদিক-কলামিষ্ট ফারুক যোশী।