ব্রিটবাংলা ডেস্ক : মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধে উদ্দীপ্ত একটি প্রগতিশীল ও ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে আরো শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে প্রবাসীদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন লন্ডনে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুলা তাসনীম। ২৬ মার্চ, মঙ্গলবার স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের ৪৮তম বার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠানে তিনি এই আহ্বান জানান।
এ উপলক্ষে দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে ছিলো সকালে হাই কমিশনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পরারাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ এবং বঙ্গবন্ধু ও তাঁর শহীদ পরিবার ও মুক্তিযুদ্ধে নিহতদের আত্মার মাগফেরাম কামনা করে বিশেষ দোয়া।
বিকেলের আয়োজনে ছিলো কেনজিংটন টাউন হলে এক সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য মোঃ ইসরাফিল আলম ও মোঃ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর এসডিজি বিষয়ক মূখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ (সমন্বয় ও সংস্কার)-এর সচিব ড. মোঃ শামসুল আরেফিন, যুক্তরাজ্যে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সুলতান মাহমুদ শরীফ, উপমহাদেশের প্রখ্যাত কন্ঠশিল্পী রুনা লায়লা, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক এবং বিশিষ্ট অভিনেত্রী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শমী কায়সার।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় সবাইকে শরীক হয়ে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধে উদ্দীপ্ত, প্রগতিশীল ও ধর্ম নিরপেক্ষ একটি দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার আহবান জানান।
তিনি বলেন, ২৬ মার্চ বাঙালির পরাধীনতার শৃংখল ভাঙ্গার দিন। এদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এবং ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখের বেশী নারীর সম্ভ্রম হানির বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আজ বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।
যুক্তরাজ্যে প্রধানমন্ত্রীর সফল সফরের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের মধ্যে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ ও বেগবান হয়েছে। আগামী বছর যুক্তরাজ্যে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী ও ২০২১ সালে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপনে বাংলাদেশ হাই কমিশন, লন্ডন যুক্তরাজ্য সরকার এবং প্রবাসী বাংলাদেশীদের সাথে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশনের সাম্প্রতিক উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরে তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যে প্রবাসীদের কন্স্যুলার ও কল্যাণ সেবায় মার্চ মাসে হাই কমিশনে ২৪ ঘন্টার হেল্প লাইন চালু করা হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বরকে প্রবাসী দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দপ্তরে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়া হয়েছে এবং হাই কমিশনের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয় পত্র প্রদানের ব্যবস্থা করার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।
তিনি দেশের অভুতপূর্ব উন্নয়ন অর্জনে যুক্তরাজ্যে প্রবাসীদের অবদানের প্রশংসা করে বলেন, ২০১৮ সালে সারা বিশ্ব থেকে বাংলাদেশ ১৪.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স অর্জন করেছে যার মধ্যে যুক্তরাজ্যবাসী প্রবাসীরা ১.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রেরণ করেছেন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে আগত পার্বত্য নৃ-গোষ্ঠির শিল্পীরা অংশ নেন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে আগত পার্বত্য নৃ-গোষ্ঠির ও বাংলাদেশী-ব্রিটিশ কমিউনিটির শিল্পীরা অংশ নেন। তারা গান ও নাচের সমন্বয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরেন। সমগ্র অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশী-ব্রিটিশ কমিউনিটির প্রায় দেড় হাজার অতিথি দর্শক উপভোগ করেন।
দিনের কর্মসূচির অন্যতম আকর্ষণের মধ্যে আরো ছিলো বরফ নির্মিত জাতীয় স্মৃতিসৌধ। এ স্মৃতিসৌধ ঘীরে অতিথি-দর্শকরা অগণিত ছবি তুলেন। এছাড়া বাংলাদেশ বিমানের সৌজন্যে এক র্যাফেল ড্রতে ঢাকা-লন্ডন রুটের টিকেট দেয়া হয়।
অভ্যাগত অতিথিদের নিয়ে হাই কমিশনার স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের ৪৮তম বার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে একটি কেক কাটেন। এরপর আমন্ত্রিত অতিথিদের আপ্যায়নের মাধ্যমে বর্নীল অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি হয়।