লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের বার্ষিক সাধারণ সভা সম্পন্ন : সংলাপে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নবানে বিদ্ধ হলেন হাইকমিশনার

ডায়ালগ অনুষ্ঠানে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারীর সঙ্গে হাইকমিশনার (মাঝ)

ব্রিটবাংলা ডেস্ক :  যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের বার্ষিক সাধারণ সভা সম্পন্ন হয়েছে মঙ্গলবার। সাধারণ সভা শেষে বিলেতে বাংলা মিডিয়ার সংবাদকর্মীদের সাথে সরাসরি সংলাপে বসে প্রশ্নবানে বিদ্ধ হয়েছেন লন্ডনে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম। 

নৈশভোজ পূর্ব সংলাপে হাইকমিশনার প্রেসক্লাবের প্রশংসা করে বলেছেন, নানা পর্যায়ের ব্যক্তিত্বপ্রতিষ্ঠানকে কথাবলার সুযোগ করে দেয়ার পাশাপাশি জবাবদিহিতার মুখোমুখি করার মাধ্যমে একটি প্রভাবশালীমর্যাদাশীল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব। 

অনুষ্ঠানে হাইকমিশনার লন্ডন এবং বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকে থেকে আসা লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবসদস্যদের নানা প্রশ্নের জবাব দেনঅনুষ্ঠানে তিনি মিশনের কনস্যুলার সার্ভিসের মান বাড়াতে তাঁর সচেষ্ট থাকার কথা উল্লেখ করে মুজিব শতবর্ষ বিশেষ সেবা সপ্তাহপালন করার উদ্যোগের কথা ঘোষণা করে বলেন, লন্ডন মিশন থেকে যেসব সেবানিয়মিত দেয়া হয় এই বিশেষ সপ্তাহে সেগুলো স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্রুত দেয়া হবেএছাড়া ই-পাসপোর্ট ইস্যুর ক্ষেত্রে যাতে লন্ডন মিশন প্রথম একটি হয় সেটি নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে বলে জানান হাইকমিশনার।  

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি লন্ডনে বাংলাদেশ সংস্কৃতি কেন্দ্র হওয়া উচিত মন্তব্য করে বলেন, আগামী বছরের ১৭ মার্চের মধ্যে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের লক্ষ্য নিয়ে আপাতত বঙ্গবন্ধু সেন্টার প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে

এর আগে ব্রিটেনে বাংলা মিডিয়ার প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের বার্ষিক সাধারণ সভা ২৮ জানুয়ারী, মঙ্গলবার বেশ জমজমাটভাবে অনুষ্ঠিত হয়এতে লন্ডন ছাড়াও মিডল্যান্ডসনর্থ ইংল্যান্ডসহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুলসংখ্যক ক্লাব সদস্য উপস্থিত হয়ে প্রাণবন্ত প্রশ্ন-বিতর্কে অংশ নেনক্লাব সভাপতি মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বেসাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ জুবায়েরের পরিচালনায় এতে আর্থিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করে কোষাধ্যক্ষমাসুমএরপর নেতৃবৃন্দ উপস্থিত সদস্যদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন

বক্তব্য রাখছেন ক্লাব প্রেসিডেন্ট এমদাদুল হক চৌধুরী

পূর্ব লন্ডনের লন্ডন এন্টারপ্রাইজ একাডেমি হলে পরের পর্বে অনুষ্ঠিত ‘ডায়লগ উইথ হাইকমিশনারঅনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত প্রারম্ভিক বক্তব্যে সাইদা মুনা তাসনিম সামগ্রিকভাবে সমাজকমিউনিটির কল্যাণে, প্রেসক্লাবের ভূমিকার প্রশংসা করেন।  

বক্তব্য রাখছেন ক্লাব সেক্রেটারী মুহাম্মদ জুবায়ের

ক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের সঞ্চালনায় বাড়তি বক্তৃতাবিহীনডায়লগঅনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার আশেকুন্নবি চৌধুরী, তিনি সংবাদ প্রকাশে সহযোগিতার জন্য সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানানঅনুষ্ঠানে হাইকমিশনারের পরিচিতি পাঠ করেন ক্লাবের ইসি মেম্বার নাজমুল হোসাইনস্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্লাব প্রেসেডেন্ট এবং ধন্যবাদ বক্তব্য রাখেন ট্রেজারার।  

বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে হাইকমিশনার হাইকমিশনের স্টাফ সংখ্যা থেকে শুরু করে সার্ভিসের মান, নতুন প্রজন্মের সাথে যোগসূত্র, মুজিববর্ষ, লন্ডনে বাংলাসংস্কৃতি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, বেক্সিক-পরবর্তী যুক্তরাজ্যের শ্রমবাজারে বাংলাদেশের সুযোগ গ্রহণসহ নানাইস্যুতে ক্লাব সদস্যদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন।  

ট্রেজারের রিপোর্ট পেশ করছেন আ স ম মাসুম

এছাড়া তিনি কিছুকিছু ক্ষেত্রে হাইকমিশনের পরিবর্তনউন্নয়ন নিয়েও কথা বলেনবিশেষ করে ২৪ ঘন্টার একটি বিশেষ ফোন সার্ভিস চালু এবং দিনে প্রায় ৩শটি ইমেলের জবাব দেওয়ার কথাও উল্লেখ করেনতাঁর কাছে প্রশ্ন ছিলো প্রবাসী ভোটাধিকার, বিমানসোনালী ব্যাংকের সমস্যা, বিনা খরচে প্রবাসীদের মরদেহ দেশে পাঠানো, একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, হাইকমিশনের দাওয়াত নিয়ে নানা ইস্যু, ই-পাসপোর্ট স্মার্টকার্ড কার্যকর ইত্যাদি নিয়ে।  প্রায় দুঘন্টাব্যাপী প্রশ্নোত্তর পর্বে হাইকমিশনার বলেন, ১৭ মার্চ ২০২০ থেকে মুজিববর্ষ শুরু হচ্ছে এবং আগামী বছরের ১৭ মার্চ পর্যন্ত জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিক উপলক্ষে বাংলাদেশ হাইকমিশন লন্ডনসহ যুক্তরাজ্যে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক শহরগুলোতে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেএরমধ্যে রয়েছেমুজিবশতবর্ষ বিশেষ সেবাসপ্তাহ”। এসময় নতুন পাসপোর্ট ইস্যুনবায়ন, বাংলাদেশি-ব্রিটিশদের এনভিআর ইস্যু, পাওয়ার অব এটর্নি দলিল সম্পাদন, জন্ম-নিবন্ধন এবং বাংলাদেশে জমিজমা সংক্রান্ত জটিলতাসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে দ্রুতসহযোগিতা প্রদানসম্ভাব্য ক্ষেত্রে কিছু কিছু সেবা তাৎক্ষণিক প্রদান করা হবেহাইকমিশনার জানান, বিগত এক বছরে লন্ডন মিশনে সব ধরনের সেবা প্রদানের হার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছেযেমন পাসপোর্ট ইস্যুর হার বেড়েছে ৩২%, ভিসা ১২%, এনভিআর ৮%, বিভিন্ন ডকুমেন্ট সত্যায়নের হার ২২% ও জন্ম-নিবন্ধন ৬%। এসময়ে মোট ৫৬,১৩৬ জন ব্যক্তিকে বিভিন্ন ধরনের সেবা দেয়া হয়েছে, যা ২০১৮ সালের তুলনায় ১০% বেশি

তিনি আরো জানান, ই-মেইলেও প্রতিদিন অনেকমানুষ হাইকমিশন থেকে তথ্য সেবা নিচ্ছেনএছাড়া কনস্যুলার শাখায় ডেস্কটপ কম্পিউটার, ফটোসার্ভিস, ফটোকপি সার্ভিসইলেক্ট্রনিক টোকেন সার্ভিস চালু করা হয়েছেযার ফলে সেবা গ্রহিতারা আগের চেয়ে অনেক সহজে কনস্যুলার সেবা নিতে পারছেনবাংলাদেশি-ব্রিটিশদের দোর গোড়ায় এসব সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য লন্ডনের বাইরে বিভিন্ন শহরে এবং আয়ারল্যান্ডেও কনস্যুলার সেবার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।  

প্রবাসীর ভূমি দখল বিষয়ে তারা আলাদা ডেস্ক চালু করেছেনযে কোনো অভিযোগ তারা ডিসি বা ওসির কাছে পৌছে দেনহাইকমিশনার বলেন, সেবার মান বাড়ানোর পাশাপাশি হাইকমিশন গত বছর জাতীয় দিবসগুলো পালনসহ বিভিন্ন ধরনের ৩০টিরও বেশি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।  

অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ হাই কমিশনেরমিনিস্টার (প্রেস) আশিকুন নবী ব্রিটিশ-বাংলাদেশিক্লাবে নেতৃবুন্দসাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান।  

ইসি সদস্যরা

বার্ষিক সাধারণ সভা :

এদিকে বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ ব্যতিক্রমী নানা কর্মসূচীসহ গত ১২ মাসে প্রায় ১৩টি অনুষ্ঠানের কথা তুলে ধরেনআগামী দিনগুলোতে ক্লাবের নিজস্ব একটি প্রোপার্টি ক্রয় এবং অন্যান্য রুটিন কর্মসূচী পালনে সকলের সহযোগিতা কামনা করা হয়ক্লাব সভাপতি বলেন, আমরা প্রেসক্লাবের যে মর্যাদা অক্ষুণ রাখারঐক্যের কথা বলি সেটি রক্ষা করার ক্ষেত্রে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে সোচ্চার ছিলামএকারণে নিয়মিত কর্মসূচীর বাইরেও কিছু চ্যালেঞ্জ মোকবেলাও করতে হয়েছে আমাদেরতবে সবক্ষেত্রেই সাধারণ সদস্যরা ছিলেন সহযোগীপ্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বর্তমান কমিটি দায়িত্ব লাভের পর পরই আমাদের ভাষার মাস ফেব্রয়ারীতে বেশ জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনতথ্যনির্ভর উপস্থাপনার মধ্যদিয়ে উদযাপিত হয় একুশের অনুষ্ঠান। ১২ মাসে অন্তত ১৩টি উল্লেখযোগ্য কর্মসূচীর আয়োজন ছিলো এবারএরমধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বাংলাদেশের তিনজনমন্ত্রীর সাথে খোলামেলা আয়োজন আর কোয়েশ্চনটাইমক্লাবের কার্যক্রমে আলাদা মাত্রা যোগ করেছেকোনো ব্রিটিশ হাইকমিশনার কিংবা বাংলাদেশের হাইকমিশনারের প্রথমবারের মতো ক্লাবে আসাসাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার বিষয়টিও ছিলো আলাদা গুরুত্বেরসাংবাদিকতারএথিক্স এন্ড স্ট্যান্ডার্ডনিয়ে বিশেষ আলোচনা, স্বাধীনতা দিবসে শহীদ পিতাকে ফিরে পাওয়ার গল্পএবং বিজয় দিবসেশহীদ পিতার গল্পশীর্ষক আলোচনাও প্রেসক্লাবের বিশেষত্বের জানান দিয়েছেএছাড়াও বরাবরের মতো পিকনিক, বৈশাখী আড্ডার পাশাপাশি প্রথমবারের মতো ছিলো ইনডোর গেমসের আয়োজনএছাড়া ক্লাবের নতুন অফিস বছর জুড়ে চালু রাখার নতুন দায়িত্ব যেমন আমরা পালন করেছি, তেমনি ক্লাবের বড় স্বপ্ন নিজস্ব প্রোপার্টি ক্রয়ের বিষয়টিও বিবেচনায় আছে।  

সেক্রেটারিবছরের এজিএম-এ যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশী সদস্যের উপস্থিতিতে আনন্দ প্রকাশ করে বলেন, সাধারণ সদস্যরাই ক্লাবের প্রাণ এবং তাদের সমর্থন আমাদের উৎসাহ যোগায়ক্লাব ট্রেজারার বলেন, আমরা নতুন লাইফ মেম্বারের মাধ্যমে আরো ২৫/৩০ হাজার পাউন্ড কালেকশনের চেষ্টা করছিএর মাধ্যমে এই বছরের মধ্যে আমরা প্রোপার্টি ক্রয়ের ব্যবস্থা করতে চাই।  

অনুষ্ঠানে প্রেসক্লাবের লাইফ মেম্বার যথাক্রমে বিসিএ, চেম্বার, বিবিসিএ, বাংলাদেশ সেন্টারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দশীর্ষ ব্যবসায়ীরা অংশ নেন

Advertisement