ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: তুরস্ক-সমর্থিত হামলা থেকে সিরীয় সীমান্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর রক্ষায় লড়াই করে যাচ্ছেন কুর্দিশ যোদ্ধারা। মার্কিন সেনারা পিছু হটে যাওয়ায় রুশ বাহিনী তাদের সেনাদের নতুন এলাকায় ছড়িয়ে দিয়ে সেই স্থান দখল করেছে।
তুরস্কের অগ্রযাত্রা রুখতে আরও সেনা পাঠিয়েছে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী। কিন্তু তাদের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র মস্কো দুপক্ষের মধ্যে সংঘাত এড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।-খবর এএফপির
মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর শুরু হওয়া তুরস্কের অভিযান বন্ধ করতে ন্যাটো মিত্রের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ওয়াশিংটন। কিন্তু তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান বলেন, আমাদের লক্ষ্য হাসিলের আগ পর্যন্ত অভিযান চলবে।
২০১২ সালে প্রত্যাহার করে নেয়ার পর কুর্দিশ নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে সিরীয় বাহিনীর নতুন করে সেনা মোতায়েন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
রোববার দামেস্কো ও কুর্দিদের মধ্যে একটি চুক্তি ঘোষণার পর সেখানে সেনা পাঠাল আসাদ বাহিনী। মঙ্গলবার সংঘাতকবলিত উত্তরাঞ্চলীয় মানবিজ শহরে সিরিয়া পতাকা উত্তোলন করেছে তারা।
সোমবার তুরস্ক সীমান্তের কাছের শহরে আসাদ বাহিনী ঢুকে পড়েছে। তুর্কি সমর্থিত যোদ্ধারা পশ্চিমে জড়ো হয়েছে পরবর্তী পরিকল্পিত হামলার জন্য।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বিভিন্ন শহরে তুর্কি বাহিনী ও তাদের সিরীয় ছায়া বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ছেন সিরীয় ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেসের(এসডিএফ) কুর্দিশ যোদ্ধারা।
মানবিজের পূর্বে সীমান্ত শহর রাস আল-আইনে এক বেপরোয়া প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন তারা। ট্রেনচ, বার্মস ও টানেল ব্যবহার করে লড়ে যাচ্ছেন কুর্দিরা।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত এএফপির এক প্রতিবেদক বলেন, মঙ্গলবার শহরজুড়ে ব্যাপক সংঘাত হয়েছে। যদিও আংকারা বারবার দাবি করে আসছে, শহরটি তাদের নিয়ন্ত্রণে।
ব্রিটেনভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানায়, রাস আল-আইনের কাছে তুর্কি ও তাদের ছায়া বাহিনীর বিরুদ্ধে বড় ধরনের পাল্টা হামলা চালিয়েছেন কুর্দিশ যোদ্ধারা।
তুর্কি-সমর্থিত বাহিনীর ভারী গোলাবর্ষণে অগ্রযাত্রা সহজতর হয়েছে বলে দাবি করেছেন তুরস্কসংশ্লিষ্ট এক সিরীয় যোদ্ধা।
গত ৯ অক্টোবর লড়াই শুরু হওয়ার পর সীমান্তের ১০০ কিলোমিটারের বেশি অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে তুর্কি সমর্থিত বাহিনী। কিন্তু রাস আল-আইনে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পেরেছেন কুর্দিশরা।
গত সপ্তাহে সীমান্ত থেকে মার্কিন বাহিনীকে প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এটিকে দীর্ঘ পরিকল্পিত তুর্কিশ অভিযানের প্রতি সবুজ-সংকেত হিসেবেই দেখছেন অনেকে।
এ ক্ষেত্রে ঘরের মাঠে রাজনৈতিক সংকটে পড়তে হয়েছে ট্রাম্পকে। সিরীয় অঞ্চল থেকে সীমান্ত পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার ভূখণ্ডে বাফার জোন বা নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছেন এরদোগান।
এসডিএফকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে দেখছে আংকারা। তুরস্কের কুর্দিশ বিদ্রোহীদের সঙ্গে তাদের যোগসাজশ রয়েছে। কাজেই সিরিয়ার এই কুর্দিশ যোদ্ধাদের কোণঠাসা করতে চাচ্ছেন এরদোগান।
এ ছাড়া বর্তমানে তুরস্কে থাকা ৩৬ লাখ সিরীয় শরণার্থীকে পুনর্বাসন করতে চাচ্ছেন তিনি।
মঙ্গলবার এরদোগান বলেন, আল্লাহর ইচ্ছায়, মানবিজ থেকে ইরাকের সঙ্গে আমাদের সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলকে শিগগিরই নিরাপদ করতে পারব।
তুরস্কের অভিযানে এ পর্যন্ত কয়েক ডজন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। তাদের অধিকাংশই কুর্দিশ অঞ্চলের। এ ছাড়া অন্তত এক লাখ ৬০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
তুরস্কের অভিযান নিয়ে আলোচনা করতে বুধবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা বাহিনীর বৈঠক বসবে। আর সাহায্য সংস্থাগুলো সিরিয়ার আট বছরের যুদ্ধের এই পর্যায়ে এসে নতুন করে ব্যাপক মানবিক বিপর্যয়ের হুশিয়ারি দিয়েছেন।
এসব সংস্থা সংঘাতকবলিত এলাকা থেকে তাদের আন্তর্জাতিক কর্মীদের সরিয়ে নিয়েছে। সহায়তার কাজও বন্ধ রেখেছে। কিন্তু জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
এদিকে পুনর্নির্বাচনের জন্য প্রচারে মশগুল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বর্তমানে অভিশংসনের মুখোমুখি। সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনাদের প্রত্যাহার করে নিয়ে আসার ঘোষণা দিতে উদগ্রিব হয়ে আছেন তিনি।
উত্তর সিরিয়া থেকে হাজার খানেক সেনা প্রত্যাহার করে নেবে যুক্তরাষ্ট্র। আর বাকি দেড়শর মতো সেনাকে জর্ডান ও ইরাক সীমান্তে আল-তানফ ঘাঁটিতে রেখে দেবে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, মানবিজের পার্শ্ববর্তী ঘাঁটি থেকে মার্কিন সেনারা সরে গেছেন। সাবেক আইএস যোদ্ধাদের এই শক্তদুর্গ এখন সিরীয় বাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে।
সেনা প্রত্যাহারের কথা নিশ্চিত করে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট বলছে, তারা এখন মানবিজের বাইরে।
২০১৬ সালে আইএসের কাছ থেকে নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর কুর্দিশ যোদ্ধাদের সহায়তা করতে সেখানে মার্কিন সেনারা অবস্থান করছিল।
মস্কো জানিয়েছে, আংকারার সহযোগিতায় তুর্কিশ বাহিনী ও সিরীয় বাহিনীকে আলাদা করে দেয়া একটি অঞ্চলে নিয়মিত টহল দিচ্ছে রাশিয়ার সামরিক পুলিশ।
সিরিয়ায় রাশিয়ার বিশেষ দূত আলেক্সান্ডার লাভরেনটিভ বলেন, তুর্কি ও সিরীয় বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ এড়াতে দুপক্ষ পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।
তার বরাত দিয়ে রুশ সংবাদ সংস্থাগুলো জানায়, সংঘর্ষ হলে সোটি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য হবে।
মঙ্গলবার মানবিজে সন্ত্রাসীদের গোলায় দুই তুর্কি সেনা নিহত হয়েছে বলে দেশটি জানিয়েছে। অপারেশন পিস স্প্রিং শুরু হওয়ার পর এই নিয়ে তাদের ছয় সেনা নিহত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রকে ছেড়ে কুর্দিরা এখন দামেস্কোর শরণাপন্ন হয়েছে। আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই মার্কিন মিত্রের ১১ হাজার যোদ্ধাকে প্রাণ দিতে হয়েছে।
বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে কুর্দি বাহিনীর হাতে আটক কয়েক হাজার আইএস যোদ্ধা পালিয়ে যেতে পারে বলে ইউরোপীয় সরকারগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
হুশিয়ারি দিয়ে তারা বলছে, এতে নতুন করে আইএস বিদ্রোহ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। এ ছাড়া জিহাদিরা ইউরোপে ফিরে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা বাড়ছে।
তুরস্কের অগ্রযাত্রাকে রুখে দিতে এসডিএফ তাদের যোদ্ধাদের জড়ো করছে। কাজেই আইএস বন্দিদের পাহারা দেয়ার মতো অতিরিক্ত যোদ্ধা তাদের নেই বলে জানিয়েছে।
কুর্দিরা জানায়, শত শত আইএস স্বজনরা পালিয়ে গেছেন। যদিও ট্রাম্প আভাস দিয়েছেন, সুবিধা পেতে ইচ্ছাকৃতভাবে আইএস যোদ্ধাদের ছেড়ে দিচ্ছে এসডিএফ।