ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: রাজধানীতে ‘ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স’ এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো ‘শিক্ষা সুরক্ষা ও শিশুর প্রতি শারীরিক-মানসিক শাস্তি নিরসনে করনীয়’ শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠক। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর কাওরান বাজারে দৈনিক ইত্তেফাক ভবনের কনফারেন্স রুমে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেনের সভাপতিত্বে এবং সাংবাদিক জামাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও বিশেষ অতিথি ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারোয়ার।
অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘শিশুদের কোনোভাবেই নির্যাতন করা যাবে না। আমরা যারা দেশের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে আছি, তাদের মধ্যে এই চেতনাবোধ থাকা প্রয়োজন। আর শিশু নির্যাতনজনিত সমস্যা সমাধানের জন্য দেশের চলমান পরিস্থিতিতে একটি বিশাল পরিবর্তন আনতে হবে। সেই সঙ্গে পরিবর্তন আনতে হবে সমাজের সর্বস্তরের জনগণের মানসিকতায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরই শিশু নির্যাতন বন্ধে কঠিন সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। তিনি আমাদের যে নির্দেশনা দিয়েছেন, সেই অনুযায়ী আমরা সামনে এগিয়ে যাচ্ছি।’ এ সময় শিশুদের শিক্ষা সুরক্ষা ও নির্যাতন বন্ধে বৈঠকে জানানো সব প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন দিয়ে তিনি বলেন, ‘শিশুদের শিক্ষা সুরক্ষা ও নির্যাতন বন্ধে বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত ও প্রস্তাবগুলো আমাদের লিখিতভাবে দিলে এগুলো বাস্তবায়নে আমাদের উপরও একটা চাপ থাকবে।’
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জুয়েনা আজিজ বলেন, ‘কেউ শিশু নির্যাতন করলে তাকে ক্রিমিনাল অ্যাক্টের অধীনে শাস্তির আওতায় আনা হবে। সমাজের এ সব সমস্যা নিরসনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সবাইকে বলতে পারি, সচেতন করতে পারি। তবে যারা এরপরও এ ধরণের কাজ অব্যাহত রাখবে তাদের ফৌজদারি আইনের অধীনে কঠোর শাস্তি হওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি।’
এ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদেরকে শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাত্তর টেলিভিশনের সাংবাদিক মিথিলা ফারজানা বলেন, ‘আমাদের আগে দেখতে হবে তিনি কি উদ্দেশ্য নিয়ে শাস্তি দিচ্ছেন। আর একজন শিক্ষকের শাস্তি দেওয়ার পেছনের মূল উদ্দেশ্য বিচার করার উপায়ই বা কি!’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের শাস্তি দেওয়াকে নিজেদের অধিকার মনে করেন। এই মনোভাব থেকে বের হয়ে না এলে এই অবস্থার অবসান সম্ভব হবে না। আর সম্পূর্ণ শাস্তিহীন সমাজ কখনওই হতে পারে না। কিংবা সেই সমাজ থেকে কখনওই ভালো কিছু বের হয়ে আসবে না। তাই আমাদের উচিৎ শিশুদের শারীরিক কিংবা মানসিক নির্যাতন না করে শাস্তি দেওয়ার ভিন্ন কোনও প্রক্রিয়া বের করা।’
বৈঠকে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন সেভ দ্যা চিল্ড্রেন-এর পরিচালক একরামুল কবীর, সংগঠনের শিশু অধিকার প্রশাসন ও শিশু সুরক্ষা বিভাগের প্রধান আবদুল্লাহ আল মামুন, শিশু গবেষক আহনাফ আনম অর্ক, অধ্যাপক কাজী ফারুক আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মোহিত কামাল, আইনজীবী আমিনুল হক প্রমুখ।
বৈঠকে বক্তারা বলেন, এখন শিশুদের শুধু শারীরিকভাবেই নির্যাতন করা হয় না, তাদের অনেক রকম মানসিক নির্যাতনও করা হয়। কয়েকটি গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য উল্লেখ করে তারা বলেন, পরিবার থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত প্রায় সব জায়গায় শিশুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, দেশে ১ থেকে ১৪ বছরের প্রায় ৮৮ শতাংশ শিশু বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার।অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬৭ শতাংশ অভিভাবক মনে করেন, ভুল করলে শিশুদের শাস্তি দেওয়া উচিৎ।
এ সময় বক্তারা শিশু নির্যাতন বন্ধে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব করেন। পাশাপাশি শিশু নির্যাতন বন্ধে দেশের প্রচলিত আইনের সংশোধন ও এর যথাযথ প্রয়োগের জন্য আহ্বান করা হয়।
বৈঠক শেষে সভাপতির বক্তব্যে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান দৈনিক ইত্তেফাক ও পাক্ষিক অনন্যার সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। সমাপনী বক্তব্যে তিনি সকলের সম্মিলিত চেষ্টায় দেশে শিশু নির্যাতন বন্ধের আহ্বান জানান।