বায়ু দূষণের পর এখন মারাত্মক শব্দ দূষণেরও শহর ঢাকা। রাজধানীর ‘নো হর্ন জোন’ বা নিরব এলাকাগুলোতেই শব্দের তীব্রতা সহনীয় মাত্রার দ্বিগুণের বেশি। ভয়াবহ পরিস্থতি অন্যান্য এলাকায়ও। সংকট সমাধানে পরিবেশ পুলিশ নিয়োগ এবং সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করার তাগিদ পরিবেশবাদীদের।সড়কজুড়ে প্রতিনিয়তই নিয়ন্ত্রণহীন এমন শব্দসন্ত্রাস।পরিবেশ অধিপ্তরের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, আগারগাঁও, সচিবালয়সহ ঢাকার ১০টি নিরব এলাকায় শব্দের তীব্রতা পরিবেশ অধিদপ্তরের মানমাত্রার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। যেখানে ৫০ ডেসিবল শব্দের মাত্রা থাকার কথা সেখানে পাওয়া গেছে একশ’র বেশি।বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন বলছে, মানুষের শ্রবণসীমা বা সহনশীল মাত্রা সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ ডেসিবল মাত্রার শব্দ। আর ৮০ ডেসিবলের ঊর্ধ্বের শব্দ মারাত্মক বিপদজনক। কিন্তু রাজধানীর আবসিক, বাণিজ্য কিংবা মিশ্র এলাকাতেও শব্দের এই তীব্রতা মিলেছে ভয়াবহ মাত্রায়।
শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্পের জরিপ টিম লিডার অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান বলেন, “নিরব এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা, আবাসিক এলাকা কিংবা মিশ্র এলাকায় নির্ধারিত মান মাত্রার চেয়ে বেশি শব্দ উৎপন্ন হচ্ছে। তুলনামূলকভাবে জেলা শহরগুলোতে কিছুটা শব্দ দূষণ কম আছে। তবে সেটিও পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক নির্ধারিত মান মাত্রার চেয়ে বেশি।যানবাহনে উচ্চ মাত্রায় হর্ন ব্যবহারকে শব্দ দূষণের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় পরিবেশ অধিদপ্তরের জরিপে। দূষণ ছড়াচ্ছে শিল্প-কারখানা ও ওয়ার্কশ থেকে তৈরি শব্দ।হর্ন ব্যবহারে বিআরটিএ’র সুনির্দিষ্ট গাইড লাইনসহ চালকদের প্রশিক্ষণ জরুরি। দরকার বিদেশ থেকে ক্ষতিকর হর্ন আমদানি ও স্থানীয় উৎপাদন বন্ধ করা।ঢাকা মহানগর অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আলমগীর হোসেন বলেন, “একটা সিগন্যালে হয়তো সামনে দুই-তিনটা গাড়ি, পেছনে অ্যাম্বুলেন্সটা আছে। ভেতরে রোগীও নেই কিন্তু সে উচ্চ স্বরে বাজাচ্ছে। তাতে পাশের লোকগুলো কষ্ট পাচ্ছে।বিরক্তিকর শব্দ দূষণ থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য চেয়ে ট্রিপল নাইনে নিয়মিত ফোন দিয়ে পুলিশের সাহায্যও চান অনেক ভুক্তভোগী।তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রুবাইয়াত জামান বলেন, “মেট্রোপলিটন এলাকায় বিরক্তিকর শব্দের জন্য অনেকেই ফোন করেন। এ সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে পরিবেশ পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।রাজনৈতিক কিংবা ধর্মীয় সভা সমাবেশে অনুমোদিত মাত্রার বেশি শব্দ যাতে তৈরি না হয় সে ব্যাপারে কঠোর হওয়ার তাগিদ পরিবেশবিদদের।অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান বলেন, “যাতে অনুমোদিত মাত্রায় এবং অনুমোদিত সময়ে যদি অনুষ্ঠান পরিচালনা করা হয় তবে শব্দ দূষণ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি ইউএনইপি’র ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বে শব্দ দূষণের শীর্ষ শহর ঢাকা।