ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: যুক্তরাষ্ট্রে স্বীকৃতি পেলো একটি নতুন ধর্ম। ‘শয়তানের মন্দির’ খ্রিস্টানদের গির্জার মতোই কর-ছাড় পেলো। যুক্তরাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ রাজস্ব পরিষেবা বিভাগ এই কর ছাড় দিয়েছে ‘শয়তানের মন্দির’কে। ফলে ‘শয়তানের মন্দির’ এখন একটি বৈধ ধর্মের স্বীকৃতি পেলো।
ওই মন্দিরের সদস্যরা গত প্রায় ২০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের অস্তিত্বের জানান দিয়ে চলেছেন। তারা তাদের রাজনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে গণমাধ্যমে সংবাদের শিরোনাম হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের স্বীকৃতির পর এবং সম্প্রতি তাদেরকে নিয়ে তৈরি করা “Hail Satan?” নামের একটি ডকুমেন্টারি ফিল্মের মধ্যদিয়ে তারা নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে আসলো।
শয়তানের মন্দিরের সদরদপ্তর একটি সুদর্শন, পুরাতন, নিউইংল্যান্ড ধাঁচের বাড়ি। এটি মৃতদেহ আন্তেষ্টিক্রিয়ার আয়োজনকারী একটি বাড়িও বটে। ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের সালেম এর কেন্দ্রে অবস্থিত এই শয়তানের মন্দিরের সদরদপ্তর।
শয়তানের মন্দিরের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং মুখপাত্র লুসিয়ান গ্রিভস বলেন, ‘এটি আমাদের প্রাথমিক অনুষ্ঠানের কক্ষ। আমরা, শয়তানের মন্দিরের সদস্যরা সপ্তাহে একবার এখানে জড়ো হই।’
মন্দিরটিতে রয়েছে শয়তানের ধর্ম সম্পর্কিত একটি আর্ট গ্যালারি। আছে একটি লাইব্রেরি, যাতে রয়েছে শয়তানি সাহিত্য এবং ইতিহাস সম্পর্কিত বই।
মন্দিরটির প্রধান আকর্ষণ একটি ৮ ফুট ৬ ইঞ্চি ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য। এর মাথাটি অনেকটা ছাগলের মতো। পিঠে আছে ইগল পাখির মতো ডানা। এর নাম ‘ব্যাফোমেট’।
লুসিয়ান গ্রিভসকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো শয়তানের মন্দিরের সদস্যরা কি এই মুর্তিটিকে পবিত্র মনে করে? উত্তরে তিনি বলেন, ‘আধ্যাত্মিক’ বা ‘পবিত্র’ এই শব্দগুলো আমাদের জন্য প্রযোজ্য নয়। আমরা কোনো অতিপ্রাকৃতিক বিশ্বাস লালন করি না। আমরা মূলত একটি নিরীশ্বরবাদী ধর্ম। আমাদের কোনো ঈশ্বর নেই। আমরা কোনো কিছুর অতিপ্রাকৃতিক ব্যাখ্যা দিই না বা সেসবকে গ্রহণও করি না।
গ্রিভস ব্যাখ্যা করে বলেন, আমরা পুরাণ ও সাহিত্যে যে শয়তানের কথা বলা হয় সেটাকে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে একটি বিদ্রোহী প্রতীক বা চরিত্র হিসেবে বিবেচনা করি। আর এ কারণেই আমরা শয়তানের উপাসনা করি না।
‘বরং এই উপাসনার ধারণাটাই, যারা নিজেদেরকে শয়তানবাদের সদস্য মনে করে, তাদের জন্য অপমানজনক একটা বিষয়। কারণ উপাসনা মানেই হচ্ছে অন্যের দাসত্ব। আর আমাদের শয়তানবাদের মূল কথাই হলো ব্যাক্তিগত সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং ইচ্ছার স্বাধীনতা।’
“Hail Satan?” একটি ডকুমেন্টারি ফিল্মে শয়তানের মন্দির সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে বিশ্ববাসীর সামনে।
ডকুমেন্টারি ফিল্মটির নির্মাতা পেনি লেইন বলেন, ‘শয়তানের মন্দিরের সদস্যরা যেসব গণতামাশা, সামাজিক প্রতিবাদ ও আইনী তৎপরতা চালিয়ে আসছে তার বেশিরভাগই ছিলো গির্জা ও রাষ্ট্রকে তথা ধর্ম ও রাষ্ট্রকে আলাদা রাখা বিষয়ক। প্রথমে বিষয়টিকে আমার একধরনের তামাশা মনে হলেও পরে আমি এর মধ্যে আরো গভীর কিছু দেখতে পাই। যা সত্যিই ধর্ম সম্পর্কিত।’
‘আমি আগে কখনো বুঝতে পারতামনা লোকে কেন ধর্মপালন করে। এবং তারা এ থেকে কী পায়। কিন্তু এই প্রকল্পটি করতে গিয়ে আমি বুঝতে পারি আসলে ধর্ম কোনো সমস্যা নয়। বরং ধর্ম হলো ,মানুষের একটি সহজাত প্রবণতা। যা মানুষ কোনো না কোনোভাবে ধারণ করে। আমাদের এখনো মুল্যবোধ ও পৌরাণিক গল্পকে কেন্দ্র করে একত্রিত হওয়ার ও সম্প্রদায় হিসেবে সংঘবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। আমি মনে করি শয়তানের মন্দির আমাকে একটি নতুন পথের সন্ধান দিলো।’
সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার