।। মুহাম্মদ আব্দুর রহমান অলি।।
এম ডি রিয়াদুল হাসান লিখেছেন, শুধুমাত্র ২০১৯ সালের জানুয়ারী থেকে এখন পর্যন্ত বলাৎকারের অভিযোগ উঠেছে ২১ জন মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ৩০ এপ্রিল তিনি জানতে চেয়েছেন মসজিদ মাদ্রাসায় এসব হচ্ছেটা কি? সংবাদ পত্রে প্রতিদিনই ইমাম ও মাদ্রাসা শিক্ষকদের অপকর্মের বিষয় শিরোনাম হচ্ছে। শিক্ষক ছাত্রীকে ধর্ষণ করছে ও পুড়িয়ে মারছে। মুক্তিপণের জন্য তিন বছরের শিশুকে হত্যা করছে। বলাৎকার করেও ছাত্র হত্যা করছে তারা। আবার এইসব ব্যক্তিরাই কথায় কথায় অন্যের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ আনে।
মসজিদ মাদ্রাসায় নির্যাতন ও নিপীড়নের টাইমলাইন শিরোনামে ২০১৯ সালের শুরু থেকে অদ্যাবধি বিভিন্ন তথ্যাদি তুলে ধরেছে অবিশ্বাসডটকম নামে একটি ওয়েবসাইট । বিস্তারিত দেখতে এই লিঙ্কে যেতে পারেন। https://obisshash.com/torture-in-madrasa-timeline/?fbclid=IwAR3b7av9EeiY-JyXIkCrD-HCb0OAOLcnCtUCf_vvQQE2FsgeQe4S8DyJJCk ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতন ছাড়াও মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ঠ নানা ঘটনার তথ্যাদি উল্লেখ রয়েছে এই প্রকাশনায়।
এতক্ষণ আমরা যে ডেইটা আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম তার কালপ্রিট ও ভিকটিমের বয়ষের তুলনা তুলে ধরলে আমাদের আলোচনা এবং আপনাদের নিজের কাছে মস্তিষ্ক রিজনিং করতে সহায়তা প্রদান করবে।
বয়সের দিক থেকে ৪ বছরের শিশু এবং ক্লাস ভিত্তিক হিসাবে ১ম শ্রেণী হল সর্ব কনিষ্ট ভিক্টিম এবং এই বয়সের ভিক্টিমদের প্রতি নির্যাতনকারী সবচেয়ে কম বয়সী কালপ্রিটের বয়স ১২ এবং সবচেয়ে বেশী ৫০ এছাড়াও পেশা বিবেচনায় ছিলেন ইমাম, মুয়াজ্জিন, শিক্ষক ও অধ্যক্ষ।
এতো এতো নেগেটিভ নিউজ পড়ে হয়তো আপনি আমাদের সম্পর্কেই নেগেটিভ ভাবতে শুরু করেছেন! ভাবছেন মাদ্রাসাকে টার্গেট করছি কি না ? চলুন দেখে আসি ধর্ষকাম কি শুধুই মাদ্রাসা পড়ুয়াদের মাঝেই রয়েছে নাকি সমাজে অন্যত্র একই অবস্থা?
নিচের লিঙ্ক খোলা জানালা সমাচার – এক এর
https://britbangla24.com/news/90073/
গত জুন ২৭, ২০১৯ এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে র্যাব-১১ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক আলেপ উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের অক্সফোর্ড হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক আরিফুল ইসলাম আট বছর ধরে স্কুলটিতে অংক ও ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষকতা করে আসছে। ছাত্রীদের কোচিংয়ের জন্য তার ভাড়া বাসা ছাড়াও স্কুলের পাশে বুকস গার্ডেন এলাকায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়। তার স্ত্রী, সন্তান না থাকলেও ফ্ল্যাটে তিনটি বিছানা ছিল বলে জানায় ফ্ল্যাটের দারোয়ান। সেখানেই আরিফুল ইসলাম অসংখ্য ছাত্রীকে ব্ল্যাকমেইল করে আপত্তিকর ছবি তুলে ধর্ষণ করে। আর স্কুলের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জুলফিকার শিক্ষক আরিফুল ইসলামকে সহযোগিতা করছিল।
নিচের লিঙ্ক খোলা জানালা সমাচার – দুই এর
https://britbangla24.com/news/91898/
২৯ এপ্রিল ২০১৯, রংপুর নগরীতে ১ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে তিন শিশুর বিরুদ্ধে! অভিযুক্ত তিন শিশুর বয়স ৯, ১০ ও ১১ বছর! ধর্ষণের শিকার শিশুটির বয়স ৬ বছর! ফেনীর সোনাগাজীতে নবম শ্রেণির এক ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত সিরাজুল ও রাসেল ফেনীর আদালতে দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দিয়েছে। যশোর শহরতলীর একটি মন্দিরের ভেতরে শিশু ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে প্রকাশ ব্যানার্জী (৫৪) নামের এক পুরোহিতকে আটক করেছে কোতয়ালী পুলিশ। চুয়াডাঙ্গার ঝিনুক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্তৃক ধর্ষণ, স্কুল শিক্ষক সোহেল রানা কতৃক গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রীকে অন্তঃসত্ত্বা করা, টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলায় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ৯ম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে মন্টু মিয়া নামে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে এক বছর ধরে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে, ৯ম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে নিয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২ সন্তানের জনক শিক্ষক উধাও, জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় ১২ বছরের স্কুল ছাত্রীকে ঘুমের মেডিসিন দিয়ে ধর্ষণ, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে উপজেলার শশীধরপুর এলাকার বিডিএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজী শিক্ষক মেহেরুল্লাহর (৫০) বিরুদ্ধে ছাত্র বলাৎকারের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
চট্রগ্রামের সিসিকের স্কুলের সুমন কান্তি শীলএবং সুবোধ কান্তি সিকদার , রামুর মিজানুর রহমান, ভিকারুননেসার পরিমল, গোপালগঞ্জের শ্রীবাস কুমার মণ্ডল, যশোরের মহাদেব সাহা কিংবা রামুর মিজানুর রহমানদের কথা কার অজানা?
ধর্ষণ ও অন্যান্য যৌন নিপীড়ণ , মানুষের প্রতি যৌন নিপীড়ণের টাইমলাইন শিরোনামে ২০১৯ সালের শুরু থেকে অদ্যাবধি জাতীয় বা আঞ্চলিক মিডিয়া হাউসগুলো থেকে অবিশ্বাসডটকম এর জন্য আধারের যাত্রী নামে একজন রিপোর্ট প্রস্তুত করেছেন । নিচের লিঙ্কে দেখুন …
https://obisshash.com/sexual-assault/
অথবা নিচের লিঙ্কে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক একটি চিত্র পাবেন।
https://bn.wikipedia.org/wiki/বাংলাদেশের_শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে_শিক্ষার্থীদের_উপর_যৌন_নির্যাতনের_তালিকা
এই আলোচনার পরিধিকে ধীর্ঘতার অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে মাদ্রাসায় বা মাদ্রাসা শিক্ষিতদের মাঝে যে ধর্ষণ ব্যাধির মহামারি ছড়িয়েছে তাতে সীমাবদ্ধ থাকবো। তবে মাদ্রাসা বিষয়ে যাবার আগে ওভারঅল শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের একটি চিত্র তুলে ধরবো।
২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এই ৬ মাসে সারাদেশে ছয়টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ৪০৮টি সংবাদ বিশ্লেষণ করে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) জানিয়েছে,৩৯৯ জন শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে আট জন ছেলে শিশু। ধর্ষণের পরে একজন ছেলে শিশুসহ মারা গেছে মোট ১৬ শিশু।
চাইল্ড রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ ‘শিশু অধিকার সংরক্ষণে ২০১৮-এর পরিস্থিতি’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে ভয়ঙ্কর তথ্য তুলে ধরেছে , ২০১৮ সালে সারা দেশে ২৮ প্রতিবন্ধী শিশুসহ ৫৭১ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৯৪ শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। ৬ শিশু ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছে। এদিকে একই বছরে ৮১২ শিশু বিভিন্ন ধরনের যৌন নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছে।
ধর্ষণ, আত্মহত্যা বাড়ছে, উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, চাইল্ড পার্লামেন্টের নিজস্ব জরিপে এসেছে, ৮৭ শতাংশ শিশুই কোনো না কোনো যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। গণপরিবহনেই নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৫৩ শতাংশ। রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এমনকি পরিবারেও শিশুরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কর্মজীবী ও গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদের অবস্থা আরও ভয়াবহ। শিশুদের আত্মহত্যা করার প্রবণতা বেড়েছে ৩৯ দশমিক ৯১ শতাংশ। ২০১৮ সালে ২৯৮ শিশু আত্মহত্যা করেছে, ২০১৭ সালে এই সংখ্যাটি ছিল ২১৩। আর বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম বলছে, যৌন নিপীড়নের শিকার শতকরা ৫ ভাগ ছেলে শিশু৷ মেয়ে শিশু শতকরা ৯৫ ভাগ৷ আর এও জেনে অবাক হবেন না, ৭৫ ভাগ শিশুর যৌন নিপীড়ক পরিবারের ঘনিষ্ঠজন।!!
আপনার সমাজ-রাষ্ট্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যখন এমন ধর্ষণাগার তখন সেখানে মাদ্রাসা আর স্কুল বা পরিবার ট্যাগে আলাদা করে মহামারীর মতো এই ব্যাধিকে নির্মূল বা মোকাবেলা করা যাবেনা। কিন্তু হঠাৎ করে জাতীয় জীবনে এবং বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় মাদ্রাসা এবং মাদ্রাসা শিক্ষিতদের আলোচনা আসায় এই বিষয়ে আলোচনা খুব জরুরী। ভাবা উচিত কেন ধর্ষণ মাদ্রাসার দেয়ালের ভেতরে আর বাইরে এবং ইমাম-মুয়াজিন বা স্কুল শিক্ষকের বেলায় অভিন্ন নয়। সেক্যুলার বা নাস্তিক সমাজ বা মাদ্রাসা শিক্ষিত সমাজের বাইরের মুসলিম সমাজ কেন আইসোলেটেডলি মাদ্রাসায় ধর্ষণ কে আলাদা করে দেখছেন? কিভাবে এবং কেন তাদের মাঝে এক অব্যক্ত প্রত্যাশার জন্ম নিচ্ছে?
যে মুহুর্তে আমরা মাদ্রাসার শিক্ষিতদের বাইরের মানুষের মোড়াল পজিশন কে চ্যালেঞ্জ করছি তখন জেনে নেয়া উচিত মাদ্রাসা শিক্ষিতদের মোড়ালের ভিত্তি কোরান–হাদিস এই বিষয়ে কি বলছে?
•“এবং আমি লূতকে প্রেরণ করেছি। যখন সে স্বীয় সম্প্রদায়কে বললঃ তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করছ, যা তোমাদের পূর্বে সারা বিশ্বের কেউ করেনি ? তোমরা তো কামবশতঃ পুরুষদের কাছে গমন কর নারীদেরকে ছেড়ে। বরং তোমরা সীমা অতিক্রম করেছ।” (আরাফ ৭:৮০–৮১)
• “সারা জাহানের মানুষের মধ্যে তোমরাই কি পুরূষদের সাথে কুকর্ম কর?
এবং তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্য সঙ্গিনী হিসেবে যাদের সৃষ্টি করেছেন, তাদেরকে বর্জন কর? বরং তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।” (শুয়ারা ২৬:১৬৫–১৬৬)
• “স্মরণ কর লূতের কথা, তিনি তাঁর কওমকে বলেছিলেন, তোমরা কেন অশ্লীল কাজ করছ? অথচ এর পরিণতির কথা তোমরা অবগত আছ! তোমরা কি কামতৃপ্তির জন্য নারীদেরকে ছেড়ে পুরুষে উপগত হবে? তোমরা তো এক বর্বর সম্প্রদায়। উত্তরে তাঁর কওম শুধু এ কথাটিই বললো, লূত পরিবারকে তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও। এরা তো এমন লোক যারা শুধু পাকপবিত্র সাজতে চায়। অতঃপর তাঁকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে উদ্ধার করলাম তাঁর স্ত্রী ছাড়া। কেননা, তার জন্যে ধ্বংসপ্রাপ্তদের ভাগ্যই নির্ধারিত করেছিলাম।” (নামল ২৭:৫৪–৫৭)
•“আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ সুসংবাদ নিয়ে ইব্রাহীমের কাছে আগমন করল, তখন তারা বলল, আমরা লুতের জনপদের অধিবাসীদেরকে ধ্বংস করব। নিশ্চয় এর অধিবাসীরা অপরাধী।” (আনকাবুত ২৯:৩১)
•“ইবনে আব্বাস বলেন, রাসুল (স) বলেছেন, তোমরা যদি কাউকে পাও যে লুতের সম্প্রদায় যা করত তা করছে, তবে হত্যা কর যে করছে তাঁকে আর যাকে করা হচ্ছে তাকেও।” (আবু দাউদ ৩৮:৪৪৪৭)
•“আবু সাইদ আল খুদ্রি বলেন, রাসুল (স) বলেছেন, একজন পুরুষ আরেক পুরুষের যৌনাঙ্গ দেখবে না। এক নারী আরেক নারীর যৌনাঙ্গ দেখবে না। এক পুরুষ আরেক পুরুষের সাথে অন্তত undergarment না পরে একই চাদরের নিচে ঘুমাবে না। এক নারী আরেক নারীর সাথে কখনও অন্তত undergarment না পরে একই চাদরের নিচে ঘুমাবে না।” (আবু দাউদ, ৩১:৪০০৭)
•“আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স) বলেন, এক পুরুষ আরেক পুরুষের সাথে বা এক নারী আরেক নারীর সাথে ঘুমাতে পারবে না লজ্জাস্থান ঢাকা ব্যতীত। তবে ব্যতিক্রম করা যাবে, শিশু আর পিতার ক্ষেত্রে… রাসুল (স) ৩য় আরেকজনের কথা বলেছিলেন কিন্তু আমি ভুলে গিয়েছি।” (আবু দাউদ, ৩১:৪০০৮)
সকল মুসলিম আইনবিদই একমত ষে, পায়ুকাম নিষিদ্ধ, যার ভিত্তি হল এই হাদিসগুলো :
“তোমরা (পুরুষেরা) নারীদের সাথে পায়ুপথে সহবাস কোরো না।“— (আহমাদ, তিরমিযি, নাসায়ী, এবং ইবনে মাজাহ)
নবী মুহাম্মাদ (সা) আরও বলেন, “সে পুরুষ অভিশপ্ত, যে কোন নারীর সাথে পায়ুপথে সঙ্গম করে।“— (আহমাদ)
খুজাইমা ইবনে সাবিদ বর্ণনা করেন, “আল্লাহর রাসুল (সা) বলেছেন: আল্লাহ তোমাদেরকে সত্য কথা বলতে লজ্জাবোধ করেন না: তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সাথে পায়ুপথে সঙ্গম করো না।“— (আহমাদ, ৫/২১৩)
ইবনে আবাস বর্ণনা করেন: “আল্লাহর রাসুল (সা) বলেছেন:
“আল্লাহ সেই পুরুষের দিকে তাকাবেন না যে তার স্ত্রীর পায়ুপথে সঙ্গম করেছে।“
— (ইবনে আবি শাইবা হতে বর্ণিত, ৩/৫২৯, আত–তিরমিযীতে এটিকে বিশুদ্ধ হাদিস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, ১১৬৫)
উপরন্তু, বলা আছে যে নবী মুহাম্মাদ (সা) একে ছোট “সডোমি(অজাচার)” বলে আখ্যায়িত করেছেন। (আন–নাসায়ী হতে বর্ণিত)
মাদ্রাসায় পড়াশুনা করেছেন এমন ব্যাক্তি লিওয়াতাত টার্মটির সাথে পরিচিত থাকার কথা। ইসলাম প্লেটোনিক ভালোবাসাকে উৎসাহিত করলেও সডোমিয়াত বা লিওয়াতাত কে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে। উপরোল্লেখিত আয়াত ও হাদিস সমূহ তারই প্রতিফলন ঘটাচ্ছে তাই প্রশ্ন হলো মাদ্রাসার শিক্ষক, ছাত্র, ইমাম, মুয়াজ্জিন , বা আলেমগণ কি সডোমিয়াত বা লিওয়াতাত সম্পর্কে অবগত নন?! তাদের এই ধর্ষণ উন্মাদনা বা পায়ুকামের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাবস্থাপনা হালাল এডাল্ট প্লেটোনিক ভালোবাসার নাম দেয়া যাবে কি? এই মহামারির কারন কি , কেন এমন হয় ? কে বা কারা এর জন্য দায়ী ? রাষ্ট্র কি করছে এই মহামারী রুখতে?
বাংলাদেশের আইন বলছে,
যদি কেউ প্রকৃতির আদেশের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো পুরুষ বা নারী বা কোনো প্রাণীর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয় তবে তাকে দশ বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে এবং এই মেয়াদ আজীবন পর্যন্ত বর্ধিত করা হতে পারে। (সেকশন ৩৭৭) ।
কোরান , হাদিস ও বাংলাদেশের আইন এমনকি খুব স্পেসিফিক ভাবেই হাদিসে যেখানে পায়ুকাম নিষিদ্ধ এমনকি নিজ স্ত্রীর সাথেও পায়ুকাম করা যাবেনা সেখানে কেন একদল মাদ্রাসা শিক্ষিত লোকজন সমকামিতার দিকে ভয়ঙ্কর গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন? এগুলো কি সমকাম নাকি সমপ্রেম নাকি নিজের যৌন চাহিদা পুরণে সহজ টার্গেটদের ধর্ষণমাত্র নাকি ইসলামেই এই ধর্ষণযাত্রার বীজ বপিত আছে অথবা এমন হতে পারে কি ইসলামের অপব্যাখ্যা করে চলেছে ধর্মের আলখাল্লায় লুকিয়ে থাকা এক ধর্ষক পুরুষ?
পূর্বে উল্লেখিত যতোগুলো ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে যার অলমোষ্ট সকল গুলোতেই ভিক্টিম একজন আন্ডার এইজ শিশু। কিছু ইছু ঘটনায় ভিক্টিম ও তাদের সেক্সুয়াল প্রিডেটর উভয়ই মাইনর বা শিশু। ঘটনাগুলো ইনভেষ্টিগেট করলে এবং মাদ্রাসা সম্পর্কে জ্ঞান আছে এমন ব্যাক্তিবর্গের সাথে কথা বলে জানা যায়,
•ভিক্টিমদের যৌনতা সম্পর্কে কোন ধারনাই নেই,
•সমকাম নিয়ে তাদের কোন কনসেন্ট দেয়ার বয়স বা জ্ঞান কোনটিই বিদ্যমান নেই,
•ভিক্টিমগণ তাদের সেক্সুয়াল প্রিডেটরের সাথে কোণ এটেন্ডেন্স ছাড়া দেখা করার , সময় কাটানো বিষয়ক কোন নীতি বা নিষেধাজ্ঞার ধারণা নেই,
•ভিক্টিমগণ তাদের সেক্সুয়াল প্রিডেটরের সাথে এক রুমে বসবাস করেন এবং করতে বাধ্য হতে হয়,
•ভিক্টিমদের দারিদ্র্যর সুযোগ নেয়া হয়,
•ভিক্টিমগণ লজ্জায় সেক্সুয়াল এসল্টকে চেপে যান,
•ভিক্টিমগণ তাদের উপর যে নির্যাতন সংঘটিত হয় তা কাউকে রিলিজিয়াস স্লেভারির কারণে বোঝাতে ব্যার্থ হন,
•ভিক্টিমগণ নিজেরাই এক সময় সেক্সুয়াল প্রিডেটরেরূপান্তরিত হন,
•বেশীরভাগ ভিক্টিম কওমি মাদ্রাসার ছাত্র, এবং তারা হোস্টেলে বসবাস করেন,
আমরা হয়তো কিভাবে একজন ভিক্টিম হয়ে উঠেন তার কিছুটা ধারণা করতে পেরেছি কিন্তু কেন একজন মানুষ এক শিশুকে ধর্ষণ করেন তার জন্য বিস্তারিত গবেষণা প্রয়োজন। একজন অর্থডক্স মুসলিমের কাছে কোরানের বাণীর চেয়ে অমোঘ বা সম্মানের বা অবশ্য পালণীয় আর কিছু নেই। কোরানে – হাদিসে এবং রাষ্ট্রে নিষেধ থাকা সত্ত্বেও কেন শিশু নির্যাতনের দিকে তারা হাত বাড়ায়?
মাদ্রাসায় সমকামকে উৎসাহিত করা হয় না কিন্তু এই মহামারীকে আমূলে উৎপাটন করতে তাদের টেকসই কোন কর্মসূচি নেই! যখনই কোন ধর্ষণের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে তখন তা কাভার আপ করার প্রচেষ্টার তথ্য সংগ্রহ করা গিয়েছে।
একটি সময় দরিদ্র মাদ্রাসা শিক্ষক, এবং তার স্ত্রী থেকে দূরে থাকা, শয়তানের প্ররোচনা, বাইসেক্সুয়ালিটি ইত্যাদি এক্সকিউজ হিসেবে আনা হলেও সমাকামীদের প্রতি বা পায়ুকাম নিয়ে ইসলামের এক্সট্রিম অবস্থান এই সেক্সুয়াল প্রিডেটরদের রুখতে কেন ব্যার্থ হয়েছে? এমনকি ইসলামি শরীয়ার ভিন্ন ভিন্ন স্কুল অব থটের স্কলারগণ একমত যে ইসলামে পায়ুকাম বা সমকামের কোন স্থান নেই। তবুও ভয়ঙ্কর ভাবে বেড়ে যাওয়া শিশুকামের পেছনে আমরা কি নিন্মোক্ত কোরানিক ভার্সকে তাদের প্রেরণা হিসেবে ধারনা করতে পারি,
সুরক্ষিত মোতিসদৃশ কিশোররা তাদের সেবায় ঘুরাফেরা করবে। [ সুরা তুর ৫২:২৪ ]
তাদের কাছে ঘোরাফেরা করবে চির কিশোরেরা। [ সুরা ওয়াক্বিয়া ৫৬:১৭ ]
অথবা যেমনটা লিখেছেন প্রখ্যাত ঐতিহাসিক পি,কে, হিট্টি, আমরা খলিফা আল–রশীদের আমল থেকে গেলমানদের কথা জানতে পাই, তবে তারও আগে খলিফা আল–আমিন পারস্য প্রথার অনুকরণে আরব–বিশ্বে যৌনতা চর্চার জন্য গেলমান প্রথা প্রতিষ্ঠা করেন। এক বিচারক, যার সম্পর্কে তথ্য রয়েছে, তিনি এমন ৪ হাজার তরুণ বালক ব্যবহার করতেন। কবিগণ প্রকাশ্যে দাড়িহীন তরুণদের প্রতি তাদের গর্হিত কাম প্রকাশ করে কবিতা লিখতে আদৌ দ্বিধা করেন নি।
খলিফা আল–মুক্তাদির, যিনি ছিলেন মৌলবাদী, তিনি তার রাজপ্রাসাদে ১১,০০০ খোজা বালক রাখতেন – ৭,০০০ কৃষ্ণাংগ ও ৪,০০০ গ্রিক শ্বেতাংগ। ভারতে সম্রাট জাহাংগীরের প্রাসাদের উচ্চস্থানীয় কর্মকর্তা সাইদ খান চাগতাই রাখতেন ১,২০০ খোজাকৃত তরুণ। সুলতান আলাউদ্দিনের নিজ কর্মকাণ্ডে ৫০,০০০ যুবক নিয়োজিত রাখতেন; সুলতান ফিরোজ শাহ রাখতেন ৪০,০০০ তরুণ। এসব তরুণদের বেশিরভাগ ছিল খোজাকৃত। এমনকি সুলতান হিন্দু থেকে বন্দি–ক্রীতদাস বরণের মাধ্যমে ধর্মান্তরিত আলাউদ্দিনের প্রধান সেনাপতি মালিক কাফুর ছিল খোজা, যেমনটি ছিল সুলতান কুতবুদ্দিন মুবারক খিলজির প্রিয় সেনাপতি খসরু খান। সিকান্দার লোদি একবার গর্ব করে বলেছিলেনঃ ‘আমি যদি আমার কোন দাস–বালককে পালংকে বসতে বলি, আমার ইশারায় প্রাসাদের সব সম্ভ্রান্তরা তাকে কাধে করে বয়ে নিয়ে যাবে।’
এই গেলমান চর্চা আজও আফগানিস্তানে বিদ্যমান। বাংলাদেশে এক সময় যে ঘাটুগাণের প্রচলন তা ছিলো জমিদারদের শান, প্রান্তিক গরীব চাষীগনের কেউ কেউ অসল সংগ্রহের পর বাড়ি থেকে দূরে ঘাটুগানের আয়োজন করতেন যেখানে এক সুদর্শন ছেলে মেয়ে সেজে যৌন আবেদনময় গান ও নৃত্য পরিবেশন করতেন।
অথবা ১৩তম শতাব্দীর শেষ দিকে (১৩৮০–র দশক) মধ্য এশিয়ার কুবলাই খানের প্রাসাদ থেকে ভনিসে ফেরার পথে মার্কো পোলো বাংলাকে খোজা বালক সরবরাহ করার এক বড় উৎস হিসেবে বর্ণনা কিংবা দুয়ার্ত বারবোসা সুলতানেত যুগ (১২০৫–১৫২৬)-এর শেষ দিকে ও ফ্রাসোয়া পিরার্দ মুঘল যুগে (১৫২৬–১৭৯৯) ভারতবর্ষে খোজা সরবরাহের জন্য বাংলাকে শীর্ষস্থানীয় উৎস হিসেবে উল্লেখ করা এমনকি ১৫৯০–এর দশকে লিখিত আইন–ই–আকবরী গ্রন্থেও একই কথা উল্লেখিত হওয়া কি মুসলমানদের মাঝে সমকাম বা শিশুকামের গ্রহণযোগ্যতা বা প্রচলন প্রমাণ করেনা? এমন কি হতে পারে সালাফি ইসলাম সমকাম বা শিশুকামের বিষয়ে ভীন্ন চিন্তা প্রচার করায় পুরাণ দিনের প্রচলিত সেই কালচার বা রিলিজিয়াস সাপোর্টকে নালিফাই বা অপ্রচলিত করে দিয়েছে? ভারতীয় উপমহাদেশে খোজাদের শাসন বা উত্থান কি প্রমাণ করেনা সেই সময়ে সমাজের শিশুকাম কতোটা গ্রহণযোগ্য ছিলো।
যে দেশের মানুষ আগাধ আস্থায় নিজ সন্তানকে মাদ্রাসা হোষ্টেল বা মাদ্রাসা শিক্ষিতদের কাছে পাঠান তারা কি তবে তারা এইদল পিশাচের লালসার মুখে তাদের কলিজধর্মপরায়ন মানুষদের তাদের ধর্মের আলোকেই জানাচ্ছি আপনার সন্তানকে রক্ষার দায় আপনার, ধর্মও তাই বলছে। মানুষের বানানো ধর্ম তাই মানুষের ভেতর যে পশুর বসবাস তারা তা অনুমান করতে পেরেই জানিয়েছেন, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর হতে বর্ণিত যিনি বলেন: আমি আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) কাছ থেকে শুনেছি: “তোমাদের প্রত্যেকেই মেষপালক আর প্রত্যেকেই তার নিজ মেষপালের জন্য দায়ী। একজন শাসকও একজন মেষপালক এবং সেও তার মেষপালের জন্য দায়ী। একজন পুরুষ তার নিজ গৃহের মেষপালক এবং সে তার নিজ পোষ্যর ব্যাপারে দায়িত্ববান। একজন নারী তার স্বামীর গৃহের মেষপালক এবং সে তার নিজ পোষ্যর ব্যাপারে দায়িত্ববান।”
— আল–বুখারি (৮৫৩) ও মুসলিম (১৮২৯)
আমাদের কথা নাই বা শুনলেন অন্তৎ নিজ ধর্মের কথা শুনুন আর একটি মানুষের বাচ্চা ভেবেই তার পাশে দাঁড়ান। তাকে যৌন সুরক্ষার শিক্ষা দিন।এটি লজ্জার বা গোপন করার বিষয় নয়।
বাংলাদেশের সরকারও এগিয়ে এসেছে, আপনি আসুন। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতারোধে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্তের আলোকে মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড এই আদেশ জারি করেছে৷ আদেশে বলা হয়েছে:
১. যৌন হয়রানিসহ নারী ও শিশুর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে৷
২. প্রতিটি মাদ্রাসায় একজন নারী শিক্ষককে মেন্টর নিযুক্ত করে মাদ্রাসার ছাত্রীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া বৃদ্ধি করতে হবে৷
৩. পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত জেন্ডার সম্পর্কিত বিষয়গুলো পর্যালোচনা, মাদ্রাসার ছেলেমেয়েদের প্রজনন স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক ও পরিচ্ছন্ন টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে৷
৪. নারী নির্যাতন ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধে যে সকল আইন, নীতিমালা ও হাইকোর্টের যে নীতিমালা আছে তা প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে৷
৫. ফ্রি হেল্পলাইন–১০৯ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জানাতে হবে৷
আসমান থেকে কেউ আসবেন না আপনার শিশুকে রক্ষা করতে কিংবা তথাকথিত ইসলামের হেফাজতকারীগণও আজ পর্যন্ত আসেন নি আর আসবেন বলেও বোধ করি না। আপনার শিশু যে শুধু মাদ্রাসায় অরক্ষিত এমন নয়, স্কুলে , বাসায় , নিজ চাচা–মামা কিংবা হাউজ টিউটর কাউকেই আপনি এক্সক্লুড করতে পারবেন না। অক্ষ কান খোলা রাখুন, বলুন আর সমাধান করুন। শুনলে অবাক হবেন বিবিসি বাংলা “কেন আড়ালে থেকে যাচ্ছে বাংলাদেশে ছেলে শিশুদের উপর চালানো যৌন নির্যাতন? “শিরোনামে একটি প্রতিবেদনটি তৈরি করতে শিশুদের নিয়ে কাজ করে এরকম দশটি সংস্থার সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে।
কিন্তু তাদের কারোরই এ নিয়ে কোন ধরনের কাজ পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশে মাত্র একটি গবেষণা পাওয়া গেছে যদিও সেটি হয়েছে খুব স্বল্প পরিসরে এবং একটি শিক্ষার্থীদের তৈরি সংগঠনের দ্বারা।
নিরাপদ শৈশবের উদ্দেশ্যে বা নিশু নামের এই সংগঠনটি ঢাকা ও সাতক্ষীরায় ৯ টি স্কুলে এক জরিপ চালায়।
সেখানে তারা ১২শ শিশুর সাথে কথা বলেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রতি দশজনের একজন ছেলে যৌন নির্যাতন বা অশোভন আচরণের শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে। আপনি কি ভাবতে পারেন মাদ্রাসা নিয়ে এমন কোন কাজ করা হবে? ভুলে যাবেন না আপনার শিশু মাদ্রাস্যতে অবস্থান করে থাকে বা পড়াশুনায় থাকে তবে এই সমাজ–রাষ্ট্র তাকে মাইনরিটি উইথিন মাইনরিটিরও নীচে আনকাউন্টেবল স্পিসিস করে রেখেছে। ঘরের বাইরে বৈরী রাষ্ট্র আর ঘরের মাঝে দাড়ি–টুপি আর আলখাল্লায় এক খাড়া শয়তান আপনার শিশুর শৈশব কে আজীবনের অভিশাপ করে তুলছে।
এগিয়ে আসতে হবে আপনাকেই, মানুষ এখনো প্রকাশ্যে ভাবতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেননি একটি ছেলে বা পুরুষ সেক্সুয়ালি এসল্ট হতে পারেন।
মুহাম্মদ আব্দুর রহমান অলি : প্রেজেন্টার, ফাউন্ডার আরবিএস রেডিও এবং অনলাইন এক্সিভিস্ট ।