এসব হাতের কাজ দেখে পরিচিত ব্যক্তিরা প্রশংসা করতেন। ব্যবসায়ী পরিবারে জন্ম সাবিনার। এ কারণে চাকরি করার কথা কখনো মাথায় আসেনি। স্নাতক হওয়ার পর তাই স্বাধীনভাবে কিছু একটা করার ইচ্ছা হয় তাঁর। সেই ইচ্ছের কথা জানান ব্যবসায়ী ছোট ভাই নূরুল বাশারকে। ছোট ভাই পাঁচ লাখ টাকা পুঁজি দেন। সেই টাকায় শহরে ‘ঠিকানা বুটিক সেন্টার’ নামে একটা বুটিক শপ দেন।
এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তাঁর নিজের কারখানায় তৈরি পোশাকের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। স্বল্প সময়েই সাফল্য ধরা দিয়েছে আশাতীতভাবে। সাবিনার ঠিকানা হয়ে গেছে ‘ঠিকানা বুটিক শপ’।
মনে দ্বিধা ছিল, ছিল শঙ্কা। বিয়ের পর এই ‘ঠিকানা’ থাকবে তো! বর মাহবুবুর রহমান অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বখ্যাত একটি খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। বিয়ের পর চেয়েছিলেন স্ত্রীকে নিয়ে সেখানেই উড়াল দেবেন। কিন্ত ‘ঠিকানা’ ছেড়ে বিদেশে যেতে রাজি হলেন না স্ত্রী। শেষ পর্যন্ত মাহবুবুর রহমানই ফিরে এলেন দেশে। স্ত্রীর সঙ্গে ঠিকানার হাল ধরলেন।
’বগুড়ার ঠিকানা বুটিক সেন্টারের মালিক সাবিনা মুস্তারীর গল্পটা এমনই। প্রায় দেড় যুগ আগে নিজের হাতে কারুকাজ করা পোশাক বাণিজ্যিকভাবে ক্রেতাদের কাছে তুলে ধরতে শহরের পিটিআই মোড় এলাকায় ‘ঠিকানা বুটিক শপ’ খুলেছিলেন। এরপর জলেশ্বরীতলা এলাকায় ‘ঠিকানা’র শাখা খোলেন। এখন জলেশ্বরীতলা রোমেনা আফাজ সড়কের একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় বড় পরিসরে ‘ঠিকানা’র প্রধান শাখায় মিলছে নারীদের নানা রকম পোশাক। বিদেশ থেকে আমদানি করা শিশুদের পোশাকও পাওয়া যায় এখানে। নওগাঁ শহরে খোলা হয়েছে ঠিকানার আরেকটি শাখা। সাবিনা মুস্তারীর পাশাপাশি স্বামী মাহবুবুর রহমান ব্যবসা দেখাশোনা করেন।
সাবিনা মুস্তারী বলেন, ‘চাকরি করব না—এটা আমার পণ ছিল। বিএসসি পাস করার পর ২০০১ সালের দিকে বুটিক শপ খুললাম। নাম দিলাম ‘ঠিকানা’। এই নাম দেওয়ার কারণ, এটি যেন ক্রেতাদের পছন্দের পোশাকের ঠিকানা হয়ে ওঠে।’
২০০২ সালে অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয় সাবিনার। ‘বিয়ের পর আমাকেও অস্ট্রেলিয়ায় নিতে চাইলেন মাহবুবুর। কিন্তু আমার সন্তানের মতো আপন ঠিকানাকে ছেড়ে বিদেশে যেতে রাজি হলাম না। উল্টো ঠিকানাকে বড় পরিসরে ক্রেতাদের কাছে তুলে ধরার জন্য মাহবুবুরের সহযোগিতা চাইলাম। বিয়ের পর মাহবুব আমার কথায় ঠিকানার পাশে এসে দাঁড়ালেন।’ বললেন সাবিনা। ২০০৪ সালে জলেশ্বরীতলা শাখা খোলা হলো। ২০০৭ সালে এটি দোতলায় বড় পরিসর পেল। পাঁচ লাখ টাকা পুঁজিতে শুরু হয়েছিল যে ঠিকানার, সেটির লগ্নি এখন কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
এভাবেই সাবিনার ঠিকানা হয়ে উঠেছে প্রতিষ্ঠানটি।