ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: দেশের সমুদ্রসীমার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নৌবাহিনীকে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের সমুদ্র অপার সম্পদের উৎস।
মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ মীমাংসার ফলে সমুদ্রের গুরুত্ব বহুগুণ বেড়েছে। মৎস্য ও খনিজসম্পদে ভরপুর আমাদের জলসীমার অতন্দ্রপ্রহরী হিসেবে আপনাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে হলেও এর সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় নেভাল একাডেমিতে রোববার সকালে রাষ্ট্রপতির কুচকাওয়াজ পরিদর্শন শেষে প্রশিক্ষণার্থী অফিসারদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জাতীয় প্রয়োজনে নৌবাহিনীর সদস্যরা সিভিল প্রশাসনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলে কাজ করে থাকে। জাতীয় স্বার্থে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে ভবিষ্যতেও সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শীতকালীন কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং সালাম গ্রহণ করেন। এ কুচকাওয়াজের মধ্য দিয়ে চলতি বছর বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ৬১ জন মিডশিপম্যান, ১১ জন ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসারসহ ৭২ জন নবীন অফিসার কমিশন লাভ করেছেন।
এর মধ্যে ৭ জন নারী এবং ২ জন মালদ্বীপের কর্মকর্তা রয়েছেন। সদ্য কমিশনপ্রাপ্তদের মধ্যে রাইয়ান রহমান চৌকস মিডশিপম্যান হিসেবে সোর্ড অব অনার, সাইদিস সাকলাইন নৌপ্রধান স্বর্ণপদক এবং সাব-লেফটেন্যান্ট মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ‘বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্বর্ণপদক’ লাভ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রামের মেয়র আজম নাছির উদ্দীন, সংসদ সদস্য সুবিদ আলী ভূঁইয়া, এমএ লতিফ, ওয়াসিকা আয়শা খান, মোস্তাফিজুর রহমান।
এছাড়া সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, পিএমও সচিব সাজ্জাদুল হাসান, প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী নৌকমান্ডোসহ বিশিষ্ট ব্যক্তি, দেশি-বিদেশি কূটনীতিক এবং শিক্ষা সমাপনী ব্যাচের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের প্রয়োজনে একটি আধুনিক ও শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন।
সেই মহান প্রত্যয়ের আলোকেই বর্তমানে নৌবাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যুদ্ধজাহাজ সংগ্রহ এবং বিদ্যমান জাহাজগুলোর অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বাস্তবমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
ইতিমধ্যেই নৌবহরে দুটি সাবমেরিন সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে চালু করা হয়েছে উন্নত প্রশিক্ষণ সুবিধা সংবলিত আন্তর্জাতিক মানের সুবিশাল বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স। আধুনিক এ প্রশিক্ষণ সুবিধাকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে নবীন কর্মকর্তাদের সমুদ্রসীমার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিজেদের আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানান।
টানা তিনবার সরকার গঠনের ফলে এখন পর্যন্ত নৌবাহিনীতে মোট ২৭টি যুদ্ধজাহাজ, দক্ষ কমান্ডো ও উদ্ধারকারী দল তথা ‘স্পেশাল ওয়ারফেয়ার ডাইভিং অ্যান্ড স্যালভেজ কমান্ড’ এবং নৌবাহিনীর বৈমানিক দল বা এভিয়েশন উইং সৃষ্টি করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, নৌবাহিনীর ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চীন থেকে ২টি মিসাইল ফ্রিগেট এবং নির্মাণাধীন ২টি করভেট শিগগিরই নৌবহরে যুক্ত হবে। একই সঙ্গে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক করভেট, মাইনহান্টার, ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ভেসেল ও সেইলিং ট্রেনিং শিপসহ বিভিন্ন জাহাজ ক্রয় ও নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, নেভাল এভিয়েশনের জন্য মেরিটাইম পেট্রোল এয়ার ক্র্যাফট, এন্টি সাবমেরিন হেলিকপ্টার ও এলআরএমপিএ (লং রেঞ্জ মেরিটাইম পেট্রোল এয়ার ক্রাফট) ক্রয়ের পরিকল্পনা রয়েছে।
পাশাপাশি একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ার লক্ষ্যে মিসাইল, আইএফএফ সিস্টেম ইত্যাদিসহ বিভিন্ন প্রকার আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি সংযোজনের কাজও চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সর্ববৃহৎ ঘাঁটি ‘বানৌজা শের-ই-বাংলা’ ও ‘বানৌজা শেখ হাসিনা’ ঘাঁটির কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।