ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: ২০,০০০ অভিবাসী শ্রমিককে কোয়ারেন্টিনে নিয়েছে সিঙ্গাপুর। শ্রমিকদের ডরমিটরিগুলোতে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। উল্লেখ করার বিষয় হলো, এসব শ্রমিকের মধ্যে রয়েছেন অনেক বাংলাদেশিও। তাদেরকে ১৪ দিনের জন্য ডরমিটরিতে অবস্থান করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে দুটি ডরমিটরি আইসোলেট বা জনবিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। এর একটিতে অবস্থান করেন ১৩,০০০ শ্রমিক। সেখানে ৬৩ জনের দেহে করোনা ভাইরাস পাওয়া গেছে। আরেকটি ডরমিটরিতে অবস্থান করছেন ৬,৮০০ অভিবাসী শ্রমিক।
তাদের মধ্যে ২৮ জনের দেহে এই ভাইরাস পাওয়া গেছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে সিঙ্গাপুর তাদেরকে আইসোলেট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আইসোলেটে থাকার সময়ে তারা বেতন পাবেন এবং তাদেরকে দিনে তিনবেলা খাবার দেয়া হবে। তবে বেশির ভাগ শ্রমিক অভিযোগ করেছেন তারা গাদাগাদি করে অবস্থান করছেন। পরিবেশ নোংরা। উল্লেখ্য, বাংলাদেশি বিপুল সংখ্যক শ্রমিক কর্মরত সিঙ্গাপুরে। অনলাইন বিবিসি বলেছে, সিঙ্গাপুর হলো দক্ষিণ এশিয়ার বিপুল পরিমাণ নির্মাণ শ্রমিকের আশ্রয়স্থল।
সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, শ্রমিকদের আবাসন পাঙ্গলে এস-১১ ডরমিটরি এবং ওয়েস্টলাইট তোহ গুয়ান ডরমিটরি সিল করে দেয়া হয়েছে। এসব ডরমিটরিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই শ্রমিকদের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। এতে তারা নিরাপদ ও সুরক্ষিত থাকবেন। করোনার বিস্তার রোধ হবে। শ্রমিকদেরকে তাদের আবাসন ব্লক থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। তাদেরকে বলা হয়েছে, যেসব মানুষ তাদের রুমে অথবা ফ্লোরে অবস্থান না করেন, তারা যেন তাদের সঙ্গে না মেশেন।
বিবিসি লিখেছে, এক রুমে কতজন অবস্থান করবেন তা নির্ভর করে ডরমিটরি ভেদে। ২০১৫ সালে একটি নতুন কমপ্লেক্স পরিদর্শন করে বিবিসি। তাতে দেখা যায় গড়ে প্রতি রুমে অবস্থান করেন ১২ জন শ্রমিক।
এখন নতুন করে যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তার অধীনে শ্রমিকরা তাদের বেতন পাবেন। তাদেরকে তিনবেলা খাবার দেয়া হবে। পাবেন মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও থার্মোমিটার। থার্মোমিটার ব্যবহার করে প্রতিদিন দু’বার তাপমাত্রা রেকর্ড করতে হবে। কিন্তু পাঙ্গল ডরমিটরির ৬ জন শ্রমিক স্ট্রেইটস টাইমসকে বলেছেন, তাদের যেখানে রাখা হয়েছে, তা এমনিতেই তেলাপোকায় পূর্ণ। টয়লেটগুলো উপচে পড়ছে। খাবারের জন্য লম্বা লাইন দিতে হয়। বিদেশী শ্রমিকদের ডরমিটরিগুলো বেসরকারিভাবে পরিচালিত হয়। তবে পরিচালনাকারীদের অবশ্যই লাইসেন্স থাকতে হয়, যদি তাদের অধীনে কমপক্ষে ১০০০ শ্রমিক থাকে। সিঙ্গাপুরে এমন ৪০টি স্থান আছে।
এখন পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে কমপক্ষে ১৩০০ মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৬ জন। যদিও সেখানে সংক্রমণের বেশির ভাগই বাইরে থেকে ইমপোর্টেড বা বাইরে থেকে আসা, তবুও এখন স্থানীয় পর্যায়ে সংক্রমণ বাড়ছে। রোববার সেখানে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১২০ জন। এ যাবত সেখানে এটাই একদিনে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ। শুক্রবার সরকার তথাকথিত ‘সার্কিট ব্রেকার’ নীতি ঘোষণা করেছে। এটি অন্য দেশগুলোতে চলমান লকডাউনের মতো।
ছোট্ট শহর সিঙ্গাপুরে বসবাস করেন প্রায় ৫৭ লাখ মানুষ। ২০১৯ সালের হিসাবে এর মধ্যে ১৪ লাখই বিদেশী শ্রমিক। এসব বিদেশী শ্রমিকের মধ্যে আবার ২ লাখ ৮৪ হাজারই নির্মাণ কাজে যুক্ত। নিয়োগকারীরা শ্রমিকের চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ডসহ ১২টি দেশ থেকে কর্মী নিয়োগ দিতে পারেন।