‘সিনহা নিহতের ঘটনায় নিরপেক্ষ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে’

ব্রিট বাংলা ডেস্ক : মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ নিহত হওয়ার ঘটনায় গঠিত সরকারি তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মিজানুর রহমান বলেছেন, আগামী ২৩ আগস্টের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। তদন্ত কমিটি তদন্তে যা পেয়েছে তা উপস্থাপন করা হবে। এ ঘটনার নিরপেক্ষ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

তিনি সাংবাদিকদের আরও বলেন, সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ নিহত হওয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি সব কিছু ঊর্ধ্বে রেখে একটি নিরপেক্ষ এবং প্রকৃত ঘটনার মূল তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে বলেই সবাই বিশ্বাস রাখতে পারেন। নিরপেক্ষ ও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এ পর্যন্ত ৬০ জনের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। পাশাপাশি রোববার সকালে আরও ১১ জন সাক্ষী জবানবন্দি দেয়ার জন্য গণশুনানিতে বুথে এসে রেজিস্ট্রেশন করেন। সেখান থেকে ৯ জনের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। বাকি দুইজনের জবানবন্দি প্রদানকালে তাদের প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বিশ্বাসযোগ্য না হওয়ায় তাদের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়নি।

রোববার কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জের কার্যালয়ে গণশুনানি শেষে মিজানুর রহমান এসব কথা বলেন। রোববার কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জের কার্যালয়ে সকাল ১০টার কিছু সময় পর শুরু হওয়া গণশুনানি শেষ হয় বিকাল ৫টায়। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তদন্ত দলের প্রধান।

গণশুনানিতে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কমিটির অন্য সদস্য রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মনোনীত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের লে. কর্নেল সাজ্জাদ, চট্টগ্রামের ডিআইজি মনোনীত অতিরিক্ত ডিআইজি জাকির হোসেন এবং কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাজাহান আলি।

এদিকে সম্প্রতি পুলিশের সাক্ষীদের অপহরণ করা হয়েছে দাবি করে পুলিশের অযাচিত টেকনাফ থানায় একটি মামলার পর আতঙ্ক ছড়ায় স্থানীয়দের মাঝে। এরপর শঙ্কা জেগেছিল সিনহা হত্যার বিষয় নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা কথা বলবেন কিনা; গণশুনানিতে আসবেন কিনা তারা। কিন্তু শুনানির প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরুর পর মেজর সিনহা হত্যার ঘটনা প্রত্যক্ষকারী এবং পরবর্তী ঘটনা দেখা অনেকে স্বপ্রণোদিত হয়ে কথা বলতে নিজের নাম রেজিস্ট্রেশন করেছেন বলে জানিয়েছেন বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মৌলভী আজিজ উদ্দিন।

তবে স্বেচ্ছায় আসাদের মাঝে পুলিশের সাজানো কোনো ব্যক্তি রয়েছেন কিনা- সেই শঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যায় না বলে দাবি করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক সচেতন ব্যক্তি। শুনানি গ্রহণকারীরা বক্তব্য শুনেই বুঝতে পারবেন কারা সাজানো এবং কারা বাস্তবিক ঘটনার প্রত্যক্ষকারী- এমনটিই অভিমত তার। ঠিকই সাক্ষী দেয়ার জন্য ১১ জন রেজিস্ট্রেশন করলেও দুইজনের সাক্ষ্য বিশ্বাসযোগ্য না হওয়ায় তাদের বাতিল করে দেয় তদন্ত কমিটি।

সিনহা রাশেদ নিহতের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গঠিত হয় এ তদন্ত কমিটি। এ কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মিজানুর রহমান। সদস্য হিসেবে আছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ জাকির হোসেন, মোহা. শাজাহান আলী ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাজ্জাদ।

প্রথমে এই কমিটিকে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা বলা হয়। পরে কমিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ সময় আরও ৭ দিন বাড়ানো হয়। এই বাড়ানো সময় আগামী ২৩ আগস্টের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের কথা জানান কমিটির প্রধান।

গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ঘটনার পর পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় দুটি মামলা করে। আর রামু থানায় একটি মামলা করা হয়।

পরে ৫ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা করেন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। এতে ৯ জনকে আসামি করা হয়। আসামিরা হলেন- টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহার হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলী, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, এএসআই লিটন মিয়া, পুলিশ কনস্টেবল সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, মো. মোস্তফা ও এসআই টুটুল। এদের মধ্যে আসামি মোস্তফা ও টুটুল পলাতক।

রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া পুলিশের চার সদস্য এবং এ ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষীকে গত শুক্রবার থেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে র্যা ব। যাদের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে তারা হলেন- এএসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী মো. নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াছ। আর যারা বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন তারা হলেন- ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহার হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলী, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত। তাদেরও ৭ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। যে কোনো মুহূর্তে তাদের রিমান্ডে নেয়া হবে বলে জানায় র্যা বের একটি সূত্র।

Advertisement