সিলেট অফিস :: জাতীয় পার্টি একসময় সিলেটকে নিজেদের দুর্গ হিসেবে উল্লেখ করতো। তবে বর্তমানে সিলেটে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা শোচনীয়। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা জাতীয় পার্টির আগের সেই সমর্থন নেই সাধারণ মানুষের কাছে। সিলেটে দলটির নেতারাও রাজনীতির মাঠে সক্রিয় নন। ফলে সিলেটে ক্রমেই দিশা হারিয়েছে দলটি। এরকম অবস্থায় ফের সুদিনের স্বপ্ন বুনছেন জাতীয় পার্টির তৃণমূল নেতাকর্মীরা। সিলেটে দলটির একসময়কার প্রভাবশালী নেতারা দলে ফিরতে শুরু করায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের স্বপ্নের পালে লেগেছে হাওয়া।
জানা গেছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেটের ছয়টি আসনের মধ্যে দুটিতে জাতীয় পার্টির নেতারা সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেটের ছয়টি আসনে প্রার্থী দিয়ে একটিতেও জয়ী হতে পারেননি জাতীয় পার্টির কেউ। সাংগঠনিক বিপর্যস্ত অবস্থা, তৃণমূলে হতাশা আর নেতৃত্ব সংকটের কারণে সিলেটে দলটির এই পিছিয়ে পড়া বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, সিলেটে জাতীয় পার্টিতে দীর্ঘদিন প্রবাসী নেতৃত্ব ছিল। প্রবাসীরা রাজনীতির চেয়ে নিজেদের কর্মকা- নিয়েই বেশি ব্যস্ত ছিলেন। দেশের চেয়ে বিদেশেই সময় কাটিয়েছেন বেশি। ফলে সিলেটে জাতীয় পার্টি ক্রমেই দুর্বল হয়ে এখন অনেকটা বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। প্রবাসী নেতৃত্বের কারণে সিলেটে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন বলে অভিযোগ নেতাকর্মীদের।
জানা গেছে, সিলেট জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টিতে আহবায়ক কমিটি গঠিত হয় ২০১৭ সালে। জেলা শাখায় যুক্তরাজ্য প্রবাসী এটিইউ তাজ রহমানকে আহবায়ক ও ওসমান আলীকে সদস্যসচিব এবং মহানগরে যুক্তরাজ্য প্রবাসী ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়াকে আহবায়ক ও এডভোকেট আব্দুল হাই কাইয়ুমকে সদস্যসচিক করা হয়। কিন্তু এ দুই আহবায়ক কমিটিই ব্যর্থ হয় সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করতে। জেলা ও মহানগরে আওতাধীন ইউনিটগুলোর সম্মেলনও করতে পারেনি এ দুই আহবায়ক কমিটি। এর নেতিবাচক প্রভাবে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেটে একটি আসনও জুটেনি জাতীয় পার্টির ভাগ্যে। আর ওই নির্বাচনের পর থেকে সিলেটে আরো ঝিমিয়ে পড়েছে দলটির কার্যক্রম। যুক্তরাজ্য প্রবাসী ওই নেতাদের এখন রাজনীতির মাঠে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর বলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ।
এরকম অবস্থায় সিলেটে জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করতে উদ্যোগ নেন স্থানীয় কয়েকজন নেতা। অতি সম্প্রতি জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির কয়েকজন শীর্ষ নেতা বৈঠকে বসেন। সিলেটে আর প্রবাসী নেতৃত্ব মেনে না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তারা। জাতীয় পার্টিকে সাংগঠনিকভাবে গতিশীল করতে পুরনো প্রভাবশালী নেতাদের দলে সক্রিয় করার উদ্যোগও নেওয়া হয়। তাদের উদ্যোগ আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছে। সম্প্রতি জাতীয় পার্টিতে সক্রিয় হতে শুরু করেছেন সিলেট-২ আসনে দুইবারের সাবেক সাংসদ ও জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মকসুদ ইবনে আজিজ লামা, জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি এডভোকেট গিয়াস উদ্দিন, মহানগর জাপার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ নজরুল, জেলা শাখার সাবেক যুগ্ম সম্পাদক নাজমুল ইসলাম ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বশির আহমদ, সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম প্রমুখ। এসব নেতাদের দলে ফেরায় তৃণমূল নেতাকর্মীরা নতুন করে স্বপ্ন বুনছেন। তারা মনে করছেন, এসব নেতাদের সমন্বয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে জাতীয় পার্টি কাজ করতে পারলে সিলেটে সুদিন ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
সামগ্রিক বিষয়ে সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির সদস্যসচিব ওসমানী আলী সিলেটভিউকে বলেন, ‘সিলেটে জাতীয় পার্টিতে দিনবদলের হাওয়া লেগেছে। জাতীয় পার্টি ঘুরে দাঁড়াতে পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দলের পুরনো নিবেদিতরা ফিরতে শুরু করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘সাদ এরশাদ শনিবার সিলেট সফর করেছেন। তিনি দলকে এগিয়ে নিতে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তাঁর সফরে নেতাকর্মীরাও উজ্জীবিত।’