সিলেট অফিস :: সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বিজয় মিছিল থেকে ডেকে নিয়ে ছাত্রদলের নেতা ফয়জুল হক ওরফে রাজুকে হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন আবারও পিছিয়েছে। আজ মঙ্গলবার সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আলোচিত এই মামলার অভিযোগ গঠনের নির্ধারিত তারিখ ছিল। মামলায় গ্রেপ্তার এক আসামিকে আদালতে হাজির না করায় আদালত আগামী ৮ মার্চ অভিযোগ গঠনের নতুন তারিখ ধার্য করেছেন।
ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) সরওয়ার আহমদ চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আজ এই মামলার অভিযোগ গঠনের তারিখ নির্ধারণ ছিল। মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাবন্দী আছেন চার আসামি। এর মধ্যে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মোর্শেদ নামের এক আসামি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভার্তি থাকার কারণে অভিযোগ গঠন পিছিয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ গঠনের তারিখ ধার্য ছিল। ওই দিন রুবেল আহমদ নামের এক আসামি অন্য একটি মামলায় গ্রেপ্তার থাকায় আদালতে হাজির করা হয়নি। তখন ১৬ ফেব্রুয়ারি নতুন তারিখ ধার্য করে অভিযোগ গঠন পিছিয়েছিল। এক মাসের মধ্যে দুই দফা অভিযোগ গঠন পেছানোয় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী ও ফয়জুলের চাচা দবির আলী।
সিলেট ল কলেজের শিক্ষার্থী ফয়জুল হক সিলেট মহানগর ছাত্রদলের সহপ্রচার সম্পাদক ছিলেন। তাঁর বাড়ি মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার শাহাপুরে। সিলেট নগরীতে এক চাচার বাসায় থাকতেন তিনি। ২০১৮ সালের ১১ আগস্ট সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচিত ঘোষণার পর রাতে বিজয় মিছিল হয়। বিজয় মিছিল শেষে সেখান থেকে ডেকে নিয়ে রাত নয়টার দিকে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ওরফে দিনারের নেতৃত্বে একদল অস্ত্রধারী তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহত ফয়জুলের চাচা দবির আলী বাদী হয়ে ওই বছরের ১৩ আগস্ট সিলেট কোতোয়ালি থানায় ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ১২ মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অনুপ কুমার চৌধুরী আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। সেখানে ওই সময় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সদস্য পদে থাকা আবদুর রকিব চৌধুরী, জেলা সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ওরফে দিনারসহ ২৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের মধ্যে বর্তমানে কারাগারে আছেন জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ওরফে দিনারসহ চারজন। প্রধান আসামি আবদুর রকিব চৌধুরী, সাহেদ আহমদ চৌধুরী, জাবেদ আহমদ, শহিদুল হক ও মুরশেদ আলম পলাতক।
অভিযোগপত্রে ছাত্রদল নেতা আবদুর রকিব চৌধুরীর নির্দেশে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ফয়জুলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলা হয়। নিহত ফয়জুলের শরীরে ৪০টির বেশি আঘাতের চিহ্ন পাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলা হয়, হত্যায় অভিযুক্ত ২৬ জন অংশ নেন। অভিযুক্ত আসামিরা দলীয় আধিপত্য বিস্তারে আগে থেকেই ফয়জুলকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিলেন। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে আদালতে ফাহিম আহমেদ ওরফে তোহা ও সাদ্দাম হোসেন নামের দুজন আসামি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলায় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ ৫৫ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
ঘটনার প্রায় নয় মাস পর মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করার পর অভিযোগ গঠনের অপেক্ষায় প্রায় দেড় বছর ধরে অপেক্ষায় আছেন বলে জানিয়েছেন নিহত ফয়জুলের চাচা ও মামলার বাদী দবির আলী। তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর ফয়জুল নিহত হওয়ার ঘটনাটি ছিল দলের অভ্যন্তরে একটি বড় রকমের নাশকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা। ছাত্রদলের একটি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী চক্র এ তৎপরতায় যুক্ত ছিল। প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার মতো একটি বর্বর ঘটনা ঘটিয়ে প্রধান আসামি আবদুর রকিব পালিয়ে এখন যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন বলে বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত হয়েছি।’
এক মাসের মধ্যে তিন দফা অভিযোগ গঠনের তারিখ পরিবর্তন হওয়ায় হতাশ দবির আলী আরও বলেন, ‘আমরা শুনেছি, যুক্তরাজ্য থেকে প্রধান আসামি রকিব বিভিন্নভাবে মামলাটির বিচার বিলম্বিত করার চেষ্টায় আছেন। এ অবস্থায় বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে কি না, এ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।’