মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিতর্কিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে বর্তমানে গৃহবন্দি অবস্থাতে থাকা গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চির বিরুদ্ধে প্রথম কোনো মামলার রায় ঘোষণা হতে চলেছে। সোমবার (৬ ডিসেম্বর) জান্তা শাসিত বার্মিজ আদালত রায়টি ঘোষণা করবেন। এদিন প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে তথ্যটি জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।সংবাদে বলা হয়, উত্তেজনা সৃষ্টি এবং কোভিড-১৯ প্রোটোকল লঙ্ঘনের মাধ্যমে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ভাঙার দায়ে সোমবার অং সান সু চির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করবেন একজন বার্মিজ বিচারক। মিয়ানমারের আইন অনুযায়ী- এই অভিযোগে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে যথাক্রমে সর্বোচ্চ দুই ও তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে।
একইভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সু চির পাশাপাশি মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট এবং সহ আসামি উইন মিন্টেরও একই কারাদণ্ড হতে পারে। গেল ৩০ নভেম্বর এই রায় ঘোষণার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত করা হয়। সেদিন সু চির বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণার কথা থাকলেও বাড়তি আরেক ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য নির্ধারিত সময়ের কিছু আগে তা স্থগিত ঘোষণা করা হয়।মূলত জাও মিন্ট মং নামে এক ব্যক্তি স্বাস্থ্যগত কারণে ইতোপূর্বে আদালতের সামনে সাক্ষ্য দিতে না পারলেও পরে তিনি আদালতে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দিতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। পরে আদালত আসামিপক্ষের ওই প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং রায় ঘোষণা স্থগিত করেন। স্থগিত সেই রায়ই সোমবার ঘোষণা করা হবে।বিশ্লেষকদের মতে, চলতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে জাতীয় ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। বন্দি করা হয় গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি ও তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) বিভিন্ন স্তরের কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে।অভ্যুত্থানের পর ৭৬ বছর বয়সী গৃহবন্দি সু চির বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দায়ের করে ক্ষমতাসীন সামরিক সরকার। মামলাগুলো যেসব অভিযোগে করা হয়েছে তার মধ্যে, রাষ্ট্রের গোপন তথ্য পাচার, নিয়ম বহির্ভূতভাবে ওয়াকি টকি রাখা ও ব্যবহার, ক্ষমতায় থাকাকালে ঘুষ গ্রহণ, নিজের দাতব্য সংস্থার নামে অবৈধভাবে ভূমি অধিগ্রহণ ও করোনা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ায় গাফিলতিসহ উত্তেজনা সৃষ্টি এবং কোভিড-১৯ প্রোটোকল লঙ্ঘনের মাধ্যমে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন ভাঙার বিষয়টি রয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতাচ্যুত হলেও মূলত গত জুন থেকে রাজধানী নেইপিদোর বিশেষ সামরিক আদালতে এসব মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। রয়টার্স বলছে, এসব মামলায় সু চির সর্বোচ্চ শাস্তি হলে মোট কারাদণ্ডের মেয়াদ ১০০ বছর ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি এবং দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট তাদের বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।৭৬ বছর বয়সী সু চির সমর্থকরা বলছেন, তাদের নেত্রীর বিরুদ্ধে জান্তা সরকারের দায়ের করা এসব মামলা ভিত্তিহীন। তাদের অভিযোগ, সু চির রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস করতেই এসব মামলা দায়ের করা হয়েছে।অবশ্য মিয়ানমারের জান্তা সরকার বলছে, সু চির প্রশাসনের নিয়োগ করা বিচারক এবং স্বাধীন আদালতে সুষ্ঠু কার্যবিধি মেনেই এই বিচার কার্যক্রম চলছে।