সৌদি থেকে নিঃস্ব হয়ে ফিরলেন আরও ১২৫ বাংলাদেশি

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: বছরজুড়েই খালি হাতে নিঃস্ব হয়ে সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশি শ্রমিকরা ফিরছেন। নিয়মিত বিরতিতে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর হতাশা আর চাপা ক্ষোভে ডুবেছে।

তবে নভেম্বর মাসের প্রথম দিন থেকেই প্রবাসীকর্মীদের ফেরার সংখ্যাটি আশঙ্কাজনক।

সেই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার রাতে আরও ১২৫ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন।

রাত ১১টা ২০ মিনিটে সৌদি এয়ারলাইনসের এসভি ৮০৪ বিমানযোগে দেশে ফেরেন তারা। এ নিয়ে নভেম্বর মাসের তিন সপ্তাহে মোট ২ হাজার ৬১৫ বাংলাদেশি দেশে ফিরলেন।

এর আগে গত ৫ অক্টোবর ১২০ জন, ২৭ অক্টোবর ১৬০ এবং ৩১ অক্টোবর ১৫৩ বাংলাদেশিকর্মী ফিরেছেন।

চলতি বছরের ১০ মাসে সৌদি আরব থেকে ২১ হাজার বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন বলে জানিয়েছেন বিমানবন্দরের প্রবাসীকল্যাণ ডেস্ক।

এ পরিসংখ্যানে গতকাল যুক্ত হলো আরও ১২৫ জন।

এসব প্রবাসী বাংলাদেশিকর্মী সবাই ফিরেছেন, একেবারে খালি হাতে, নিঃস্ব হয়ে। অনেকের গায়ে ছিল কোম্পানির পোশাক, কারও পায়ে ছিল না স্যান্ডেলও। অনেকে পুরনো পোশাক ছাড়া সঙ্গে করে আর কোনো কাপড় আনতে পারেননি।

সৌদি আরবের রাস্তায়, দোকানে ধরপাকড়ে পরে এসব বাংলাদেশি শ্রমিক এক কাপড়েই দেশে ফিরেছেন। ইকামা (সৌদি আরবের রেসিডেন্স পারমিট) বৈধরাও এ ধরপাকড় অভিযানে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে দেশে ফিরছেন।

গতকাল বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে নিজের দুদর্শার কথা জানালেন কুমিল্লার নন্দন কুমার।

তিনি বলেন, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ইকামা (কাজের অনুমতি) নবায়ন করতে সাড়ে ৬ হাজার রিয়াল দিই কফিলকে (নিয়োগকর্তা)। এরই মধ্যে পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে। আমাকে ছাড়িয়ে নিতে কফিলকে ফোন করি। কিন্তু কফিল সে ফোনে সাড়া দেয়নি। তাই পুলিশ শূন্য হাতেই দেশে পাঠিয়ে দিলো আমাকে। কিছুই তো সঙ্গে আনতে পারলাম না। ৬ হাজার রিয়ালও গেল। আমি এখন নিঃস্ব।

নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজারের আফজাল (২৬) মাত্র আড়াই মাস আগে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা খরচ করে সৌদি আরব গিয়েছিলেন।

বাজার করতে বাসা থেকে বের হলে তাকে আটক করে সৌদি পুলিশ। সঙ্গে ইকামা ছিল না তখন। বাসায় ইকামা আছে বলে বারবার জানালেও পুলিশ তার কথায় কান দেয়নি। পথ থেকে ধরেই দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয় তাকে।

তিনি বলেন, যত টাকা খরচ করে গিয়েছিলাম সেটাও যদি কামাই করতে পারতাম তো সান্তনা দিতে পারতাম মনকে।

একইরকম অভিযোগ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কামরুলের। ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা খরচ করে আড়াই মাস আগে সৌদিতে গিয়েছিলেন তিনি। আবজালের মতোই ধড়পাকড়ের শিকার হয়ে খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাকে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কামরুলই নন, একই পরিস্থিতির শিকার হয়ে দেশে ফিরেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মন্টু মিয়া, সাইদুল ইসলাম, নরসিংদির নাইম, হবিগঞ্জের ফারুক হোসেন ও ঢাকার সাইফুল ইসলাম।

তাদের অধিকাংশেরই অভিযোগ, ইকামা বা কাজের অনুমতি তৈরির জন্য কফিলকে টাকা দেয়া হলেও কফিল ইকামা করে দেননি। পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলে চোখ উল্টে নিয়েছেন তাদের কফিলরা। কর্মীদের দায়দায়িত্ব না নিয়ে উল্টো তাদের ভিসা বাতিল করে দেশে পাঠিয়ে দিতে বলছেন কফিলরা।

বরাবরের মতো গতকাল ফেরত আসাদেরও প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কের সহযোগিতায় ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম থেকে খাবার-পানিসহ নিরাপদে বাড়ি পৌঁছানোর জন্য জরুরি সহায়তা প্রদান করা হয়।

ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ‘চলতি বছর এখন পর্যন্ত ২২ হাজার বাংলাদেশিকে সৌদি আরব থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। চলতি মাসের তিন সপ্তাহে ফিরলেন ২ হাজার ৬১৫ জন। প্রায় সবাই খালি হাতে ফিরেছেন। যারা কয়েক মাস আগে গিয়েছিলেন, তাদের কেউই খরচের টাকা তুলতে পারেননি। এরা সবাই নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ।’

তিন দিন পর সৌদি আরবের সঙ্গে অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশের যৌথ বৈঠকে নারী কর্মীদের পাশাপাশি পুরুষদের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হবে। ফ্রি ভিসার নামে প্রতারণা বন্ধ করতে কাজ করতে হবে দুই দেশকে।’

Advertisement