হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা মামলার রায় ২৭ নভেম্বর

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: গুলশানে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় দায়ের করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আগামী ২৭ নভেম্বর। আজ রবিবার রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান রায়ের তারিখ ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে রায়ের দিন সব আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

গত ৭ নভেম্বর আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ করা হয়। অপরদিকে আসামি পক্ষে গত কয়েকটি তারিখে যুক্তিতর্ক করেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। রবিবার আসামিদের পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হয়। আসামিদের নির্দোষ দাবি করে তাদের বেকসুর খালাস দাবি করা হয় আসামি পক্ষে।

এই মামলায় ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। গত বছর ২৬ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহতম জঙ্গি হামলার মামলার বিচার শুরু হয়।

গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় আটজনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয় গত বছর ২৩ জুলাই। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দাখিল করেন। সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ (সংশোধনী ২০১৩) এর ৬(২)/৭/৮/৯/১০/১২/১৩ ধারায় আসামিদের বিচারের ব্যবস্থা করতে এই চার্জশিট দেওয়া হয়। এই ধরায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।

অভিযুক্ত আট আসামি হলো গাইবান্ধার জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, নওগাঁর আসলাম হোসেন ওরফে আসলামুল ইসলাম ওরফে রাশেদ ওরফে র‌্যাশ, কুষ্টিয়ার আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ, জয়পুর হাটের হাদীসুর রহমান ওরফে সাগর, চাপাইনবাবগঞ্জের মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, বগুড়ার রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান, বগুড়ার মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন ও রাজশাহীর শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ। মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন ও শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ পলাতক রয়েছে। অন্য ছয়জন কারাগারে আছে। অভিযুক্ত সবাই নব্য জেএমবির সক্রিয় সদস্য বলে চার্জশিটে বলা হয়েছে।

আটজনকে অভিযুক্ত করা হলেও হলি আর্টিজানের ঘটনার সঙ্গে ২১ জঙ্গির জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচজন ঘটনার সময় ঘটনাস্থলেই আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নিহত হন। হলি আর্টিজানে জিম্মি সাধারণ মানুষদের উদ্ধারের সময় সেনাবাহনিীর কমান্ডোদের অভিযানে তারা নিহত হন।

এরা হলো ঢাকার রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল। এই পাঁচজনই সরাসরি হলি আর্জিজানে প্রবেশ করে গ্রাহকদের জিম্মি করে ও জিম্মিদের নৃশংসভাবে হত্যা করে।

এ ছাড়া জেএমবির প্রধান সমন্বয়কারী তামিম চৌধুরী, সারোয়ার জাহান, তানভীর কাদেরী, নুরুল ইসলাম মারজান, বাশারুজ্জামান, মেজর জাহিদুল ইসলাম, রায়হানুল কবির রায়হান ওরফে তানভীর ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোটো মিজানও হলি আর্টিজান হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে তদন্তে পাওয়া যায়। এই আটজন বিভিন্ন সময়ে জঙ্গি বিরোধী অভিযানে নিহত হয় বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে। মোট ১৩ জন নিহত হওয়ায় তাদের চার্জশিট থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত পৌনে নয়টার সময় হলি আর্টিজান বেকারিতে অতর্কিতে আক্রমন করে পাঁচ জঙ্গি। তারা ভেতরে থাকা সবাইকে জিম্মি করে। একে একে গুলি চালিয়ে, কুপিয়ে ১৭ বিদেশি ও তিনজন বাংলাদেশিকে হত্যা করে। সেখানে তাৎক্ষণিক অভিযান চালাতে যায় র‌্যাব ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। অভিযানকারীদের দিকে বোমা হামলা চালায় ওই পাঁচ জঙ্গি। এতে দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। আহত হন র‌্যাব-১ এর তৎকালীন অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মাসুদ, পুলিশের গুলশান অঞ্চলের অতিরিক্ত উপ কমিশনার আবদুল আহাদসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য।

Advertisement