হামিদ মোহাম্মদ সাহিত্য চর্চাসহ সৃজনশীলধারায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।

ব্রিটবাংলা রিপোর্ট:আজকাল কেউ কোথাও সন্তুষ্ট নয়। সাংবাদিক, কবি, ব্যবসায়ী ও শিক্ষক সবাই এমপি-মন্ত্রী হতে চায়।

সবাই রাজনীতি করতে চায়। উচিত হলো নিজ নিজ ক্ষেত্রে নিজেদের উতকর্ষ সাধনে সচেষ্ট থাকা।

হামিদ মোহাম্মদ সাহিত্য চর্চাসহ সৃজনশীল ধারায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।

ছান্দসিক আয়োজিত কবি সাংবাদিক হামিদ মোহাম্মদের জন্মদিনের আড্ডায় এ কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক শামীম রেজা।

আর উপস্থিত অন্যান্য সুধীজনরা শুভেচ্ছা বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, হামিদ মোহাম্মদক একজন সত্যিকারের বন্ধু, আজন্ম রসিক মানুষ। ছান্দসিক তাঁকে সঠিকভাবেই একজন ‘সাহিত্যসখা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

তাঁরা বলেন, নির্মল মনের মানুষ হামিদ মোহাম্মদ প্রগতিশীল চিন্তা চেতনার সাংস্কৃতিক সংগঠকই শুধু নন, সৃজনশীল কাজে একনিষ্ঠ ও প্রগতিশীল আদর্শে আপসহীন কর্মী।

৩০ জুলাই পূর্ব লন্ডনের কবি নজরুল সেন্টারে আবৃত্তি সংগঠন ছান্দসিক হামিদ মোহাম্মদের জন্মদিনে এক আনন্দ আড্ডার আয়োজন করে।

কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী ও সুধীজনের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠাননে জেগে উঠে প্রাণের উচ্ছাস। কবি ময়নুর রহমান বাবুলের উপস্থাপনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য ছাড়াও কবি হামিদ মোহাম্মদের কবিতা আবৃত্তি করেন ছান্দসিকের আবৃত্তি শিল্পীরা।

উদীয়মান শিল্পী নাসিমা কুইন গান এবং হেদায়েত মৌলা বাঁশি বাজিয়ে অনুষ্ঠানকে মাতিয়ে তুলেন।

জন্মদিনে এই ভিন্নমাত্রার আড্ডায় হামিদ মোহাম্মদের দীর্ঘায়ূ কামনা করেন বক্তারা। শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন কবি গোলাম কবির, সাংবাদিক আবু মুসা হাসান, উদীচীর কেন্দ্রীয় সহসভাপতি রফিকুল হাসান খান জিন্নাহ, সাংবাদিক ইসহাক কাজল, সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল আহমেদ, বাংলাপোস্ট‘র সম্পাদক ব্যারিস্টার তারেক চৌধুরী, সাংবাদিক নীলুফা ইয়াসমীন, রাজনীতিক গয়াছুর রহমান গয়াছ, সাংস্কৃতিক নেতা সৈয়দ এনামুল ইসলাম, কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক নেসার আহমেদ, ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির আনসার আহমদউল্লাহ, কবি লিটন রহমান, গবেষক ফারুক আহমেদ, যুবলীগ নেতা জামাল খান, কবি শাহনাজ সুলতানা, কবি আনোয়ারুল ইসলাম অভি, কবি মাজেদ বিশ্বাস, সাংবাদিক জুয়েল রাজ, প্রথম আলোর যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি তবারুকুল ইসলাম, কবি হেলাল সাইফ, বাংলা টিভির রিপোর্টার রুহুল আমিন, আমিনুল হক জিল্লু, আমিনুর রহমান খান ও লুটন থেকে জামিল সুলতানসহ আরো অনেকে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কবিপত্মী রেবা আক্তার চৌধুরী। তনয় সৈকত হামিদ রনি।

দীর্ঘ ৩৪ বছরের সংসার জীবনে কবির শত পাগলামি, যন্ত্রনা মেনে নেয়ার জন্য কবিপতœীকেও অশেষ ধন্যবাদ জানান বক্তারা। সৈয়দ এনামুল ইসলাম আলোচনায় অংশ নিয়ে হামিদ মোহাম্মদের সাহিত্যকর্মের বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেন, সাহিত্যসখা হিসেবে হামিদ মোহাম্মদ একজন গুণী, মননশীল কবি, লেখক ও সাংবাদিক। তিনি কবি মুজিব ইরমের কাব্যসমগ্র নিয়ে গবেষণাধর্মী একটি বই লিখছেন-যা বিলেত বাংলা’য় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে।

এই কাজটি শুধু প্রশংসার নয়; একটি প্রয়োজনীয় কাজও। সাংবাদিক আবু মুসা হাসান রসঘন বক্তব্যে বলেন, সকালে ছিলাম বন্ধুর এক বছর বয়সী সন্তানের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে। আর এখন এসেছি বয়স্ক বন্ধু ৬২ বয়সের হামিদ মোহাম্মদের জন্মদিনে। ট্রেনে বসে শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি কবিতা লিখেছি। কবিতা কতটুকু হয়েছে তা জানিনা। তবে মনের আবেগটাই প্রকাশ করতে চেষ্টা করেছি। বক্তব্যের পর কবিতাটি পড়ে শোনান মুনিরা পারভিন।

সাংবাদিক ইসহাক কাজল স্মৃতিচারণ করে বলেন, ১৯৭৭/৭৮ সালে হামিদ মোহাম্মদ যুগভেরীতে কাজ করতেন। আমি নিউজ লিখে নিয়ে যেতাম যুগভেরীতে ছাপার জন্যে। তখন থেকেই আমার ঘনিষ্টজন তিনি। সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল আহমেদ হামিদ মোহাম্মদকে একজন ‘জন্ম রোমান্টিক’ কবি হিসেবে মন্তব্য করেন। কবি গোলাম কবিরও ১৯৬৪/৬৫ সালে যুগভেরীতে কাজ করার স্মৃতিচারণ করে বলেন, হামিদ মোহাম্মদের সাথে তাঁর পরিচয় লন্ডনেই। মননশীল প্রগতিবাদী লেখক হামিদ মোহাম্মদের কবিতা তিনি মনোযোগ দিয়ে পড়েন বলে জানান।

ব্যারিস্টার তারেক চৌধুরী বাংলাপোষ্ট পত্রিকায় কিছু দিনের জন্য হামিদ মোহাম্মদকে সহকর্মী হিসেবে পাওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, আমি তার লেখা পড়ে মুগ্ধ হই। তিন একজন ভালোবন্ধুও। প্রথম আলোর যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি তবারুকুল ইসলাম তুলে ধরলেন হামিদ মোহাম্মদের রসবোধের কথা। তিনি বলেন, হামিদ মোহাম্মদের সাথে তাঁর বয়সের পার্থক্য অনেক। কিন্তু তবুও তাঁরা ভাল বন্ধু।

হামিদ মোহাম্মদ এমন একজন মানুষ যার সাথে বয়সের সীমারেখা ভুলে স্বাচ্ছন্দ্যে প্রেমের গল্প করা যায়। একসাথে বসে গান শোনা যায়। বয়সের পার্থক্যের কারণে গানের পছন্দ নিয়ে কোনো বিরোধ বাধে না। অথচ সমবয়সী বন্ধুদের সাথে গান শুনতে গেলেও প্রায় গোলমাল বেধে যায়। হামিদ মোহাম্মদ যাতে আমৃত্যু তাঁর এই তারুণ্য ধরে রাখেন সেই কামনা করেন তবারুক। সাংবাদিক জুয়েল রাজ বলেন, হামিদ মোহাম্মদ ভাইয়ের সাথে আমার মতাদর্শগত মিল থাকায় তার কাছাকাছি হতে সময় লাগেনি। তিনি আমার একজন প্রিয় মানুষ। আড্ডায় সুধীজনের বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে চলে কবিতা আবৃত্তি।

হামিদ মোহাম্মদের লেখা কবিতা আবৃত্তি করেন নন্দিত বাচিক শিল্পী মুনিরা পারভীন, কবি গোলাম কবির, গণজাগরণমঞ্চ নেত্রী অজন্তা দেব রায়, নজরুল ইসলাম অকিব, তাহেরা চৌধুরী লিপি, শতরূপা চৌধুরী ও ক্ষুদে আবৃত্তিকার আফরা খন্দকার নিধি। এছাড়া কবি টি এম আহমেদ কায়সারের শুভেচ্ছা লেখা পড়ে শোনান কবি আনোয়ারুল ইসলাম অভি, কবি নুরুজ্জামান মনির শুভেচ্ছা কবিতা পড়েন জামিল সুলতান। কবি মুজিব ইরমের পাঠানো একটি অনিন্দ্য শুভেচ্ছা কবিতাও পাঠ করা হয়। আড্ডার শুরুতেই হামিদ মোহাম্মদের জীবন কথা পড়ে শোনান সাপ্তাহিক পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার সারওয়ার কবির।

রঙিন বেলুন দিয়ে সাজিয়ে তোলা বর্ণিল হলরুমে ফুলেল শুভেচ্ছা ছিল উচ্ছ্বল ও প্রাণবন্ত। এছাড়া লেখকের প্রকাশিত ১১টি বইয়ের প্রচ্ছদচিত্র, বইয়ের তালিকার মনোজ্ঞ চিত্রকর্ম ও আলোকচিত্র দেয়ালে প্রদর্শিত হয়। ‘যতদিন বাঁচো মুক্ত হয়ে বাঁচো’ এই মন্ত্র সম্বলিত ব্যানারের বক্তব্যের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে কবির দীর্ঘ জীবন কামনার পর নিধির বাজি ফোটানো, আবু মুসা হাসানের উচ্চস্বরে শিস আর সময় সময় সম্মিলিত করতালি ছিল লক্ষ্যনীয়।

এ আড্ডার সর্বশেষ আয়োজন ছিল কেক কাটা। আগত সূধীজনদের সবাই সামিল হন এতে। সব শেষে আড্ডায় উপস্থিত সুধীজনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ছান্দসিকের প্রধান সংগঠক মুনিরা পারভীন। এছাড়া কবি হামিদ মোহাম্মদ জন্মদিনের আড্ডা আয়োজনের জন্যে ছান্দসিকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এবং আবেগঘন ভাষায় বলেন, আমি সকলের ভালোবাসায় সিক্ত। আমি সকলের বন্ধু হয়ে থাকতে চাই।

ACB#17

Advertisement