হেফাজতকে নিষিদ্ধের দাবিতে ৫৫১ আলেমের বিবৃতি

রাষ্ট্রবিরোধী উসকানি ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য এবং সহিংসতার মাধ্যমে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দায়ে হেফাজতে ইসলামকে ‘উগ্র জঙ্গি সংগঠন’ ঘোষণা দিয়ে এর কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে সুন্নীয়তপন্থী সংগঠন ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত বাংলাদেশ’-এর শীর্ষ ৫৫১ আলেম।তাদের মতে, রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের উচ্চাভিলাস থেকে দেশজুড়ে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড এবং মানবিক বিয়ে বা চুক্তিভিত্তিক বিয়ের নামে জঘন্য অপরাধ ঢাকতে হেফাজত ইসলামের মৌলিক বিধিবিধানের ওপর হস্তক্ষেপ করছে। তাদের এমন কর্মকাণ্ডে দেশের আলেম সমাজ লজ্জিত।আজ শনিবার (২৪ এপ্রিল) সকালে আহলে সুন্নাতে ওয়াল জামাআতের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়।বিবৃতিতে বলা হয়, ইসলামে নারী-পুরুষে বন্ধনের বৈধ পন্থা হল বিয়ে। আল্লাহ বিয়েকে হালাল করেছেন বিপরীতে যিনা-ব্যভিচারসহ বিবাহ বহির্ভূত সব অবৈধ মেলামেশাকে নিষিদ্ধ করেছেন। নিকাহের বিপরীতে চুক্তিভিত্তিক সাময়িক যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা সম্পূর্ণ হারাম ও ইসলামের দৃষ্টিতে তা শান্তিমূলক অপরাধ।

আলেমরা বলেন, বর্তমানে ইসলাম রক্ষার কথা বলে হেফাজতের কিছু চিহ্নিত দায়িত্বশীল নেতা হাজার বছর ধরে প্রচলিত ইসলামের মৌলিক বিধানের ওপর হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে। হেফাজতের তথাকথিত দায়িত্বশীল মূলত নিজের কৃত জঘন্য অপরাধ ঢাকতেই ইসলামকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। কখনো মানবিক বিয়ে বা কখনো চুক্তিভিত্তিক বিয়ের কথা বলে নিজেকে রক্ষা করতে চাইলেও সবকিছু বিবেচনা ও পর্যবেক্ষণ করে শরিয়াহ ফয়সালা হল, ইসলামে চুক্তিভিত্তিক বিয়ে হারাম। সুতরাং যে বা যারা এ ধরণের কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকবে; তাদের পাথর নিক্ষেপ করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিষয়ে ইসলামে ফয়সালা দেওয়া হয়েছে।আহলে সুন্নাতের নেতারা আরো বলেন, এভাবে ইসলামের নামে সামাজিক অনাচারে যুক্ত হওয়াসহ রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করা, জানমালের ক্ষতিসাধন করাও ইসলাম সমর্থন করে না। এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তি বা সংগঠনের কাছে দেশ কখনো নিরাপদ নয়। ২০১০ সালে হেফাজতের জন্মের পর হতেই তারা সহিংসতা ছড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের সঙ্গে ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের দূরতম সম্পর্কও নেই। ইসলাম হেফাজতের নামে উগ্র হেফাজতিদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের উচ্চাবিলাস ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে গোটা আলেম সমাজ আজ লজ্জিত।বিবৃতিতে আহলে সুন্নাতের নেতারা হেফাজতকে উগ্র জঙ্গি সংগঠন আখ্যায়িত করে নিষিদ্ধ করার দাবি জানান।

আহলে সুন্নাত ওয়াল জমাআত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান শাইখুল হাদিস কাজী মুহাম্মদ মুঈনুদ্দীন আশরাফী ও মহাসচিব সৈয়দ মছিহুদ্দৌলাহ স্বাক্ষরিত যুক্ত বিবৃতিতে আরও স্বাক্ষর করেনছে— অধ্যক্ষ মুফতি সৈয়দ অছিয়র রহমান, শাইখুল হাদিস সোলাইমান আনসারী, অধ্যক্ষ মুফতি আব্দুল বারী জিহাদি, এম এ মান্নান, অধ্যক্ষ নুরুল আলম হেজাজী, কাজী আব্দুল ওয়াজেদ, এম এ মতিন, অধ্যক্ষ মুফতি কাজী হারুনুর রশীদ, শাইখুল হাদিস আশরাফুজ্জমান কাদেরি, অধ্যক্ষ স উ ম আবদুস সামাদ, অধ্যক্ষ মুখতার আহমদ, শাইখুল হাদিস ড. আফজাল হোসাইন, অধ্যক্ষ আব্দুল আলিম রেজভী, অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান, অধ্যক্ষ মুফতি আহমদ হোসাইন কাদেরী, উপাধ্যক্ষ মুফতি আবুল কাশেম ফজলুল হক, উপাধ্যক্ষ মুফতি ড. লিয়াকত আলী, ছাদেকুর রহমান হাশেমী, উপাধ্যক্ষ মুফতি জুলফিকার আলী চৌধুরি, অধ্যক্ষ মুফতি আবু বকর ছিদ্দিকীসহ আহলে সুন্নাতের দায়িত্বশীল ৫৫১ জন আলেম।

উল্লেখ্য, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে গত ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্নস্থানে পুলিশের সঙ্গে হেফাজতের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ১৭ জনের মৃত্যু হয়। দেশের বিভিন্নস্থানে সহিংসতায় হতাহত, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় তাণ্ডবের পর হেফাজতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যায় সরকার। এরই মধ্যে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ শীর্ষ নেতাদের অনেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে।

Advertisement