হেফাজত মহাসচিব নুরুল ইসলাম আর নেই

চলে গেলেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী। আজ সকালে রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নুরুল ইসলাম জিহাদীর ছেলে খালেদ বিন নূর।শনিবার রাত ৯টার দিকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে নুরুল ইসলাম জিহাদীকে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত ১টার দিকে অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়।নুরুল ইসলাম জিহাদীর পুত্র মোর্শেদ বিন নূর জানিয়েছিলেন, হেফাজতের শনিবারের ওলামা মাশায়েখ সম্মেলন বাস্তবায়নে গত কয়েকদিন ধরেই তিনি কর্মব্যস্ত ছিলেন। রাতেও ঠিকমতো ঘুমাতে পারেননি। সম্মেলন শেষে মাদরাসায় ফেরার পথে গাড়ির মধ্যেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।এদিকে তাৎক্ষণিকভাবে নুরুল ইসলাম জিহাদীর জানাজা ও দাফনের সময়সূচির বিষয় জানা যায়নি।মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি থানাধীন ধুরুং গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আব্দুর রশীদ।প্রাথমিক জীবনে নাজিরহাট বড় মাদ্রাসায় তিনি কুরআনের হেফজ (মুখস্থ) সম্পন্ন করেন। হেফজ সমাপ্তির পর একই মাদ্রাসায় হেদায়াতুন্নাহু জামাত (মাধ্যমিক) পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। অতঃপর উচ্চতর শিক্ষার উদ্দেশ্যে তিনি দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ১৯৭৪ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) সমাপ্ত করেন।

শিক্ষাজীবন সমাপ্তির পর পটিয়া থানাধীন কৈয়গ্রাম মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার কর্মজীবনের সূচনা হয়। উক্ত মাদ্রাসায় এক বৎসর শিক্ষকতার পর বাবুনগর মাদ্রাসায় আহুত হলে সেখানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত হন। বাবুনগর মাদ্রাসায় কয়েক বৎসর অধ্যাপনার পর ঢাকার আশরাফুল উলুম বড় কাটারা মাদ্রাসায় ১৯৮২ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন। এসময়ে তার পিতার মৃত্যুবরণের পর তিনি নিজ বাড়িতে চলে যান ও পুনরায় বাবুনগর মাদ্রাসায় যোগদান করেন। ১৯৮৪ সালের ১০ জুলাই তিনি ঢাকা জেলার অন্তর্গত খিলগাঁও-এ আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম প্রতিষ্ঠা করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই মাদ্রাসার মহাপরিচালক ও শায়খুল হাদিস হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।পাশাপাশি তিনি দারুল উলুম হাটহাজারীর মজলিসে শুরা এবং বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা ও আমেলার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৮ সালে ইসলাম বিদ্বেষীদের প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে তিনি “ইসলামী আন্দোলন পরিষদ” নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার করেছিলেন। তিনি দীর্ঘ সময় ছিদ্দিক আহমদের সাহচর্যে ছিলেন। কাদিয়ানী বিরােধী আন্দোলন ও খতমে নবুয়ত আন্দোলনকে বেগবান করার লক্ষ্যে ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত “আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশ”র তিনি মহাসচিব। ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব নির্বাচিত হন।

Advertisement