ব্রিটবাংলা ডেস্ক : ইউকের হোম অফিসের ভুলের কারণে ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যে বৈধভাবে বিলেতে এসেও শেষ পর্যন্ত যৌন অপরাধী হয়ে দেশে ফিরতে হচ্ছে বাংলাদেশী শেফ সাইফুল ইসলামকে। যদিও ভুলের খেসারত হিসেবে হোম অফিস দু:খ প্রকাশের পাশাপাশি ৫ হাজার পাউন্ড ক্ষতিপুরণ দিয়েছে কিন্তু সাইফুল ইসলামকে ইউকেতে অবস্থানের অনুমতি দিচ্ছে না কোর্ট। গত ২০ ডিসেম্বর কোর্ট সাইফুল ইসলামের ইউকেতে অবস্থানের আবেদন খারিজ করে দেয়।
জানা গেছে, ৪৪ বছর বয়সী শেফ সাইফুল ইসলাম একটি রেষ্টেুরেন্টের কাজের বৈধ পারমিট নিয়ে ২০০৩ সালে বৃটেনে আসেন। তার বিরুদ্ধে কোন অপরাধের অভিযোগ ছিল না। কিন্তু রেষ্টুরেন্টের মালিক তার ভেতন আটকে রাখার পাশাপাশি দিনে অন্তত ১৮ ঘন্টার বেশি কাজ করার জন্যে চাপ দিতে থাকে। এ জন্যে তাকে নির্যাতনও সইতে হয়েছে। এই অবস্থায় ২০০৫ সালে পুলিশ এবং হোম অফিসকে বিষয়টি অবহিত করেন তিনি। হোম অফিস তাকে ভিন্ন মালিকের অধিনে কাজ করার সুযোগ দিলেও ফাঁসিয়ে দেয় অন্য জায়গায়। ভুল একটি অভিযোগে জড়িতের তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর হুমকি দেয় হোম অফিস।
আদালত জানিয়েছে, অন্য তিন জন যৌন অপরাধীর ফাইলের সঙ্গে শেফ সাইফুল ইসলামের ফাইলের মিশ্রণ ঘটিয়ে তাকে যৌন অপরাধী বানিয়ে ২০০৫ সালে তার ভিসার মেয়াদ কমিয়ে ফেলে হোম অফিস। যদিও প্রথম থেকেই সাইফুল ইসলাম হোম অফিসের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা এবং তার ইউকেতে কাজের এবং থাকার বৈধ কাগজপত্র আছে, তা আদালতে প্রমাণের জন্যে গত এক দশক ধরে চেষ্টা করে আসছেন তিনি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের আমল থেকে সাইফুল ইসলামের মামলাটি শুরু হয়েছিল। ৬টি সরকারের আমলে ১৮ বার কোটে উঠেও সাইফুল ইসলামকে দোষি প্রমাণ করতে পারেনি হোম অফিস। ২০০৫ সালে অন্য তিন অপরাধীর অপরাধের সঙ্গে সাইফুল ইসলামকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করলেও ২০১০ সাল পর্যন্ত তার পাসপোর্টের পুরো কপি উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয় হোম অফিস। তারপরেও জোরপূর্বক স্বদেশে ফেরত পাঠানোর হোম অফিসের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনী লড়াই চালিয়ে গেছেন সাইফুল ইসলাম। সর্বশেষ ২০১৮ সালে তার বিরুদ্ধে আনিত যৌন অপরাধের মামলাটি ইতি টানার নির্দেশ দেয় আদালত। যদিও ২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর কোর্ট সাইফুল ইসলামের ইউকেতে বসবাসের অধিকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে হোম অফিস একটি ইমেইলে, ভুল বশত তাকে যৌন অপরাধী হিসেবে তালিকাভুক্ত করায় ক্ষমা প্রার্থনা করে। পুলিশের কম্পিউটারে সাইফুলের ফাইল অন্য অপরাধীদের ফাইলের সঙ্গে মিশে যাওয়ায় এই অবস্থা হয়েছে বলে ইমেইলে স্বীকার করেছে হোম অফিস।
এদিকে সাইফুল ইসলাম বলেছেন, হোম অফিস এতোদিন তার সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করেছে। হোম অফিসের এই বৈষম্যমূলক আচরণের ফলে তার সময়, স্বাস্থ্য, অর্থ সব বিনষ্ট হয়েছে।