অদূর ভষ্যিতে বিএনপি কি “ঐক্যফ্রন্ট- বিএনপি” নামে আত্মপ্রকাশ করবে?

দেওয়ান ফয়সল

এই নির্বাচনের বাতাস বৃটেনেও জেরেশোরে বইতে শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি সহ অন্যান্য দলের পক্ষের লোকজন বৃটেনের বিভিন্ন জয়গায় সভা সামাবেশ করে তাদের দলের প্রার্থীদের র্ন্বিাচনে জয়লাভ করানোর জন্য দেশের স্ব স্ব সংগঠনগুলোর সাথে সমন্বয় রক্ষা করে যাচ্ছেন।

অবশ্য এটা শুধু এবারের নির্বাচনই নয়, প্রতিটি নির্বাচনেই এরকম দেখা গেছে।
এখন পর্য্যন্ত দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলই নির্বাচনে অংশ গ্রহণের জন্য বেশ তৎপর।

একক ভাবেই হোক আর জোটের সঙ্গে মিলেই হোক তারা নির্বাচন করতে চায়। সবাই মিলে যদি শান্তিপূর্ণ ভাবে এই নির্বাচনটা করতে পারে তাহলে দেশের জন্য যেমন মঙ্গল হবে, তেমনি বিদেশীদের কাছেও রাজনীতিবিদের সম্মান যেমন বাড়বে তেমনি বাংলাদেশের মূল্যায়ন আরও বাড়বে।

কিন্তু কথা হচ্ছে শেষ পর্য্যন্ত কি নির্বাচনের এই ধারা অব্যাহত থাকবে? তবে বর্তমানে বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান দেখে এবং খবরা খবর পড়ে আমার একটা সন্দেহ হচ্ছে, নির্বাচনে তারা অংশ গ্রহণ করবে ঠিকই কিন্তু নির্বচনের আগের দিন অথবা নির্বাচনের দিন একটা গন্ডগোল বাঁধিয়ে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করা হতে পারে।

কারণ, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নাম করে যেসব গণতন্ত্রহীন রাজনীবিদরা মিলে যে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছেন, তাদের পেছনের শক্তিগুলোই হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-বিরোধী দলগুলো। তাদের নেতৃত্বে রয়েছেন ড; কামাল হোসেন।

বাংলাদেশের মানুষ এখন দেখতে পাচ্ছে যে, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে এবার তারা সামনের কাতারে এসে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করছেন। এবারের নির্বাচনে এসব দলের গন্ডগোল লাগানোর বা নির্বাচন বানচাল করার একটা বড় সুবিধা হলো, আওয়ামী লীগ, জাসদ. ন্যাপ ইত্যাদি দলগুলো সহ অন্যান্য ছোটখাটো দল নিয়ে যে ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছে, বিএনপি -জামাত এদের দিয়েই বিভিন্ন ধরণের ঘটনা ঘটাবে।

এছাড়া তাদের আরও বাড়তি সুবিধা হলো , যারা আওয়ামী লীগ ছেড়ে যুক্তফ্রন্ট-এ গিয়ে যোগ দিয়েছেন তারা এখন মুজিব কোট পরে “জয় বঙ্গবন্ধু, জয় ধানের শীষ” শ্লোগান ব্যবহার করছেন। সুতরাং এসব শ্লোগানধারীদের তারা ব্যবহার করবে, যার ফলে নির্বাচন বানচালের এই ষড়যন্ত্র ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উপর দোষ চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবে, এই কৌশলটা অবলম্বন করতে তারা ভুল করবেনা বলে আমার বিশ্বাস।

সুতরা এব্যাপারে আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীদের চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সুষ্টু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আবার ক্ষমতায় গিয়ে তাঁর অসম্পূর্ণ কাজগুলো বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশকে বাহির্বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর পর্য্যায়ে নিয়ে পৌছাতে।

তবে এর পেছনে বিরাট ষড়যন্ত্র চলছে। এ গোষ্ঠী কোন সময়ই চায়না বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিয়ে বিশ্বের কাছে পরিচিত হয়ে আওয়ামী লীগের সুনাম হোক। তারা এই জিনিষটা বুঝতে চায়না এটা আওয়ামী লীগের সুনামের জন্য নয়, এ কাজ বাংলাদেশের জনগণের জন্য। এই সুবিধগুলো বাংলাদেশের জনগণই ভোগ করবে অর্থাৎ তারাও ভোগ করবে, আরামে আয়েশে দিন কাটাবে।
নির্বাচনের আর মাত্র চার দিন বাকি। প্রত্যেকটি দলের নেতা-কর্মীরা মাঠে তাদের প্রচারাভিযানে ব্যস্ত। ঐক্যফ্রন্ট (বিএনপি,জামাত সহ অন্যান্য দল) মাঠে কাজ করছেন ঠিকই, কিন্তু জনগনের রায় তাদের বিপক্ষে যাবে সন্দেহে তারা এখন থেকেই নির্বাচন বর্জনের র্স্তাা দেখছেন বলে মনে হচ্ছে। নির্বাচনের সময় বিভিন্ন জায়গায় দাঙ্গ-হাঙ্গমা যে কিছু হয় এটা সবারই জানা।

ড: কামাল হোসেন আরও ভলো জানেন। আর এসব ঘটনা শুধু বাংলাদেশেই নয়, ভারত, পাকিস্তানেও নির্বাচনের আগে এসব ঘটনা ঘটে। তাই বলে দেশের স্বার্থে কেউ নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করেনা বরং তারা চেষ্টা করে জনগণের ম্যান্ডেট আদায় করে ক্ষমতায় যাওয়ার। একটা গণতান্ত্রিক দেশে এটাই নিয়ম। কারণ গণতন্ত্রকে যদি রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা মূল্যায়ন না করেন তাহলে আমরা ক্ষমতায় গিয়ে গণতন্ত্র বাস্তবায়ন করবো, এই গণতন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য চিল্লি দিয়ে কোন লাভ হবে? জনগণ কি এটা বোঝেনা আপনারা কোন গণতন্ত্র প্রতিণ্ঠা করবেন?
এদিকে “চট্টলার খবর’ নামক একটি অনলাইন পত্রিকার খবর পড়লাম। খবরটির হুবহু এখানে তুলে ধরছি- “খবরের হেড লাইন হচ্ছে-ভোট বানচালে বাহার এবং ইব্রাহিমের নেতৃত্বে ৫০০ শিবির ক্যাডার”-খবরটি প্রকাশিত হয়েছে ২৪ ডিসেম্বর, ”নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ৫ দিন বাকি। সারা দেশে নির্বাচনী প্রচারণা তুঙ্গে। ভোটাররা ৩০ ডিসেম্বর উৎসবের সঙ্গে ভোট দেওয়ার অপেক্ষা করছেন। এ দিকে গোপন সূত্রে জানা গেছে, প্রচারণায় এখন পর্য্যন্ত জনগণের সমর্থন না পাওয়ায় ভোট বানচালের নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন চট্টগ্রামের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী দুই জন সাবেক সেনা কর্মকর্তার নেতৃত্বে ৫০০ সদস্যের বিশেষ দল তৈরী করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম-২ এবং চট্টগ্রাম-৫ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী আজিম উল্লাহ বাহার এবং সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম সাবেক সেনা কর্মকর্তা। তারা এই বিশেষ দল তৈরীর অগ্রভাবে আছেন বলে জানা গেছে।
আজিম উল্লাহ বাহারের দুই ভাই সাবেক শিবির ক্যাডার। গত ২২ ডিসেম্বর বাহারের দুই ভাই সহ ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা সৈয়দ ইব্রাহিমের নেতৃত্বে গোপন বৈঠক করেন। ঐ বৈঠকেই বিশেষ দলের সদস্যদের বিষয়ে দায়িত্ব এবং ৩০ তারিখ কিভাবে নির্বাচন বানচাল করা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় বলে সূত্র জানিয়েছে। চট্টগ্রাম শিবির ক্যাডারদের মধ্য থেকে বোমা-ককটেল তৈরীতে বিশেষজ্ঞ এবং কমান্ডো স্টাইলে হামলা চালাতে সক্ষম ৫০০ জনকে বাছাই করেন আজিম উল্লাহ বাহারের দুই ভাই।
পরিকল্পনা অনুযায়ী , বোমা বিশেষজ্ঞ ৫০০ শিবির ক্যাডারদের মধ্য থেকে ৩০-৩৫ জন করে নিয়ে একেকটি দল তৈরী করা হবে। চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের জন্য ১৬টি দল তৈরী করা হবে। প্রতি দলে একজন করে দলনেতা থাকবেন। বাকিরা তার নেতৃত্বে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। জানা গেছে, ঐ ১৬ দলের নেতা নির্বাচন করা হয়েছে২০১৩-১৪ সালে বিএনিিপ-জামাতের জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনে সক্রিয়তার ভিত্তিতে।
সূত্র জানায়, ভোটের আগের দিন শিবিরের বিশেষ দল প্রতিটি নির্বাচনী আসনের কেন্দ্রীয় এলাকায় অবস্থান নেবে। পরদিন সকালে ৩০-৩৫ জনের ঐ দল থেকে ৬-৭টি উপদল তৈরী করা হবে। উপদলগুলো ঐ আসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের সাথে মিশে অবস্থান নেবে। এরপর সুযোগ বুঝে অতর্কিতে বোমা হামলা চালিয়ে কেন্দ্র জনশূণ্য করবে। হামলার পরপরই দক্ষ এসব শিবির ক্যাডাররা দ্রুত স্থান ত্যাগ করবে।
বিশেষ দলটির নেতা গোপন স্থান থেকে উপদলগুলোর কাজ সমন্বয় করবেন। প্িরকল্পনা অনুযায়ী প্রতি দলের একজন করে সদস্য হামলার দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করে রাখবেন। এই ভিডিও দ্রুত শিবির এবং বিএনপি –ঐক্যফ্রন্টের পেজে শেয়ার করা হবে। ফলে দ্রত ভোটারদের মধ্যে আতাঙ্ক সৃষ্টি হবে।

এতে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। আর এসব ভিত্তিতেই বলা হবে হামলা হয়েছে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে।
জানা গেছে, এভাবে ভোট বানচাল করে ঐক্যফ্রন্ট বিদেশের কাছে দেখাতে চায় নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি।

জনরায় নিজেদের পক্ষে নয় বুঝতে পেরে এরকম ভয়াবহ হামলার পরিকল্পনা করেছে ঐক্যফ্রন্ট। সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে শিবিরের এই ক্যাডারদের ব্রিফ করছেন সাবেক দুই সেনা কর্মকর্তা আজিম উল্লাহ এবং সৈয়দ ইব্রাহিম।

আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে দ্রুত হামলা করে কিভাবে স্থানত্যাগ করতে হবে এ বিষয়ে শিবির ক্যাডারদের প্রশিক্ষণও দিয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের ঐ দুই প্রার্থী। ”
এছাড়াও আজকের “বাংলাদেশ প্রেস” অনলাইন পত্রিকার এক খবরে পড়লাম, (২৫ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশনের সচিবালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনরের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, দেশের বর্তমান কিছুটা দাঙ্গা-হাঙ্গামার বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য।

এতে নেতৃত্ব দেন ড: কামাল হেসেন আর সঙ্গে ছিলেন, বিএনপি নেতা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা আব্বাস, ড. মঈন খান. গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে সাংবাদিকদের বলেন, “নির্বাচন কমিশনে যারা প্রতিনিধিত্ব করেন, রিটার্নিং অফিসার , পুলিশ, র‌্যাব ও ল এ্যান্ড অর্ডার ফোর্সের যারা আছেন,তাদের যে ভূমিকা , বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর আক্রমন, তাদেরকে আহত করা, তাদেরকে গ্রেফতার করা, পোষ্টার ছিঁড়ে ফেলা, গাড়ি ভেঙ্গে দেয়া-এই পরিস্থিতি যখন আমরা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি, তখন আমরা সেই ধরণের আচরণ পাইনি যে, তিনি এটাতে গুরুত্ব দিচ্ছেন।” “ড: কামাল হোসেন তার বক্তব্যে সিইসির উদ্দ্যেশ্যে বলেন, সিইসি বর্তমানে প্রধান বিচারপতির চেয়েও শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারেন।

আপনি ইচ্ছা করলে জানোয়ার-লাঠিয়াল পুলিশ বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। আপনার এই লঠিয়াল পুলিশ বাহিনী আমাদের মিছিল-মিটিং কিছুই করতে দিচ্ছেনা।” নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে আলাপকালে ড. কামাল হোসেন পুলিশ বাহিনীকে জানোয়ার –লাঠিয়াল বলায় নির্বাচন কমিশনার ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে খবরে উল্লেখ করা হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান সিইসিকে বলেন, নির্বাচনের কোনো পরিবেশ যদি সৃষ্টি করতে না পারেন, তাহলে বলে দেন আমরা আজকেই প্রেস ক্লাবে গিয়ে সংবাদ-সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে দেই।”
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, যে কোনো একটা অজুতে ঐক্যফ্রন্ট এখন নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোর চেষ্টা করছে।

কিন্তু তারপরও আমার মনে হচ্ছে, নির্বাচনে তারা অংশ গ্রহণ করবে এবং উপরের খবর পড়ে আমার মনে হচ্ছে নির্বাচনের দিন একটি অবাঞ্চিত ঘটনা ঘটিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবার চেষ্টা করবে। যদি তাই হয় তাহলে ক্ষতিটা বেশী হবে বিএনপি’রই। কেননা, বিএনপি-জামাতের কৌশলে ঐক্যফ্রন্ট নামে যে দল গঠন করা হয়েছে মূলত: সেই দলের কোন পাবলিক সাপোর্ট নেই। তাই শেষ পর্য্যন্ত বিএনপি রাজনৈতিক অঙ্গনে টিকে থাকার স্বার্থে তার বিএনপি নাম বদল করে যদি ”ঐক্যফ্রন্ট বিএনপি” নামে আত্মপ্রকাশ করে তাহলে বিস্মিত হবার কিছু নেই।

Advertisement