অভিযান কী থেমে গেলো?

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: ক্যাসিনো। বিষয়টি হঠাৎ করেই সামনে নিয়ে আসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাবের অভিযানে জব্দ করা হয় বিপুল টাকা। সঙ্গে অস্ত্র ও মাদক। গ্রেপ্তার করা হয় আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাওয়া যুবলীগ, আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকে। অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছে সাধারণ মানুষ। সেইসঙ্গে অবাক, বিস্ময় ছিলো সীমাহীন। জড়িতদের বাসায়-বাসায় গড়ে তোলা হয়েছিলো নিজস্ব ব্যাংক।

ভল্টে রাখা হতো কোটি কোটি টাকা। টাকার জায়গা সংকুলান না হওয়ায় স্বর্ণ কিনে রাখা হতো। এমনকি বিদেশের ব্যাংকে রাখা হয়েছে বিপুল টাকা। অভিযান- গ্রেপ্তারের ফলে প্রকাশ পেয়েছে এসব তথ্য। গত ১৮ই সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া এই অভিযান হঠাৎ করেই থেমে গেছে। এ পর্যন্ত সর্বশেষ অভিযানটি হয়েছে ফুয়াং ক্লাবে। ২৬শে সেপ্টেম্বর রাতে শুরু হওয়া এই অভিযান শেষ হয় পরদিন ২৭শে সেপ্টেম্বর সকালে। তারপর আর কোনো ক্যাসিনো সংক্রান্ত অভিযান হয়নি।

জনমনে প্রশ্ন জেগেছে, অভিযান কী তাহলে এখানেই থেমে গেলো? যদিও ক্যাসিনোসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িতদের অনেকেই এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

অবশ্য র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছেন, এই অভিযান মুখ থুবড়ে পড়ার কিছু নেই। বিষয়গুলোকে নির্মোহভাবে দেখতে হবে। আমাদের টার্গেট ছিলো ক্যাসিনো থাকবে না। অল ক্যাসিনোজ আর নাউ ক্লোজড। উই হ্যাভ ডিসমেন্টলড অল দ্যা ক্যাসিনোজ।

যদিও ক্যাসিনো জগতে আলোচিত যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। তারা কোথায় আছেন তা নিশ্চিত করে বলতে পারেনি কেউ। ক্যাসিনোতে জড়িত অন্যান্যদের বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কি-না এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য নেই সংশ্লিষ্টদের।

সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান শুরু করে র‌্যাব। ওইদিন মতিঝিলের ইয়ংমেনস, ওয়ান্ডারার্স, মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া চক্র ও বনানীর গোল্ডেন ঢাকা ক্লাবে অভিযান চালানো হয়। ক্লাবগুলো সিলগালা করে দেয়া হয়। অভিযানে ঘটে ভিন্ন ঘটনাও। ক্যাসিনো চালানোর সঙ্গে জড়িত ছিলেন কিছু নেপালি নাগরিক। থাকতেন সেগুনবাগিচার একটি বাসার ফ্ল্যাটে। পুলিশের সহযোগিতায় ১৫ নেপালি খালি হাতে ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে যান। ওই দিন গ্রেপ্তার করা হয় সম্রাটের সহযোগী যুবলীগের ঢাকা দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে।

এরপর প্রতিদনিই একটানা অভিযান চালানো হয়েছে বিভিন্ন ক্লাবে, বাসায়। গ্রেপ্তার করা হয়েছে টেন্ডার মুঘল যুবলীগ নেতা জি কে শামীম, কৃষক লীগ নেতা শফিকুল আলম, মোহামেডান ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক ভূঁইয়া ও রুপন ভূঁইয়াকে। এছাড়া উল্লেখযোগ্য কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

সূত্রমতে, দীর্ঘদিন থেকেই ঢাকার ক্লাবগুলোতে জুয়া চলছিলো লাগাহীনভাবে। ফুটবল, ক্রিকেট জাতীয় খেলা বাদ দিয়ে জুয়া নিয়েই ব্যস্ত ছিলো ক্লাবগুলো। ২০১৭ সাল থেকে এসব ক্লাবে বিদেশের আদলে আয়োজন করা হয় ক্যাসিনোর। ক্যাসিনো পরিচালনা করার জন্য আসে নেপালীরা। ভ্রমণ ভিসায় তারা ঢাকায় এসে মূলত ক্যাসিনো পরিচালনা করতো। প্রতিরাতে একেকটি ক্যাসিনোতে কোটি কোটি টাকার খেলা হতো। প্রতি ক্যাসিনো থেকে আয় হতো ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। ক্যাসিনো পরিচালনায় সরাসরি যুক্ত আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কিছু নেতা। আড়ালে থেকে এই টাকার ভাগ পেতেন আরও অনেকে। এ বিষয়ে তথ্য ছিলো গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে।

এসব তথ্যের প্রেক্ষিতেই গত ৭ই সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের এক সভায় শুদ্ধি অভিযান চালানোর নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এর সাত দিন পরেই দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভায় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সরিয়ে দেয়ার ঘোষণা দেন তিনি। তারপর ১৮ই সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান। র‌্যাবের পাশাপাশি বিভিন্নস্থানে অভিযান চালায় পুলিশও। সেই অভিযান নেই কয়েক দিন যাবত।

Advertisement