অর্থবছরের দুই মাস: এক টাকাও খরচ করতে পারেনি দুই মন্ত্রণালয়

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: চলতি অর্থবছরের দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এক টাকাও খরচ করতে পারেনি পররাষ্ট্র এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।

এ দুটি মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বরাদ্দ রয়েছে ৩ হাজার ৯৩৩ কোটি ২ লাখ টাকা। অন্যদিকে ১৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বরাদ্দের এক শতাংশও অর্থ খরচ করতে পারেনি।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ চিত্র। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সম্প্রতি প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।

অর্থ ব্যয়ের এমন গতির কারণে অর্থবছরের শুরু থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নের যে উদ্যোগ তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকনোমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আশা করা হয়েছিল, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই প্রকল্প বাস্তবায়ন ভালো হবে। কেননা গত অর্থবছর থেকে প্রথম প্রান্তিকে টাকা ছাড় সহজ করা হয়েছিল। কিন্তু একটি বিষয় সমাধান করলে তো হয় না। এর সঙ্গে নানা বিষয় জড়িত। যেমন ক্রয় কার্যক্রম দেরি হয়। ঠিকাদাররা কাজ করতে দেরি করেন। ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা সমস্যা থাকে। সবকিছুর উপরে শেষ সময়ে তড়িঘড়ি অর্থব্যয়ের মানসিকতাও একটি অন্যতম কারণ। ওই সময় যেহেতু বরাদ্দ খরচ করতেই হবে এরকম অবস্থার সৃষ্টি হয়, সেহেতু অনিয়ম, দুর্নীতি, অপচয়ের ব্যাপক আশঙ্কা থেকে যায়। সেই সঙ্গে প্রকল্পের মানসম্পন্ন বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়।

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ২০টি প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ রয়েছে ৩ হাজার ৮২১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, যা মোট এডিপির ১ দশমিক ৭৮ শতাংশ। কিন্তু বরাদ্দের এক টাকাও খরচ করা হয়নি।

যদিও প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে বলে দাবি করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন, পর্যটন ও পরিকল্পনা) আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখনও ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ করা হয়নি। তবে কাজ চলছে। আমরা ফান্ড রিলিজ করে দিয়েছি। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা ঠিকাদারদের দাখিলকৃত বিলগুলো যাচাই-বাছাই করছে। এ কাজ শেষ হলে তারা যখন বিল পরিশোধ করবে তখন আবার এডিপি অগ্রগতি বেড়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, এখন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে তদারকি বাড়ানো হয়েছে। ফলে তারা আগের মতো অ্যাডভান্সড বিল পরিশোধ করতে পারে না। যতটুকু কাজ হচ্ছে ঠিক ততটুকুই বিল দেয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ৮টি প্রকল্প রয়েছে। এগুলোর বিপরীতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১১১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, যা মোট এডিপির দশমিক ০৫ শতাংশ। কিন্তু অর্থবছরের জুলাই ও আগস্ট মাস পেরিয়ে গেলেও এক টাকাও খরচ হয়নি।

এ ছাড়া দুই মাস পেরিয়ে গেলেও ১ শতাংশের কম এডিপি বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হচ্ছে- জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, আইন ও বিচার বিভাগ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, তথ্য মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন এবং শিল্প মন্ত্রণালয়। তবে এর বিপরীত চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে- এডিপি বাস্তবায়নে এগিয়ে থাকা মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হচ্ছে- পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়। এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এডিপি বাস্তবায়নের হার ৭ থেকে ১৬ দশমিক ৩২ শতাংশ পর্যন্ত। সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছর মোট ২ লাখ ১৫ হাজার ১১৪ কোটি টাকার এডিপি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে গত দুই মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করতে পেরেছে ৯ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ। সার্বিকভাবে তুলনামূলক এডিপি বাস্তবায়নের হার বেড়েছে। কেননা গত অর্থবছরের একই সময়ে অর্থাৎ দুই মাসে ব্যয় হয়েছিল ৬ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা। এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

Advertisement