অ্যা লং জেহাদ : মাই কুয়েস্ট ফর দ্যা মিডলওয়ে” গ্রন্থের প্রকাশনায় বক্তারা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন অনস্বীকার্য

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. মুহাম্মদ আব্দুল বারী এমবিই রচিত “অ্যা লং জেহাদ : মাই কুয়েস্ট ফর দ্যা মিডলওয়ে”- শীর্ষক গ্রন্থের প্রকাশণা অনুষ্ঠান ২১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকেলে লন্ডন মুসলিম সেন্টারের সেমিনার হলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রকাশণা অনুষ্ঠানে বক্তারা বইটির ভুয়শী প্রশংসা করে বলেন- আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রিয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন অনস্বীকার্য। মধ্যপন্থার মধ্যেই শান্তি নিহিত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আমাদেরকে মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে হবে। কোনো ক্ষেত্রে চরমপন্থা অবলম্বন যেমন টিক নয়; তেমনি আবার একেবারে উদার হওয়াও উচিত নয়। দুটোর মাঝামাঝি থাকা উচিত। এ জন্য প্রয়োজন জ্ঞান অন্বেষণ ও পড়াশোনা। বক্তারা বলেন, ড. আব্দুল বারী রচিত গ্রন্থটি মানুষকে মধ্যপন্থা অবলম্বনে দিক নির্দেশনা দেবে।
টিভি প্রেজেন্টার আজমাল মাসরুর এর উপস্থাপনায় প্রকাশনা অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন লন্ডন কিংস কলেজের প্রফেসর আব্দুল করিম ওয়াকিল, নিউহ্যাম কাউন্সিলের ডেপুটি স্পীকার ব্যারিস্টার নাজির আহমদ, বিশিষ্ট সাংবাদিক কে এম আবু তাহের চৌধুরী, ইস্ট লন্ডন মসজিদের ইমাম ও খতীব শায়খ আব্দুল কাইয়ূম ও ইস্ট লন্ডন মসজিদের ডাইরেক্টর দেলওয়ার খান।
ড. মুহম্মদ আব্দুল বারী তাঁর বক্তব্যে বলেন, জীবনে মধ্যপন্থা অবলম্বন খুব সহজ বিষয় নয়। মধ্যপন্থা অবলম্বনের জন্য প্রয়োজন ধর্য্য ও সহনশীলতা। নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। প্রচুর পড়াশোনা করতে হয়। তিনি তাঁর গ্রন্থের নাম “অ্যা লং জেহাদ” নামকরণের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, জেহাদ শব্দের অর্থ প্রচেষ্টা। যেকোনো ভালোকাজের চেষ্টা একটি জেহাদ। কিন্তু আইএস, আলকায়েদাসহ চরমপন্থী গ্রুপগুলো জেহাদ শব্দটিকে হাইজ্যাক করে ভিন্ন অর্থে অপব্যবহার করছে। মানুষের মধ্যে নির্দোষ জেহাদ শব্দটির ইতিবাচক দিক তুলে ধরতেই বইয়ের নামকরণ করেছি ‘অ্যা লং জেহাদ’।
ড. আব্দুল বারী মধ্যপন্থা সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, নফল নামাজকে আমাদের নফল হিসেবেই গুরুত্ব দিতে হবে। নফলকে ফরজের মতো গুরুত্ব দেয়া উচিত হবে না। আবার ফরজের গুরুত্ব ফরজ হিসেবেই দিতে হবে। এটার গুরুত্ব কমিয়ে আবার নফলের মার্যাদায় নিয়ে আসা চলবে না। সবকিছুতেই যেনো হারাম না খুঁজি, আবার সবকিছুই হালাল হিসেবে গ্রহণ না করি। মধ্য অবস্থানে থাকি। রাসুলও (সাঃ) আমাদেরকে মধ্যপন্থা অবলম্বনের নির্দেশনা দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনেও একই কথা বলা হয়েছে। মুসলমান বলতে বলতে আমাদের বাঙালিত্ব ভুলে গেলে চলবে না। আবার বাঙালি শ্লোগান তুলতে তুলতে বৃটিশ পরিচিত ভুলে গেলে চলবে না। আমরা যেমন মুসলমান তেমনি বাঙালি ও বৃটিশ। সবপরিচয় ধারণ করেই চলতে হবে। এটাই হচ্ছে মধ্যপন্থা। আমরা যত বেশি মধ্যপন্থার চর্চা করবো ততই আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবন শান্তিময় হবে।
ইমাম আব্দুল কাইয়ূম বলেন, এটি একটি ইউনিক গ্রন্থ। মধ্যপন্থা বিষয়ে খুব বেশি বই লেখা হয়নি। এই গ্রন্থ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও কমিউনিটির মানুষের জন্য একটি গাইড বুক হিসেবে বিবেচিত হবে।
কে এম আবু তাহের চৌধুরী বলেন- ড. আব্দুল বারী প্যারেন্টিং ও পরিবার নিয়ে অনেক বই লিখেছেন। বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করছেন। তাঁর লেখনী আমাদের সমাজের জন্য অমুল্য সম্পদ। তিনি তাঁর লেখা অব্যাহত রাখার আহবান জানান।
দেলওয়ার খান বলেন, ড. মুহাম্মদ আব্দুল বারী খুব বেশি পড়াশোনা করেন। লিখেনও বেশি। তিনি সমাজকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে জানেন। তিনি দীর্ঘসময় ইস্ট লন্ডন মসজিদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ছিলেন মুসলিম কাউন্সিল অব বৃটেনের সেক্রেটারি জেনারেল। অলিম্পিকেও তার অবদান অপরিসীম। তিনি আমাদের কমিউনিটির সম্পদ। তিনি বলেন, ইসলাম হচ্ছে একটি মিডলওয়ে বা মধ্যপন্থা। যারা ইসলামের হুকুম আহকাম মেনে চলেন, তাদের মধ্যপন্থার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ইস্ট লন্ডন মসজিদের নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালনের সুবাদে ড. আব্দুল বারীর সঙ্গে দীর্ঘসময় কাজ রার সুযোগ হয়েছে। তিনি তার দক্ষতা ও যোগ্যতা দেখেছেন। প্রতিটি গুরুত্বপর্ণূ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তিনি সবসময়ই মধ্যপন্থা অবলম্বনে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
উল্লেখ্য, “অ্যা লং জেহাদ : মাই কুয়েস্ট ফর দ্যা মিডিলওয়ে” বা একটি দীর্ঘ প্রচেষ্টা : মধ্যপন্থা সম্পর্কে আমার অনুসন্ধান বইটি কিউব প্রকাশনী প্রকাশ করেছে। দশ টাকা মুল্যের বইটি আমাজানসহ বিভিন্ন বুকশপে পাওয়া যাচ্ছে।

Advertisement