আমরা কি পাথর হয়ে গেলাম?

ওয়ালেদ বিন খালেদ

সৃষ্টিকর্তা ভালোবেসে আমাদের নাম দিয়েছেন “আশরাফুল মাখলুকাত`বা সৃষ্টির সেরা জীব।

লাখ লাখ প্রজাতির মধ্য থেকে আমাদেরকে বেছে নেয়ার কারণ কি ছিল?

এটাকি আমাদের বুদ্ধিবৃত্তী, আমাদের মনন, আমাদের জ্ঞান,আমাদের বিবেক নাকি সব কিছুর মিশ্রণ? খোদা প্রদত্ত আশরাফুল মাখলুকাত তকমাটা কি শুধুই সার্টিফিকেট করে দেয়ালে সাজিয়ে রাখার রাখার মতো কোনো বিশেষণ?

দায়িত্বের চরম পরীক্ষা নেয়া তকমাটা কি তবে কাঁটা হয়ে আমাদের গলায় বিঁধেছে? নাকি বিবেক হারিয়ে দিনে দিনে পাথর হয়ে যাচ্ছি আমরা?

পৃথিবী কোন কোনায় আজ অরাজকতা চলছে না? লাতিন আমেরিকা থেকে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য থেকে দক্ষিণ এশিয়া – ভাবতে অবাক লাগে সমৃদ্ধশালী দেশগুলোতে এই কালো ছোবল আরো প্রকট, আরো বিষময়।

মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের দামামায় প্রায় বিধ্বস্ত আর আফ্রিকার দেশগুলো যুদ্ধ করছে দারিদ্রের সাথে, এমনকি বছর কয়েক আগেও বিশ্বের নিরাপদতম স্থানগুলোর তালিকায় থাকা রঙিন লন্ডনের রং ফিকে হতে শুরু করেছে নাইফ ক্রাইমের দাপটে – এখানে এখন শুরু হয়েছে পুলিশ পেটানোর প্রতিযোগিতা।

আর আমেরিকার কথা নাই বললাম,মোড়ল আঙ্কেল স্যামের নিরীহরা প্রায়ই রক্তাক্ত হচ্ছে শুটিংএ।

দুনিয়া জুড়ে ঘটা এই ঘটনাগুলোর কিছু চিত্র বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের বদান্যতায় আমাদের কাছে আসে, কিছু আবার পেয়ে যাই মার্ক জুকারবার্গ, জ্যাক ডরসি, নোয়া গ্লাস, বিজ স্টোন, ইভান উইলিয়ামস (প্রথমজন ফেইসবুক এবং শেষের চার জন টুইটারের প্রতিষ্ঠাতা) প্রমুখদের কল্যাণে।
কিন্তু ঘটে যাওয়া একটি বিশাল অংশ আমরা মিস করে ফেলি, কারণ দুঃস্বপ্নকেও হার মানানো এই সংবাদগুলো আমাদের বিবেককে আর নাড়া দেয়না।

কারণ এগুলো যে আজ নৈমিত্তিক ঘটনায় রূপান্তরিত হয়েছে।

জয়নুল আবেদিনের দুর্ভিক্ষের অমর চিত্রকর্মগুলোকে হার মানানো, ক্ষুধা-অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা হাজার হাজার ইয়েমেনি শিশুর প্রায় কঙ্কালসার অবয়বগুলো আমাদের আর টানে না। কারন তথাকথিত আশরাফুল মাখলুকাতদের রক্তে লোহার পরিমান দিনে দিনে কমছে, চুম্বক তাকে আর আকর্ষণ করতে পারে না।

বিবেকেও লোহার পরিমান কমতে থাকায় এখন আর মরিচা ধরে না – সৃষ্টিকর্তার প্রিয় আশরাফুল মাখলুকাত যে পাথর হতে চলেছে!!!

ওয়ালেদ বিন খালেদ:(আইটি,এডিটর ব্রিট বাংলা টোয়েন্টি ফর ডটকম)

Advertisement