আল-মিজান স্কুলের নবম হাফিজ গ্রাজুয়েশন :  ৭জনকে পাগড়ি ও সার্টিফিকেট প্রদান 

লন্ডন : ইস্ট লন্ডন মস্ক পরিচালিত আল-মিজান স্কুল ও লন্ডন ইস্ট একাডেমি থেকে এ বছর ৭ শিক্ষার্থী পবিত্র কুরআনের হিফজ সম্পন্ন করেছেন । এ নিয়ে গত ১৪ বছরে ৭৫ জন শিক্ষার্থী পবিত্র কুরআনের হিফজ সম্পন্ন করলেন । হিফজ সম্পন্নকারী ছাত্রদের নিয়ে ১৭ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লন্ডন মুসলিম সেন্টারের নিচতলায় অনুষ্ঠিত হয় নবম বার্ষিক হুফফাজ গ্রাজুয়েশন সিরিমনি । অনুষ্ঠানে হাফিজদের পাগড়ি পরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ক্রেস্ট ও পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বারাকা খান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইকবাল খান, ইস্ট লন্ডন মস্ক ও লন্ডন মুসলিম সেন্টারের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, ইমাম ও খতীব শায়খ আব্দুল কাইয়ূম, লন্ডন ইস্ট একাডেমির প্রধান শিক্ষক আসকর আলী, হেড অব ইসলামিক সায়েন্স মুহাম্মদ বদর, গভর্ণর হোসাইন শিপার, গভর্ণর আব্দুল হাই মুর্শেদ ও শায়খ আবুল বারাকাত মিশকাতক হোসাইন।
স্কুলের ইয়ার এলেভেনের ছাত্র মাহের মোবারক ও ফারহান আহমদ এর উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন ইয়ার সেভেনের ছাত্র মুয়াদ আলী ও মাহদী আব্দুস সামাদ।

পবিত্র কুরআনের হিফজ সম্পন্নকারী ৭ শিক্ষার্থী হচ্ছেন- ওয়াসিত আব্দুল্লাহ তাহামী, ওমর ইউনুস মিয়া, মুয়াদ তানভীর, মুহাম্মদ আব্দুল মোবিন, কাওসার হোসাইন, ইমরান খান ও আবদি জিবার আহমদ জামা।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আব্দুল হাই মুর্শেদ বলেন, আজকে যারা হাফিজ হলেন তারা কমিউনিটির জন্য রুল মডেল। তারা আগামী প্রজন্মকে শিক্ষিত করবেন । আজকের দিনটি তাদের জন্য গর্ব ও আনন্দের, কারণ তারা পবিত্র কুরআন মুখস্থ করে একটি বিশাল কাজ সম্পন্ন করেছেন। তিনি ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা প্রতিদিনই এমন কিছু করবে যাতে তোমাদের মা-বাব গর্ববোধ করেন। আর মা-বাবাও এমন কিছু করবেন যা সন্তানদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয় । তিনি বলেন, কুরআনের হিফজ সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে ছাত্ররা একটি বিশাল সম্পদ অর্জন করলো। এখন এই সম্পদ ধরে রাখতে কঠোর অধ্যাবসায় প্রয়োজন । মনে রাখতে হবে, কোনো কিছু অর্জন যতটা কঠিন, তা ধরে রাখা আরো কঠিন । তিনি অভিভাবক ও শিক্ষকদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
ইমাম আব্দুল কাইয়ূম বলেন, হাদীসে আছে পবিত্র কুরআন যারা সংরক্ষণ করে তারা আল্লাহ তায়ালার খাস মানুষ । আজ যারা হাফিজ হলেন তারা আল্লাহ তায়ালার খাস মানুষদের মধ্যে গন্য হবেন বলে আমরা আশাবাদী । তিনি বলেন, যারা  হাফিজ হলেন তাদের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ হলো তা আজীবন ধরে রাখা । এজন্য তাঁদেরকে প্রতিদিন কুরআন রিভিশন দিতে হবে । তিনি হাফিজদের উদ্দেশ্য করে বলেন, তোমরা তোমাদের মা-বাকে সম্মান করবে। কারণ হাফিজ হওয়ার পেছনে তারা অনেক সময় দিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে কথা হয় হাফিজ ওমর ইউনুস মিয়ার পিতা মোঃ ইউনুস মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত। আমাদের ছেলে আজ পবিত্র কুরআন মুখস্থকরণ সম্পন্ন করেছে। তিনি বলেন, ছেলেকে  হাফিজ করার জন্য তাঁর স্ত্রী ফাতেমা মিয়া কঠোর পরিশ্রম করেছেন। সবসময়ই তিনি ছায়ার মতো পাশে ছিলেন। তিনি ওয়েস্ট লন্ডনে বসবাস করেন। তাঁর ছেলে ওমর ইউনুস প্রতিদিন বাসে চড়ে ইস্ট লন্ডন মসজিদে আসতো। রাস্তায় যে এক ঘণ্টা সময় লাগতো তখন বসে বসে কুরআন রিভিশন দিতো । তাঁদের দেশের বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার জুড়ি উপজেলার ভবানীপুর গ্রামে। তিনি তাঁর ছেলের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য সকলের কাছে দোয়া কামনা করেন।

অন্যান্য বক্তারা বলেন, আজ যারা পবিত্র কুরআনের হিফজ সম্পন্ন করলো তারাই একদিন বৃটিশ পার্লামেন্টে আমাদের ভয়েস তুলে ধরবে। তারাই এদেশের সিভিল সার্ভিসে উচ্চপদে সেবা দিবে, ব্যাংকার, অ্যাকাউন্টেন্ট হবে। বক্তারা আরো বলেন, আল্লাহ তায়ালার বিশেষ করুনা ছাড়া কারও পক্ষে পবিত্র কুরআনের হিফজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। এই প্রতিষ্ঠানদুটো থেকে যে ৭৫জন ছাত্র হিফজ সম্পন্ন করলো, তাদের উপর অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা বিশেষ করুণা রয়েছে। যারা হাফিজ হয়েছে তাদের উপর আজ থেকে দায়িত্ব আরো বেড়ে গেলো। এতদিন কঠোর অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে তারা পবিত্র কুরআনকে মুখস্থ করছিলেন। এবার কুরআনকে অন্তরে গেঁথে রাখতে আজীবন নিয়মিত তেলাওয়াতের প্রাকটিস করে যেতে হবে।
অনুষ্ঠানের সার্বিক আয়োজনে মুখ্য ভুমিকা পালন করেন রহিমা বেগম, হেড অব তাহফিজ শাকিল আহমদ ও শিক্ষক মুহিদুল জামান।

Advertisement