আয়া সোফিয়ার জন্য মায়াকান্না ও বাস্তবতা

।। ডক্টর এম এ আজীজ ।।

তুরস্কের আয়া সোফিয়া ‘জাদুঘরকে মসজিদে রূপান্তর করায় বিশ্বব্যাপী অনেকে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে। এরকম একটি ছিঁচকাঁদুনে দল বাংলাদেশেও দেখা যাচ্ছে। অথচ তারা জানেই না, আয়া সোফিয়া ওয়াকফ করা মসজিদই; কখনোই জাদুঘর নয়। নাস্তিক্যবাদী এক স্বৈরশাসক জোর করে কিছুদিন ওটাকে জাদুঘর বানিয়ে রেখেছিল মাত্র। সে-ইতিহাস জানতে হলে খানিকটা পেছন ফিরে তাকাতে হয়।
আজকের তুরস্ককে দেখে কেউ কি ভাবতে পারবে, এই দেশটিই ১৯১৫ সাল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্ববর্তী ৬৩৬ বছর এশিয়া ইউরোপ ও আফ্রিকা শাসন করতো! তাদের অধীনে ছিল সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য (মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফসহ) জর্ডান, আরব আমিরাত, সিরিয়া, ইরাক, কাতার, কুয়েত, ওমান, জেরুজালেমসহ সমগ্র প্যালেস্টাইন। আরো ছিল ইউরোপের গ্রীস, সাইপ্রাস, জর্জিয়া, আরমেনিয়া, ক্রিমিয়া, বুলগেরিয়া, আলবেনিয়া, কসোভো, যুগোশ্লাভিয়া, বসনিয়া হারজগোভিনা, রুমানিয়া ইত্যাদি। ছিল আফ্রিকার লিবিয়া, ইয়ামেন, মিশর, সুদান, তিউনিসিয়া, ইরিত্রিয়া ও আলজেরিয়া ইত্যাদি। তুরস্কই ছিল ওই সময়ের বিশ্বের একক পরাশক্তি, যাদের এককভাবে মোকাবিলা করার মতো কোনো শক্তি বিশ্বে ছিল না।
এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে। এ সময় বৃটিশ, ফ্রান্স ও রাশিয়ার যৌথ ষড়যন্ত্র ও শক্তির কাছে পরাজিত হয়ে তুরস্ক তার বিশাল সাম্রাজ্য হারিয়ে ফেলে। তিন সাম্রাজ্যবাদী দেশ সমগ্র সাম্রাজ্য নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। তার্কি খিলাফত ধ্বংস করে। এরপর তুরস্কের মতো যোদ্ধা জাতিকে আর্থিকভাবে পঙ্গু করে রাখার পাশাপাশি মদ-জুয়া-গান-বাজনা ও নর্তকী দিয়ে প্রায় ৯০ বছর ঘুম পাড়িয়ে রাখলো। তারাই আবার তুরস্ককে ‘ইউরোপের রুগ্ন দেশ’ বলে উপহাস করা শুরু করলো।

এভাবে প্রায় ১০০ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর তুরস্কের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অবস্থাকে আমূল পরিবর্তন করে তুরস্ককে এগিয়ে নিচ্ছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রেজেব তায়্যিফ এরদোয়ান। সেই পরিবর্তন ও এগিয়ে যাওয়ার ধারায় আয়া সুফিয়া আজ আবার জাদুঘর থেকে পবিত্র মসজিদের মর্যাদা ফিরে পেল।

আয়া সোফিয়ার ইতিহাস :
এক সময় ইস্তাম্বুল বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। ৬০০ খ্রিস্টাব্দে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের শাসক কনস্টান্টাইন ইস্তাম্বুলের বসফরাস প্রণালীর তীরে একটি চার্চ নির্মাণ করে। চার্চটির নাম হাজী সোফিয়া।
মাঝখানে খ্রিস্টান শাসকেরা নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে লিপ্ত হলে চার্চটির চরম ক্ষতি সাধিত হয়। এইভাবে প্রায় ১০০ বছর পড়ে থাকে। অতঃপর মেরামত করে আবার প্রার্থনার উপযুক্ত করা হয়।
১৪৫৩ সালে সুলতান দ্বিতীয় আহমেদ ফাতেহের নেতৃত্বে মুসলিমদের সাথে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের খ্রিস্টান শাসকদের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে খ্রিস্টানরা পরাজয় বরণ করে। ইস্তাম্বুলের কর্তৃত্ব মুসলিমদের দখলে আসে। এ সময় খ্রিস্টানদের অনেকে মুসলিম হয়ে যায়, আবার কেউবা স্বেচ্ছায় ইস্তাম্বুল ছেড়ে চলে যায়। অবস্থা এমন দাঁড়ালো যে, আয়া সোফিয়ায় প্রার্থনা করার মতো তেমন কোনো খ্রিস্টান ছিল না। তখন সুলতান আহমেদ ফাতেহ তৎকালীন হাজী সুফিয়া পরিচালনা কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার মাধ্যমে ন্যায্য মূল্য দিয়ে নিজ নামে চার্চটি ক্রয় করে নেন এবং সেটিকে মসজিদে রূপান্তরিত করেন। কিছুদিন পর তিনি ইসলামী শরীয়া অনুযায়ী একটি ট্রাস্ট করে তার মাধ্যমে ওয়াক্ফ করে দেন। এই ওয়াকফ করা সম্পত্তির খরচাদির জন্য তিনি তৎকালীন বাৎসরিক ১৪ হাজার স্বর্ণ মুদ্রা আয়ের ব্যবস্থা করেন। মুসলিমেরা ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ প্রায় ৫০০ বছর এটিকে মসজিদ হিসাবে ব্যবহার করে আসছেন।
১৯১৫ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় রাশিয়া, ফ্রান্স, বৃটেন ও ইটালি যৌথ শক্তি তুরস্ককে পরাজিত করে সমস্ত সাম্রাজ্য ভাগ করে নিয়ে নেয়। এমনকি ইস্তাম্বুলও দখল করে নেয়। মোস্তাফা কামাল সেনাবাহিনীতে ছিলেন এবং যৌথবাহিনীকে মোকাবিলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এই প্রস্তুতি দেখে যৌথ শক্তি ইস্তাম্বুল ছেড়ে চলে আসে। মোস্তাফা কামাল তখন জাতির হিরো হয়ে দাঁড়ান এবং তখনকার সুলতান আবদুল মাজিদকে ক্ষমতাচ্যুত করে তার্কির প্রেসিডেন্ট হিসাবে দেশ পরিচালনা করতে থাকেন। তিনি আতাতুর্ক অর্থাৎ জাতির পিতা উপাধি ধারণ করেন।
কামাল নামে মুসলিম হলেও চরম ইসলামবিদ্বেষী ছিলেন। পশ্চিমা শক্তিগুলো এবার সুযোগ পেয়ে তাকে ব্যবহার করে তুরস্কে মুসলিমদের ইতিহাস-ঐতিহ্য ধ্বংস করার উদ্যোগ নেয়। আর মোস্তাফা কামালও পশ্চিমা প্রভুদের খুশী করার জন্য ৫০০ বছরের ওয়াকফ করা মসজিদকে অন্যায় ও বেআইনীভাবে মিউজিয়ামে রূপান্তরিত করেন। সেই সময় তার এত প্রভাব ছিল যে কেউ প্রতিবাদ করার সাহসও করেননি। করলে হয় তাকে হত্যা করা হতো অথবা জেলে রাখা হতো।
মোস্তাফা কামাল হাজার হাজার ওলামাকে হত্যা এবং অনেক মসজিদকে মিউজিয়ামে পরিণত করেছিলেন। আরবীতে আযান দেয়া বন্ধ করেছিলেন। অফিস-আদালতে নামাজ পড়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। মাদ্রাসাগুলো বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আরবীতে নাম রাখা নিষিদ্ধ করেছিলেন। এককথায় তুরস্ক থেকে ইসলামকে বিদায় করার জন্য এবং তুরস্কের মুসলিম ঐতিহ্য ও খিলাফতকে ধ্বংস করে প্রায় ৭০০ বছরের একটি শাসক জাতিকে পশ্চিমাদের অনুসারী করার চেষ্টার কোনো ত্রুটি করেননি মোস্তাফা কামাল। পরবর্তীকালে তার অনুসারীরাও ক্ষমতায় বসে একই পথ অনুসরণ করে।

অবশেষে শত বছর পর প্রেসিডেন্ট রেজেব তৈয়ব এরদোয়ান ও তাঁর দল এ কে পার্টি ২০০২ সালে ক্ষমতায় আসার পর তুরস্কের অর্থনৈতিক, সামাজিক, নৈতিক ও ধর্মীয় দিক থেকে আমূল পরিবর্তন শুরু হয়। তুরস্কের বেশিরভাগ মুসলিম আয়া সোফিয়াকে পুনঃরায় মসজিদে হিসেবে ফিরে পেতে চাচ্ছিল। তাদের পক্ষ থেকে সিভিল সোসাইটি এজন্যে কোর্টে মামলাও করেছিল, যা বার বার খারিজ হয়ে যাচ্ছিল। কারণ, তখনও বিচারপতিদের এতটা সাহস হয় নাই যে একটি সত্য রায় দেবে।
বর্তমানে পরিস্থিতির অনেক পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে বিচারপতিদেরও সাহস সঞ্চারিত হয়েছে। কিছুদিন পূর্বে একটি সিভিল সোসাইটি আয়া সোফিয়াকে মিউজিয়াম থেকে পুনঃ মসজিদে বহাল করার জন্য কোর্টে মামলা করে। গত ১০ জুলাই বিচারপতিগণ কামাল আতাতুর্কের ঘোষণাকে বেআইনী ঘোষণা দিয়ে আয়া সোফিয়াকে তুরস্ক বিজেতা সুলতান মেহমেত ফাতিহের ওয়াকফ সম্পত্তি আইন অনুযায়ী মসজিদ হিসেবে চালু করার রায় ঘোষণা করেন। এখানে মনে রাখবেন, প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান কোর্টের রায় অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্দেশনামায় স্বাক্ষর করছেন মাত্র।
আসুন এবার কিছু তিক্ত সত্য কথা জানুন। পশ্চিমা জগতের কিছু রাজনৈতিক নেতা ও জেগে ঘুমানো ধর্মীয় নেতা আয়া সোফিয়া জাদুঘরের জন্য কুম্ভীরাশ্রু বর্ষণ করছেন। আমার মতে, এদের কারোই আয়া সোফিয়ার ইতিহাস জানা নাই। অথচ আমি ৪৫ বছর পশ্চিমা জগতের কেন্দ্র লন্ডন শহরে বৃটিশ নাগরিকত্ব নিয়ে পরিবারসহ বসবাস করছি। আমেরিকা কানাডা সহ ইউরোপের প্রতিটি দেশ সামাজিক কাজে বহুবার সফর করেছি। কেউ বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, ইংল্যান্ডসহ ইউরোপ, কানাডা ও আমেরিকাসহ পশ্চিমা জগতে বহু চার্চ বা গির্জা বন্ধ অবস্থায় আছে অথবা হওয়ার পথে। কারণ, এসব চার্চে বা গির্জায় প্রার্থনা করার মতো যথেষ্ট লোক নাই। পশ্চিমা জগৎ বস্তুগত উন্নতির সাথে সাথে ধর্মবিমূখ ভোগবিলাসী জাতিতে পরিণত হয়েছে।
অতএব অসংখ্য গির্জা বিভিন্ন ধর্মালম্বীরা বিশেষ করে মুসলিমরা ক্রয় করে মসজিদ বানিয়ে ইবাদাত-বন্দেগী করছে। পশ্চিমা দেশগুলোতে গত ১০০ বছরে মুসলিমদের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। তারা অসংখ্য চার্চ ক্রয় করে মসজিদ বানাচ্ছে। চার্চ ক্রয় করার মধ্যে অনেক সুবিধা আছে। এসব দেশে কোনো কিছু করার জন্য সরকারের পারমিশান একান্ত প্রয়োজন। যেহেতু চার্চগুলো আগে থেকেই উপসানালয় হিসাবে অনুমতিপ্রাপ্ত, তাই কোনো প্রকার সমস্যা ছাড়াই অনুমতি পেয়ে যায়। নতুন করে কোন মসজিদ বানাতে পারমিশান পেতে বছরের পর বছর লেগে যায়। তারপরও অনেক ক্ষেত্রে পারমিশান পাওয়া যায় না। অপর দিকে চার্চের ধর্মীয় নেতারা বাজারমূল্যের চাইতে কম দামে হলেও মুসলিমদেরকে খুশিমনে দিয়ে দেয়। কারণ, তারা মনে করে এই চার্চকে অন্য কোনো কাজে তথা ক্লাব, রেষ্টুরেন্ট ইত্যাদি বানানোর চাইতে ধর্মীয় কাজে ব্যবহার করা অনেক অনেক ভালো। এমনকি কোনো কোনো চার্চের এমন নীতিও আছে যে, চার্চকে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না।  অতএব এই সব চার্চকে মসজিদ করার কারনে কোন দু:খ বা প্রতিবাদ নাই। কেন? বরং খুশি।

সুলতান মেহমেতের ক্রয় করা দলিল আজও তুরস্কের মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে।

তুরস্কের সুলতান মেহমেত বিজয়ী হিসাবে ক্ষমতায় থাকা সত্বেও জোর করে আয়া সোফিয়া চার্চ কেড়ে নেননি, বরং বিশপ জেনাডিয়াসের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নিজস্ব অর্থ দিয়ে ন্যায্য মূল্যে ক্রয় করে মসজিদ করে ট্রাস্টকে ওয়াকফ করে দিয়েছিলেন। এ নিয়ে দীর্ঘ ৫০০ বছর কোনো পশ্চিমা দেশ অথবা তাদের ধর্মীয় নেতারা কোনো প্রকার প্রতিবাদ করেছেন বলে কোন রেকর্ড নাই। কারণ, তাদের মূল ব্যাপারটি জানা ছিল। হয়তো তাদের কাছেও ঐতিহাসিক দলিল ছিল, যা তুরস্কের মিউজিয়ামে আজও সংরক্ষিত আছে। তাহলে আজ কেন প্রতিবাদ হচ্ছে, অপবাদ দেয়া হচ্ছে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে? বাংলায় একটি প্রবাদ আছে “যারে দেখতে নারী তার চলন বাঁকা”। আয়া সোফিয়াকে আদালতের রায় অনুযায়ী মসজিদ হিসাবে চালু করে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানও কি ওই বাংলা প্রবাদের অবস্থার শিকার হলেন!
অবাক কান্ড হলো, পোপ ফ্রান্সিস তুরস্কের আদালত কর্তৃক একটি প্রতিষ্ঠিত সত্যকে কার্যকরী করাতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। আমাদের প্রশ্ন, তিনি কি কোন দিন গির্জা ও মসজিদকে মিউজিয়াম হিসেবে ব্যবহারের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন? তিনি ও তাঁর পূর্বসুরীরা স্পেনে বিশ্ববিখ্যাত কর্ডোভাসহ শত শত মসজিদকে মিউজিয়াম বানিয়েছে। আজ পর্যন্ত কি তিনি এর প্রতিবাদ করেছেন? স্পেনে তাঁর অনুসারীরা লাখ লাখ মুসলিম পুরুষ, মহিলা ও শিশুকে হত্যা করে রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছে। মসজিদে যারা চুক্তি অনুযায়ী আশ্রয় নিয়েছে, এমন একজন মুসলিমকেও রেহাই দেয়নি, ধোঁকা দিয়ে মসজিদে একত্র করে সবাইকে আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছে। মরক্কো পাঠিয়ে দেয়ার কথা বলে জাহাজে উঠিয়ে সবাইকে সাগরে ডুবিয়ে মেরে আজ তারা এপ্রিল ফুল পালন করে। দিনটি ছিল ১লা এপ্রিল। মুসলিমেরা ফুল বা বোকামী করে নাই। তারা চুক্তি বা ওয়াদা অনুসারে মসজিদে আশ্রয় নিয়েছিল অথবা জাহাজে উঠেছিল। খ্রিস্টান বিজয়ীরা বেইমানী করে মুসলিমদেরকে হত্যা করে এখনও আনন্দ-উল্লাস করে। এর চাইতে নির্মম আর কী হতে পারে? তিনি বা তাঁর পূর্বসুরীরা কি আজ পর্যন্ত তাঁর অনুসারীদের সেদিনের জঘন্য অপকর্মের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন? তিনি কি এই জঘন্য কাজের উদযাপন করতে একটি বারের জন্যে বারন করার চেষ্টা করেছেন?

গ্রীস ও বুলগেরিয়া শত শত মসজিদকে গীর্জা, নাইট ক্লাব বানিয়ে ফেলেছে, তার কি কোন প্রতিবাদ বা দুঃখ প্রকাশ করছেন পোপ? একইভাবে তার্কী খিলাফত পতনের পর আরমেনিয়া, জর্জিয়া, রুমানিয়া, সার্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া ইত্যাদি অনেক দেশে তাঁর অনুসারীরা মসজিদ মাদ্রাসা ধ্বংস করেছে, সেজন্য তিনি কি কোন দুঃখ প্রকাশ করছেন?
আয়া সোফিয়া নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্স ও গ্রীস বেশি মায়াকান্না করছে। অথচ এই ফ্রান্সই মুসলিম দেশ আলজেরিয়া দখল করে লাখ লাখ মুসলিমকে হত্যা করেছে, অসংখ্য মসজিদ গুঁড়িয়ে দিয়েছে। কোন ধর্ম বা নৈতিকতার জোরে এসব করেছিল? আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ দখল করে লুটপাট করে সমস্ত ডায়মন্ড স্বর্ণ রূপা ইত্যাদি এনে নিজ দেশ গড়েছে। লাখ লাখ কালো মানুষকে দাস বানিয়ে ফ্রান্সে এনে অত্যাচার করে খুন করেছে। অনেককে পথিমধ্যে জাহাজে খাদ্য পানি না দিয়ে মেরে সাগরে ফেলে দিয়েছে। তারা আজ কিভাবে তুরস্কের একটি বৈধ কাজের প্রতিবাদ করে?
তুরস্ক গ্রীস ছেড়ে আসার পর ওরা শতাধিক মসজিদকে নাইটক্লাব, মদের দোকান ও গির্জা বানিয়েছে। ফলে প্রায় একশত বছর গ্রীসে একটি মসজিদও ছিল না। সেসময় ওরা লাখ লাখ মুসলিমকে হত্যা করেছে, অবশিষ্টরা প্রাণে বেঁচে তার্কিতে পৌঁছেছে। পুরানো সভ্যতার দাবীদারদের এই নাকি সভ্যতা! তারাই আবার এখন আয়া সোফিয়ার জন্য কুম্ভীরাশ্রু বর্ষণ করছে। এই হচ্ছে পুরো খ্রিস্ট জগতের আসল চেহারা।
আমি নিজে পাঁচ বার গ্রীস গিয়ে দেখেছি, মুসলিমেরা মসজিদের অভাবে অঘোষিত স্থানে কোনোভাবে নামাজ আদায় করছে। অথচ এরা আবার গণতন্ত্র ও আর মানবাধিকারের দোকান খুলে বড় বড় কথা বলে।
আজ তাদের দেশের প্রতিটি অলিগলিতে শহরে বন্দরে চার্চগুলো খালি অবস্থায় বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। তাদের অনেকেই এখন স্বেচ্ছায় ইসলামের পবিত্র ছায়াতলে আশ্রয় নিচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে, এই শতাব্দি ইসলাম ও মুসলিমদের। এই সব দেখে তাদের চোখে ঘুম নাই। ইসলামোফোবিয়া করে ইসলাম ও মুসলিমদের জয়যাত্রা ঠেকানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠছে। তাই মুসলিমদেরকে জংগী জংগী বলে ভূয়া আওয়াজ তুলে নিজ জাতিকে মুসলিম হওয়া থেকে বিরত রাখার অবিরত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু জয় আমাদের হবেই হবে। আল্লাহ বলেছেন, সত্য সমাগত অসত্য বিতাড়িত। সত্যের জয় অবশ্যম্ভী।

লেখক : যুক্তরাজ্য প্রবাসী ও সমাজকর্মী। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান: সফলতার রহস্য বইর লেখক।

Advertisement