ইভান স্পিগেলের সাফল্যের ১০ সূত্র

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: স্ন্যাপচ্যাটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইভান স্পিগেল। তিনি সবচেয়ে কম বয়সী বিলিয়নিয়ার। একটি সফল প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সূত্র তিনি বলেছেন বিভিন্ন বক্তৃতায়। পরামর্শ দিয়েছেন নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য। তেমনই ১০টি পরামর্শ আজ তুলে ধরা হলো।

১. নিজের সত্তাকে অনুসরণ করুন
এক সমাবর্তন বক্তব্যে ইভান স্পিগেল নিজের সত্তাকে অনুসরণ করার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আপনার সত্তা যা বলে, তা ভালো করে শুনুন এবং অনুসরণ করুন।’ অন্যের পরামর্শে জীবন গড়া থেকে বিরত থাকার কথাও তিনি বলেছেন। এ প্রসঙ্গে তাঁর মতামত পাওয়া যায় এক সাক্ষাৎকারে, ‘আমার ডিজাইন করতে ভালো লাগত। আমার যখন একটি নিজস্ব কম্পিউটার হলো, তখন আমি ফটোশপে ডিজাইন করতে শুরু করলাম। এটা খুব উপভোগ করছিলাম। ডিজাইনের ওপর পড়ালেখা শুরু করলাম। সেই সময় আমি আমার স্কুলের পত্রিকায় কাজ করতাম। সব বাদ দিয়ে নিজের আগ্রহের পেছনে ছুটেছিলাম।’ এই আগ্রহই কিন্তু পরে ইভানকে তাঁর ক্যারিয়ার গড়ার পথ দেখিয়েছে। ইভান এখনো ডিজাইন করেন স্ন্যাপচ্যাটের স্টুডিওতে। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন তিনি কয়েক ঘণ্টা ডিজাইনের কাজ করে সময় কাটান। প্রধান নির্বাহী হয়েও ডিজাইনের কাজ কেন? তাঁর সোজাসাপ্টা উত্তর, ‘আনন্দ পাই তাই।’

২. অন্যকে অনুসরণ নয়
অন্যকে অনুসরণ না করতে পরামর্শ দিয়েছেন ইভান। তাঁর মতে, সমাজের দেখানো পথ অনুসরণ করা খুব সহজ। কিন্তু এর থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো, প্রথা ভেঙে সত্যিকারের নিজেকে খুঁজে বের করা। যাকে বলে স্বাতন্ত্র্য। ইভান যখন ছাত্র, অনেক বিখ্যাত উদ্যোক্তার বক্তব্য শোনার সুযোগ তাঁর হয়েছে। সে সময়ই পরিচয় হয়েছিল ইনচুয়েটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্কট কুকের সঙ্গে। কুকের কাছে অনুরোধ করে চাকরি নিয়েছিলেন তিনি। ছোট একটা দলে কাজ করতেন। সেই দলের সদস্য মাত্র তিনজন। ইভানের ভাষায়, ‘এই তিনজনকেই অজস্র কাজ করতে হতো। তখনই আমার মনে হয়েছিল, আমি এই কাজটা কেন করছি?’ এরপরই নতুন পথে তাঁর চলার শুরু।

৩. ভুল করুন, এগিয়ে যান
এটা সত্য যে কাজ করতে গেলে আপনি ভুল করবেন। যখন আপনি জানতে পারবেন, আপনি ভুল করেছেন, সেই ভুলটা মেনে নেওয়ার চেষ্টা করুন এবং এর জন্য ক্ষমা চান। এরপর সামনে এগিয়ে যান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘স্ন্যাপচ্যাটের আগে “ফিউচার ফ্রেশম্যান” নামে আমরা আরেকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিলাম কলেজগামী শিক্ষার্থীদের সাহায্য করার জন্য। কিন্তু এই প্রকল্পটা পুরো ব্যর্থ হয়েছিল। আমরা এই প্রকল্প নিয়ে প্রায় দেড় বছর কাজ করেছি। হতাশার বিষয় হলো, আমরা ছোট বোন কিংবা আমার সহযাত্রী ববির (স্ন্যাপচ্যাটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ববি মার্ফি) ছোট ভাই—তারা দুজনই সেই বছর কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করেছিল। কিন্তু ফিউচার ফ্রেশম্যান তাদের কোনো উপকারে আসেনি। তখন আমরা সারা দিন এটার পেছনে সময় দিতাম। এরপর অনুভব করলাম, আমাদের আসলে নতুন কিছু করা উচিত।’

৪. একাধিক ভাবনা
ঝুঁকি সব সময়ই থাকে। সব সময়ই হেরে যাওয়ার ভয় থাকে, ভুল করার ভয় থাকে। সফল হতে হলে বিভিন্ন ধরনের আইডিয়া বা ভাবনা নিয়ে কাজ করতে হয়। তাই সব ধরনের ভাবনাকে বিবেচনায় রাখতে পারলে ভালো। সেগুলো নিয়ে ভেবেচিন্তে সময় অনুযায়ী প্রয়োগ করা যায়। কোনো আইডিয়া নিয়ে সঠিক পর্যালোচনার আগেই কাজ করা বন্ধ করে দেওয়া উচিত নয়। ইভান তাঁর সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘স্ন্যাপচ্যাট নিয়ে কাজ শুরু করার সময় আমরা আরও কয়েকটি কাজ হাতে নিয়েছিলাম। এর মধ্যে ছবিনির্ভর আরেকটি প্রতিষ্ঠান পিকাবো অন্যতম। আমাদের কোনো ধারণা ছিল না মানুষ কোনটি গ্রহণ করবে।’

৫. কঠোর পরিশ্রম
‘কঠোর পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। আমি খুব সকালে ঘুম থেকে উঠি। কারণ সকালের ওই সময়টাই আমার নিজের সময় বলে মনে হয়। প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে সকাল ৭টার মধ্যে আমি কিছু সময় পাই কাজ করার জন্য।’ বলেছেন ইভান স্পিগেল। এই পরামর্শ নতুন কিছু নয়। তবু ইভান তাঁর বিভিন্ন বক্তৃতায়, সাক্ষাৎকারে বারবার মনে করিয়ে দিয়েছে—সফল হতে হলে পরিশ্রম করতেই হবে।

৬. লক্ষ্য স্থির করুন
আপনি সৃষ্টি করতে চান নাকি শ্রমিক হতে চান—এই প্রশ্নের উত্তর আপনাকে পথ দেখাবে। উদ্যোক্তা হবেন নাকি আরেকজনের স্বপ্নপূরণের জন্য কাজ করবেন, সেটা ঠিক করুন। ইভান মনে করেন, এই সিদ্ধান্ত আপনাকে সফল ক্যারিয়ারের পথ দেখাবে।

৭. কার্যকর নেটওয়ার্ক
‘আমার ধারণা, মানুষের সঙ্গে স্রেফ সাক্ষাৎ করা বা খোঁজখবর নেওয়া কোনো কার্যকর নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার জন্য উপযুক্ত পদ্ধতি নয়। এ ক্ষেত্রে আমি যা করতাম—এমন কাউকে যদি খুঁজে বের করতাম যাকে সত্যিই আমার ভালো লাগে বা যিনি প্রশংসার যোগ্য। আমি তাঁকে বিনা মূল্যে কাজ করে দিতে চাইতাম। এর মাধ্যমে আমি তাঁর কাছ থেকে কাজ শেখার সুযোগ হয়। এখন আমি সত্যিকার অর্থেই কিছু মেধাবী মানুষকে চিনি। আমার কোনো প্রশ্ন থাকলে বা কোনো সমস্যায় পড়লে তাঁদের কাছে যাই, সাহায্য পাই।’ ইভান বলেন। এখনকার সময়ে বারবার বলা হয়, ‘নেটওয়ার্ক’ গড়ে তোলা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেই নেটওয়ার্ক কীভাবে কার্যকর হতে পারে, সেই পরামর্শ পাওয়া যায় তাঁর এই মন্তব্যে।

৮. সহজ ভাবনা
খুব জটিল কিছু না ভেবে সহজ ভাবনাই যে কখনো কখনো কাজে আসে, সেই উদাহরণ দিতে গিয়ে ইভান স্পিগেল আবারও তাঁর ব্যর্থ প্রকল্প “ফিউচার ফ্রেশম্যান”–এর উদাহরণ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ফিউচার ফ্রেশম্যান প্রকল্পটা বেশ জটিল ছিল। সেটি ব্যর্থ হওয়ার পর আমরা ভাবলাম, কীভাবে সহজ কোনো প্রকল্প নিয়ে কাজ করা যায়। মানুষ যদি সেটা পছন্দ করে তবেই আমরা এগিয়ে যাব। এভাবেই স্ন্যাপচ্যাটের জন্ম।’

৯. সেবা নিশ্চিত করা
ইভান স্পিগেল বলেন, ‘একজন উদ্যোক্তার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, অন্যদের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে থাকা। এর মানে এই নয় যে, আমি অন্যদের আগেই বেশি টাকা আয় করব অথবা আমি একটি নির্দিষ্ট সেক্টরে সবার আগে ব্যবসা দাঁড় করাব। কিংবা আমি সবার আগে একটি দল তৈরি করব। এই এক ধাপ এগিয়ে থাকার মানে হলো, সেবা নিশ্চিত করা।’ তাঁর এই মন্তব্যের প্রতিফলন পাওয়া যায় জ্যাক মা, রিচার্ড ব্র্যানসনের মতো আরও বেশ কয়েকজন সফল উদ্যোক্তার কথায়। গ্রাহক সন্তুষ্ট থাকলেই আপনি এক ধাপ এগিয়ে থাকবেন।

১০. বুদ্ধিমান মানুষের সঙ্গ
ইভান স্পিগেল কিন্তু রাতারাতি প্রধান নির্বাহী বনে যাননি। এর আগে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে তিনি অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, শিখেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার অনেক বিষয়ে কৌতূহল ছিল। আমি মানুষের কাছে কাজ চাইতাম। বলতাম, আমি তোমার সঙ্গে কাজ করতে চাই, সেটা যে কাজই হোক। এভাবে আমি রেড বুলের বিপণন বিভাগের কাজ বাগিয়েছিলাম। পরে আমি আরেকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেছি, যেখানে আমার কাজ ছিল বাজারে নতুন নতুন কী ওষুধ আসছে, সেটা খুঁজে বের করা। খুব বিরক্তিকর কাজ। কিন্তু এর মধ্যে দিয়ে একটা বড় জিনিস শিখেছি। তা হলো, বুদ্ধিমান মানুষদের কাছ থেকে শেখা যায়।’

Advertisement