ইসলাম বিদ্বেষের অভিযোগে বরখাস্ত ১৫ কাউন্সিলরকে দলে পুর্নবহাল করেছে কনজারভেটিভ

ব্রিটবাংলা ডেস্ক : ইসলাম বিদ্বেষ বা বর্ণবাদী মন্তব্য সামাজিম মাধ্যমে শেয়ার করার অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া প্রায় ১৫ জন কাউন্সিলরকে দলে পুনর্বহাল করেছে কনজারভেটিভ পার্টি। দৈনিক গার্ডিয়ান পত্রিকার এক অনুসন্ধানে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সামাজিক মাধ্যমে সৌদি নাগরিকদের ‘বালি চাষি’ এবং এশিয়ানদের কুকুরের সঙ্গে তুলনা করে মন্তব্য করার পরেও অভিযুক্তরা তাদের দলীয় মেম্বারশীপ ফিরে পেয়েছেন। যদিও গত সপ্তাহে ইসলাম বিদ্বেষী মন্তব্যের অভিযোগে ১৫ জন সাধারণ সদস্যকে দল থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এর বাইরেও নতুন করে আরো অন্তত পাঁচজন সদস্য সামাজিক মাধ্যমে মুসলিমদের ক্যাভমেন এবং বেশির ভাগ মুসলিমদের সেক্স অফেন্ডার বলে মন্তব্য করে তা সামাজিত মাধ্যমে শেয়ার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
নিউজল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার পর ইংল্যান্ডে হেইট ক্রাইমের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৬শ শতাংশ। এমনকি লন্ডন মেয়ল সাদিক খানকে ইঙ্গিত করেও বিদ্বেষপূর্ন মন্তব্য শুনা যায়। এরমধ্যেই এক অনুসন্ধানে গার্ডিয়ান কনজারভেটিভ পার্টির ভেতরে ইসলাম বিদ্বেষ এবং বর্ণবাদী মন্তব্যকারী কাউন্সিলদের প্রতি দলের দুর্বলতার চিত্র তুলে ধরেছে।
গার্ডিয়ানের অনুসন্ধান জানা গেছে, যে ১৫ জন কাউন্সিলরকে বরখাস্ত করা হয়েছিল তাদের মধ্যে অনেকেই সামাজিক মাধ্যম ফেইসবুক এবং টুইটারে ইসলাম বিদ্বেষী বা বর্ণবাদী মন্তব্য করেছেন। এদের মধ্যে একজন হলেন সুয়েল বারা কাউন্সিলের কনজারভেটিভ লিডার এন্ড্রো বোলস। বর্নবাদী লিডার টমি রবিনসের প্রসংশা করে এবং ফেইসবুক এবং ইন্সট্রুগ্রামে তাকে নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদ জানিয়ে টুইট করার অভিযোগে এন্ড্রোকে পার্টি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। তবে বরখাস্তের ১৩ দিনের মাথায় তাকে দলে পুর্নবহাল করা হয়।
অন্যদিকে ২০১৭ সালের জুন মাসে, পেন্ডল বারা কাউন্সিলের কাউন্সিলর রোসমেরি ক্যারলকে তিন মাসের জন্যে পার্টি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। তিনি এশিয়ানদের কুকুরের সঙ্গে তুলনা করে ফেইসবুকে একটা জৌক শেয়ার করেছিলেন। পরবর্তীতে লোকাল ইলেকশনের দিন ভোট গণনায় তাকে উপস্থিত থাকার সুযোগ দেওয়া হয় স্থানীয় কনজারভেটিভ পার্টির পক্ষ থেকে।
এদিকে ডোভার ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলের কাউন্সিলর বব ফ্রস্ট তিনবার বরখাস্ত এবং দলে পুর্নবহালের পর গত বছর তিনি নিজেই পার্টি ত্যাগ করেন। জানা গেছে, ২০১১ সালে প্রথম তিনি লন্ডন রায়টারদের নিয়ে ফেইসবুকে মন্তব্য করার অভিযোগে একবার বরখাস্ত হয়েছিলেন। ২০১৫ সালে রোমানিয়ান নাগরিকদের নিয়ে বর্ণবাদী মন্তব্যের অভিযোগে দ্বিতীয়বার তাকে বরখাস্ত করা হয়। একই সময় তিনি সৌদি নাগরিকদের বালি চাষি বলেও টুইটারে মন্তব্য করেছিলেন। এরপর গত বছরের মে মাসে আরো একটি বর্ণবাদী মন্তব্য করে পার্টির তদন্তের মুখে পড়েন। এইবার তিনি নিজে থেকেই পার্টি ত্যাগ করেন।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে বরখাস্ত হন সলিহল বারা কাউন্সিলের কাউন্সিলর জ্যাফ পটস। টুইটারে তিনি মুসলিমদের ফেরত পাঠানো উচিত এবং পাকিস্তানি সম্পর্কে দুটি মন্তব্য করেছিলেন। তবে নভেম্বরেই তাকে পার্টিতে পুর্নবহাল করা হয়। যদিও তিনি এখনো স্বতন্ত্র কাউন্সিলর হিসেবেই রয়েছেন। তবে পার্টির কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন বহাল তবিয়তে।
অন্যদিকে ২০১৩ সালে ফ্রান্সের মুসলিমদের নিয়ে একটি বিদ্বেষপূর্ন মন্তব্য করায় কলডারডেইলের কাউন্সিলর মাইক পাইনকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। তাকেও ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে টোরি পার্টিতে।
এদিকে কনজারভেটিভ পার্টির ভেতরে এ ধরনের মুসলিম বা ইসলাম বিদ্বেষী বা বর্ণচোরদের প্রতিরোধ করতে দলের ভেতরে একটি নীতিমালা প্রণয়নের দাবী জানিয়েছেন দ্যা কনজারভেটিভ মুসলিম ফোরামের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আমিন। অন্যদিকে দলের একজন মূখপাত্র বলেছেন, কনজারভেটিভ ক্যাম্পেইন হেড কোয়ার্টার্স এসব বিষয়ে অবগত রয়েছে। এর মধ্যে কিছু কিছু কেইস পার্টির স্থানীয় পর্যায় থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে হেড কোয়ার্টারে অভিযোগগুলো আসলে অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদিও মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেইনের এসিসটেন্স সেক্রেটারী মিকদাদ ভার্সি মনে করেন, অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে কনজারভেটিভ পার্টি তাদের অভ্যন্তরীন সমস্যাগুলো কার্পেটের নিচে লুকিয়ে রেখে বাইরে সবাইকে দেখাতে চাচ্ছে তারা কত ভাল এবং স্বচ্ছ। আসলে বাস্তবে তা নয়।

Advertisement