ওজন কমাতে সকালের নাশতা

ব্রিট বাংলা্ ডেস্ক :: দেশে একটা প্রবাদ প্রচলিত রয়েছে, ‘সকালের নাশতা খেতে হয় রাজার মতো, দুপুরে প্রজার মতো এবং রাতের খাবার কাঙালের মতো।’ সকালের নাশতা আমাদের শরীরে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। কিন্তু বেশি ভাগ মানুষ বা কর্মজীবীরা সকালের নাশতা পারত পক্ষে খান না। খেলেও তা নামমাত্র। সারা দিন প্রাণবন্ত ও সুস্থ থাকতে সকালের নাশতা শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন সকালে স্বাস্থ্যকর এবং ভারী নাশতা খেলে মস্তিষ্ক পুরো দিনের জন্য তৈরি হয়ে যায় এবং সারা দিন শক্তি পাওয়া যায়। এ ছাড়া যাঁরা ওজন কমাতে চান, তাঁদের জন্য সকালের নাশতার উপকরণগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সকালের নাশতার পুষ্টিকর উপকরণগুলো তুলে ধরা হলো।

ডিম
সকালের স্বাস্থ্যকর নাশতায় সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপকরণ হলো ডিম। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল। আপনার শরীরের ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা সম্পূর্ণরূপে পূরণ করতে পারে। প্রোটিনের সবচেয়ে ভালো উৎস হচ্ছে ডিম। ক্যালরিও থাকে বেশ কম। অবশ্য যাঁদের জন্য ডিমের কুসুম ক্ষতিকর, তাঁদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কুসুম ছাড়াই ডিম খাওয়া উচিত।

কলা
কলায় প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি আছে। তাই সকালের নাশতায় কলা খেলে সারা দিন আপনি থাকবেন সতেজ। দ্রুত এবং দীর্ঘ সময় পর্যন্ত শরীরে শক্তি জোগায়। সকালের নাশতায় কলা খেলে শরীরে শক্তির সঞ্চার হয় এবং ঘুম থেকে ওঠার পর দুর্বলতা কেটে যাবে। কলায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে। তাই হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য কলা একটি উপকারী ফল। সকালে কলা খেলে দাঁতের উপকার হয়। পেটের চর্বিও কমে। হজমে সহায়তা করে এবং পেটফাঁপা সমস্যা সমাধান করে। কলায় প্রচুর পটাশিয়াম থাকে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ভালো।

দই
দইয়ে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি রয়েছে। উপাদানগুলো হাড়ের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সকালের নাশতায় নিয়মিত দই খেলে হাড় মজবুত হয়। সকালে অনেকেই ভারী নাশতা খান। এর ফলে হজমে সমস্যা হতে পারে। খাবার সহজে হজম করতে সহায়তা করে দই। উপকারী অনেক ব্যাকটেরিয়া রয়েছে দইয়ের মধ্যে। এ ব্যাকটেরিয়াগুলো হজমে সহায়তা করে। যাঁরা ত্বকের বিষয় যত্নশীল, তাঁরা সকালের নাশতায় দই রাখুন। দইয়ের উপাদান ত্বককে মসৃণ করে। দইয়ের ল্যাকটিক অ্যাসিড ত্বককে পরিষ্কার করে এবং মৃত কোষ দূর করে। নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় দই খেলে দেহের ওজন কমে। দই খেলে দেহের চর্বি কমে এবং সার্বিকভাবে ওজন কমাতে সহায়তা করে।

কফি
সকালে ঘুম থেকে উঠে নাশতার সময়ে নিজেকে রিফ্রেশ করতে এক কাপ চিনি ছাড়া কফির বিকল্প নেই। কফি ওজন কমাতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে সকালের নাশতায় কফি খেলে শারীরিক কার্যক্ষমতা বাড়ে। যাঁদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাঁরা কফি খেলে উপকার পাবেন। কফি ডায়াবেটিসের আশঙ্কাও কমায়। মস্তিষ্ককে সুরক্ষা দেয় কফি। সকালের নাশতায় এক কাপ কফি খেলে মানসিক ও শারীরিক চাপ মোকাবিলা করতে খানিকটা হলেও সহায়তা করবে।

বিভিন্ন প্রকার ফল
সকালের নাশতার জন্য সবচেয়ে ভালো খাবার হচ্ছে ফলমূল। সকালের নাশতায় বিভিন্ন প্রকার মৌসুমি ফল রাখতে পারেন। এর ফলে সকাল সকাল আপনার শরীরে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করবে। বিদেশি ফলের পাশাপাশি সকালের নাশতায় দেশীয় ফল রাখলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।

গ্রিন টি
যাঁরা সকালের নাশতায় কফি খেতে পছন্দ করেন না, তাঁরা গ্রিন টি পান করতে পারেন। যেকোনো ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালের নাশতায় এক কাপ গ্রিন টি খেলে হৃদ্‌যন্ত্র অনেক ভালো থাকে। ডায়াবেটিসের মতো রোগকে নিয়ন্ত্রণে গ্রিন টি বেশ কার্যকর। ত্বক ও চুলকে সুন্দর রাখতেও উপকারী। এ উপকরণটি সকালের নাশতায় রাখলে অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। শরীরের বিভিন্ন অংশের অতিরিক্ত মেদ ঝরিয়ে দেয়।

ওটস
সকালের নাশতার টেবিলে ওটস রাখতে পারেন। এটি শরীরের জন্য বেশ উপকারী উপকরণ। এতে প্রচুর আঁশ রয়েছে। ওজন কমাতে ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে এর জুড়ি নেই।

আটার রুটি
রুটি ছাড়া কি সকালের নাশতা হয়? উত্তর না। প্রায় প্রত্যেক ঘরেই সকালের নাশতার জন্য রুটি তৈরি করা হয়। লাল আটার রুটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও অন্যান্য পুষ্টিকর খাদ্য উপাদান থাকে। এই আটার রুটি পছন্দ না করলে সাদা আটার রুটিই খেতে পারেন। কারণ সাদা আটাতেও প্রচুর পুষ্টিগুণ আছে, যা শরীরে শক্তি বাড়ায় এবং রক্ত চলাচল বাড়িয়ে শরীরকে সচল রাখে। অনেকেই আছেন, যাঁরা কিছু খেলেই হজম সমস্যায় ভোগেন। যাঁরা সহজে কিছু হজম করতে পারেন না, তাঁরাও সকালের নাশতায় রুটি বেছে নিতে পারেন। কারণ রুটি আঁশযুক্ত গম দিয়ে তৈরি হয় এবং এটা সহজেই হজম করা যায়। রুটিতে উপস্থিত ভিটামিন ই, ফাইবার ও সেলেনিয়াম শরীরে ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। তাই প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রুটি রাখুন।

Advertisement