কর্মীর আস্থা পেতে কী করবেন?

অর্ণব সান্যাল :: প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই একজন দণ্ডমুণ্ডের কর্তা থাকেন। তাঁকেই বলা হয় ‘বস’। পুরো প্রতিষ্ঠানের নেতাও তিনি। তাঁর পরিকল্পনাতেই অভীষ্ট লক্ষ্য পূরণের দিকে এগিয়ে যায় একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ওই দলনেতা যদি কর্মীদের আস্থাভাজন না হন, তখন? এমন পরিস্থিতিতে পুরো প্রতিষ্ঠানই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই কর্মীদের কাছ থেকে কাজ আদায় করতে চাইলে অবশ্যই প্রথমে তাঁদের আস্থাভাজন হওয়া জরুরি।

কিন্তু কর্মীদের আস্থাভাজন হওয়া সহজ কথা নয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নেতার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসহীনতার জন্য কর্মীদের মধ্যে একটি নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি কর্মীদের সার্বিক কাজেও প্রভাব ফেলে। ফলে, দিন শেষে ভুগতে হয় প্রতিষ্ঠানকে। কারণ, তখন আর প্রত্যাশিত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হয় না।

প্রশ্ন হলো, কর্মীদের আস্থা অর্জনে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কী করতে পারেন? গবেষকেরা দেখেছেন, এ ক্ষেত্রে একজন দলনেতার তিনটি বিষয়ে এগিয়ে থাকা প্রয়োজন। আস্থা অর্জনের ক্ষেত্রে মূল উপাদানই হলো তিনটি। এগুলো হলো ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরি, সঠিক বিবেচনা ও দৃঢ়তা।

মনে রাখতে হবে, মানবিক সম্পর্কের সুতো ধরেই আস্থা তৈরি হয়। তাই কর্মীর সঙ্গে একটি সহজ ও ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরির দিকে নজর দিতে হবে প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে। এ ক্ষেত্রে অন্য কর্মীদের বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধার দিকটিও তাঁকে দেখতে হবে। কর্মীদের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তোলা প্রয়োজন। কিছু কর্মীর মধ্যে কাজের সূত্রে মনোমালিন্যও সৃষ্টি হতে পারে। সেগুলোও দক্ষতার সঙ্গে মিটিয়ে দিয়ে সব কর্মীকে এক সুতোয় গাঁথতে হবে নেতাকে। আবার কোনো কর্মী ভালো কাজ করে থাকলে তার ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখানোও জরুরি। এভাবেই কর্মীদের সঙ্গে একটি পারস্পরিক সহায়তামূলক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে নেতাকে।

নেতা তিনিই, যিনি যেকোনো ‘সংকটময়’ মুহূর্তে সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন। এ জন্যই একজন ব্যক্তিকে অন্য কর্মীরা নেতা হিসেবে মেনে নেন। আপনি যদি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দিতে না পারেন এবং ওই সময় দ্বিধাপূর্ণ প্রতিক্রিয়া দেখান, তবে কোনো কর্মীই আপনাকে নেতা হিসেবে শ্রদ্ধা করবেন না। তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঠিক বিবেচনা বোধ থাকতে হবে। এই গুণ তখনই গড়ে উঠবে, যখন কর্মীদের তুলনায় নেতার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান বেশি থাকবে। মোদ্দাকথা, কর্মীদের পথ দেখানোর মূল কাজটি করতে হবে নেতাকেই।

কর্মীদের আস্থা অর্জনের চূড়ান্ত উপাদান হচ্ছে চারিত্রিক দৃঢ়তা। নেতাকে এই গুণ অর্জন করতে হবে। বস যদি কর্মীদের কোনো প্রতিশ্রুতি দেন, তবে তা রক্ষা করতে সচেষ্ট থাকতে হবে। কারণ, প্রতিশ্রুতি রক্ষা ও কর্মীদের ন্যায্য দাবি পূরণ করতে না পারলে নেতা-কর্মীর সম্পর্ক আর শ্রদ্ধাপূর্ণ থাকে না। এ জন্য কর্মীর সামনে নিজেকে ‘রোল মডেল’ হিসেবে উপস্থাপন করা জরুরি।

সবচেয়ে বড় কথা, একজন নেতাকে কর্মীদের কথা শোনার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। নেতা মানেই শুধু মঞ্চে বসে নির্দেশ দিয়ে যাওয়া নয়; বরং কোন কাজটি কীভাবে করলে কার্যকর ফল পাওয়া যাবে, সেটি হাতে-কলমে দেখিয়ে দিতে হবে। কর্মীর ওপর শুধু ‘বসগিরি’ ফলালেই ভালো নেতা হওয়া যায় না। তার জন্য কর্মীর সঙ্গে শ্রদ্ধাপূর্ণ সহজ সম্পর্ক গড়ে তোলা দরকার, কর্মীর বিপদে-আপদে পাশেও থাকা চাই। তবেই সেই নেতার ওপর আস্থা পাবেন কর্মীরা। এতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যেমন সফল হয়ে উঠবেন, তেমনি লাভ হবে প্রতিষ্ঠানেরও।

Advertisement