কলকাতায় এবার দাড়ি-পাঞ্জাবি-পায়জামা দেখে অতিথি বিদায়

ব্রিট বাংলা ডেস্ক : দাড়ি ও পাঞ্জাবি-পায়জামা দেখেই কয়েকজন মাদরাসা শিক্ষককে অতিথিশালা থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কলকাতায়। শিক্ষকদের বক্তব্য, তাদের থাকার ব্যাপারে অন্যান্য আবাসিকরা আপত্তি করেছেন বলে দাবি করেছেন অতিথিশালার ম্যানেজার ও কর্মীরা। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ডয়চে ভেলে বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কলকাতার সল্টলেকের একটি অতিথিশালায় ঘর ভাড়া করেছিলেন মালদহের মাদরাসার কয়েকজন শিক্ষক। ২১ সেপ্টেম্বর সকালে ১০ জন শিক্ষক ট্রিনিটি গেস্ট হাউসে ওঠার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাদের ঘর ছেড়ে দিতে বলা হয়। অন্যত্র ঘরের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা হয়নি বলে অভিযোগ। বৃষ্টির মধ্যে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর উড়ালপুলের নিচে তারা আশ্রয় নেন। শিক্ষকদের বক্তব্য, তাদের থাকার ব্যাপারে অন্যান্য আবাসিকরা আপত্তি করেছেন বলে দাবি করেছেন অতিথিশালার ম্যানেজার ও কর্মীরা।

ধর্মীয় পরিচয়ের জন্য শিক্ষার্থীদের ঘর ভাড়া দেওয়া হয়নি, এই ঘটনা একাধিকবার সামনে এসেছে। শুধু ধর্মবিদ্বেষ নয়, অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রেও এ ধরনের বৈষম্যের নজির কলকাতায় আছে। কিন্তু অনলাইনে বুকিং নেওয়া ঘরে চেক-ইনের পর সেখান থেকে বের করে দেওয়ার মতো ঘটনা আগে প্রকাশ্যে আসেনি।

মালদহের কালিয়াচকের বাসিন্দা আলিপুর মাদরাসা শিক্ষাকেন্দ্রের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ মাহবুবুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার জীবনে কখনো এ ধরনের অভিজ্ঞতা হয়নি। কতবার কলকাতায় এসেছি। এবার আমরা ছাত্রদের কিভাবে পড়াবো, বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান। সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে বেঁচে থাকবো কিভাবে?’ শিক্ষকের এই আক্ষেপ দূর করাই এখন কলকাতার কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে আল-কায়েদা জঙ্গি সন্দেহে কয়েকজন গ্রেপ্তার হওয়ার পরপরই দাড়ি-পাঞ্জাবি-টুপির প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ পেলো সল্টলেকের ঘটনায়। প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ অমল মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, মুসলমান-খ্রিস্টান-বৌদ্ধরা আমাদের জাতির অংশ। কোনো সম্প্রদায়ের সদস্যকে জঙ্গি সন্দেহে ধরা হলে সবাই দায়ী হয়ে যায় না। সংখ্যাগরিষ্ঠের এই অধিকার নেই যে, শিক্ষকদের ধর্মীয় পরিচয়ের জন্য গেস্ট হাউস থেকে বের করে দিতে হবে। এটা ভারতীয় ঐতিহ্যের বিরোধী।

শিক্ষকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক মইদুল ইসলাম। তার অভিযোগের ভিত্তিতে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। যদিও অতিথিশালার কর্ণধার অমিত ভট্টাচার্য দাবি করেছেন, শিক্ষকরা সেখানে যাননি। আগে থেকেই সব ঘর ভর্তি ছিল।

ভাষা ও চেতনা সমিতির সাধারণ সম্পাদক, অধ্যাপক ইমানুল হক বলেন, আমাদের রাজ্যে চাপা সাম্প্রদায়িকতা রয়েছে। তাতে ঘৃণার চাষ হচ্ছে। হোয়াটসঅ্যাপে সবসময় ঘৃণার প্রচার চলছে। এই গেস্ট হাউসের আবাসিক থেকে কর্মীরা এই প্রচারের শিকার হয়েছেন। তাদের ভুল বোঝানো হয়েছে। আসলে সবটাই দেশের অর্থনৈতিক সংকট থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা। মইদুল ডয়চে ভেলেকে বলেন, সংখ্যালঘুদের আক্রমণের মুখে ফেলছে বিজেপি। তারই পরিণামে এ ধরনের ঘটনা। রবীন্দ্র-নজরুলের বাংলায় রেহাই পাচ্ছে না।

Advertisement