কাউন্সিল অব মস্কের ঈদ ডিনার অনুষ্ঠিত

লন্ডন, ৪ জুলাই: প্রতিবারের মতো এবারও টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র, কাউন্সিলার ও মুসলিম-ননমুসলিম ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হলো কাউন্সিল অব মস্কের বার্ষিক ঈদ ডিনার। ২৭ জুন বুধবার সন্ধ্যায় লন্ডন মুসলিম সেন্টারের প্রথম তলায় তিন শতাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এই ঈদ ডিনারে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ টাওয়ার হ্যামলেটসের গড়তে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন নেতৃবৃন্দ। কাউন্সিল অব মস্কের চেয়ারম্যান হাফিজ মাওলানা শামসুল হক-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশ পরিচালনা করেন সেক্রেটারি জেনারেল হীরা ইসলাম।

অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র জন বিগস, টাওয়ার হ্যামলেটস ইন্টারফেইথ ফোরামের চেয়ারম্যান অ্যালান গ্রীন, চ্যারিটি সংস্থা হিউম্যান রিলিফ ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা ওসমান ক্বামার ও ইসলামিক হেলপ কর্মকর্তা ফারুক শাহজাদ। অনুষ্ঠানে কমিউনিটি কোহিশন রক্ষায় রামাদ্বানের ভুমিকা শীর্ষক আলোচনা পেশ করেন মুসলিম কাউন্সিল অব বৃটেনের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. মুহাম্মদ আব্দুল বারী এমবিই। শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন হাফিজ আব্দুল্লাহ নোমান আল মাদানী।

মেয়র জন বিগস অনুষ্ঠানে উপস্থিত নবনির্বাচিত কাউন্সিলারদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এবার ৪৫ কাউন্সিলারের মধ্যে ২৮জন বাঙালি নির্বাচিত হয়েছে। এটি কমিউনিটির জন্য একটি বিশাল শক্তি। আমরা মানুষকে বেশি করে সেবা দিতে পারবো। তিনি বলেন শক্তিশালী পার্টনারশীপ ছাড়া জনগনকে কাঙ্খিত সেবা দেয়া যায় না। তাই ইস্ট লন্ডন মস্ক ও কাউন্সিল অব মস্কের মতো প্রতিষ্ঠানের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। তাদের সঙ্গে কাধে কাঁধ রেখে আমরা বারার মানুষের জীবন মানের উন্নয়নে কাজ করতে পারছি। তিনি বলেন, শুধু কমিউনিটির জন্যই নয়, তাদের বংশধরদের জন্য একটি নিরাপদ বারা গড়তে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।

তিনি বলেন, আমি এমন একটি বারার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি যেখানে ৫০টিরও বেশি মসজিদ রয়েছে। যে মসজিদগুলো কমিউনিটির মানুষকে বহুমুখী সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এটা আমার জন্য একটি গর্বের বিষয়। ড. মুহাম্মদ আব্দুল বারী বলেন, প্রতিবছর রামাদ্বান এলেই বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের মধ্যে একটি ভিন্ন আমেজ পরিলক্ষিত হয়। মুসলমান প্রাকটিসিং হোন আর নন-প্রাকটিসিং হোন তাতে কিছু যায় আসেনা। রামাদ্বান মানুষের আচরনে পরিবর্তন এনে দেয়। এটি আত্মশুদ্ধি লাভের মাস। খাবারের অভাবে যে ব্যক্তি অভুক্ত থাকে তার যন্ত্রনা আর রোজা রাখার কারণে না খেয়ে থাকার যন্ত্রনা একই। তবে রামাদ্বানের মূল উদ্দেশ্য তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জন। তিনি বলেন, রামাদ্বান হচ্ছে দান করার এক সর্বোত্তম সময়। এই সময়ে বৃটিশ মুসলিমেরা প্রায় ১শ মিলিয়ন পাউন্ড দান করে থাকেন। তিনি বলেন, মুসলমানেরা অন্যান্য সকল ধর্মাবলম্বীর চেয়ে বেশি দানশীল। একটি পরিসংখ্যানে ওঠে এসেছে, একজন বৃটিশ মুসলিম বছরে কমপক্ষে ৩৭১ পাউন্ড দান করেন থাকেন।

টাওয়ার হ্যামলেটস ইন্টারফেইথ ফোরামের চেয়ারম্যান অ্যালান গ্রীন কাউন্সিল অব মস্ক নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, প্রতি বছর ঈদ ডিনার আয়োজনের মাধ্যমে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে টাওয়ার হ্যামলেটেসের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গকে একই ছাতার নিচে একীভূত করে কাউন্সিল অব মস্ক এক অনন্য ভুমিকা পালন করছে।
কাউন্সিল অব মস্কের চেয়ারম্যান হাফিজ মাওলানা শামসুল হক অনুষ্ঠানে উপস্থিত টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নবনির্বাচিত কাউন্সিলারদেরকে কমিউনিটির সুখ-দুঃখে পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান। তিনি কাউন্সিল অব মস্কের বিভিন্ন কর্মকান্ডের কথা তুলে ধরে বলেন বলেন, টাওয়ার হ্যামলেটেসে বর্তমানে এই একটি মাত্র সংগঠন, যে সংগঠন দলমত নির্বিশেষে সকলকে একত্রে সমবেত করতে পারে। তিনি কাউন্সিল অব মস্ক পরিচালনায় কাউন্সিলের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, আমরা আশাবাদী কাউন্সিল কিছু সংখ্যক মানুষকে নিয়ে কাজ করবে না বরং সকলকে সঙ্গে নিয়ে ওয়ান টাওয়ার হ্যামলেটস গড়তে কাজ করবে। তিনি উপস্থিত অতিথিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আপনাদের উপস্থিতি আমাদের অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করেছে।

কাউন্সিল অব মস্কের সেক্রেটারি জেনারেল হীরা ইসলাম ঈদ ডিনার আয়োজনে যারা স্পনসর করে সহযোগিতা করেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানান। বিশেষ করে ক্যানারী ওয়ার্ফ গ্রুপের সিনিয়র কর্মকর্তা হাওয়ার্ড ডোবারের কথা উল্লেখ করেন। তাছাড়া চ্যারিটি সংস্থা হিউম্যান রিলিফ ফাউন্ডেশন ও ইসলামিক হেলপকে তাদের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, কাউন্সিল অব মস্ক নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে স্থানীয় মসজিদগুলোর উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এই সংগঠনের পৃষ্ঠপোষকতায় টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সহযোগিতা করা দরকার।

Advertisement