কেউ যেন ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। এখানে সব ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে তার ধর্ম পালন করবে। এত রক্ত ক্ষয়, এত ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে আর যেন না ঘটে।মঙ্গলবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শেখ রাসেলের ৫৮ তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব বলেন। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছিলেন।সংবিধান সব মানুষকে স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনের অধিকার দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সংবিধানে এই নির্দেশনা দেওয়া আছে। ইসলাম ধর্মও সেই কথাই বলে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না। কাজেই সেই বাড়াবাড়ি যেন কেউ না করে; সেটাও আমরা চাই। এই দেশের সব মানুষ যাতে শান্তিতে বসবাস করতে পারে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, খুনিদের প্রতি খালেদা জিয়ার এই পক্ষপাতিত্বের কারণ কী? কারণটা খুব স্পষ্ট। খুনি মোস্তাকের সঙ্গে জিয়াউর রহমান সম্পূর্ণভাবে এই খুনের সঙ্গে জড়িত ছিল। এই রাসেলকে সর্বশেষে হত্যা করা হয়। বলা হয়েছিল ওই ছোট্ট টুকু যেন বাঁচে না। এই নির্দেশটা কে দিয়েছিল? কারা দিয়েছিল? সব শেষে, সব থেকে এটাই কষ্টের।শেখ হাসিনা বলেন, এইদিকে চাচার লাশ; ওইদিকে কামালের লাশ, আব্বার লাশ, মায়ের লাশ। সব মাড়িয়ে ওপরে নিয়ে তাকে সবার শেষে নির্মমভাবে হত্যা করে। অথচ রাসেল ছোটবেলা থেকে এত সহজ-সরল ছিল। তার জীবনের কোন দাবি ছিল না। একটাই স্বপ্ন ছিল সেনা কর্মকর্তা হবে।শেখ হাসিনা বলেন, যখন বিরোধী দলে ছিলাম তখনো চেষ্টা করেছি এখনো চেষ্টা করি এই দেশের শিশুরা তাদের লেখাপড়া, চিকিৎসা ব্যবস্থা ঠিক রাখতে। তারা যেন নিয়মিত স্কুলে যেতে পারে। আজকে যেমন আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ সেইটা তৈরি করার জন্য তাদের প্রস্তুত করা, ট্রেনিংসহ সব রকম ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।

সরকার প্রধান বলেন, শিশুর নিরাপত্তা, শিশু অধিকার আইন তো জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে করে দিয়ে গেছেন। প্রাথমিক শিক্ষাটাকে অবৈতনিক করে দিয়ে গেছেন, বাধ্যতামূলক করে দিয়ে গেছেন। কাজেই আমার বাবার আদর্শ নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের এই দেশের শিশুরা যেন আর এই নির্মমতার শিকার না হয়। কিন্তু, দুর্ভাগ্য আমরা এখনো সেই নির্মমতা দেখি। কিন্তু এইটা যেন না হয়।দেখেছি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে কীভাবে হত্যা করা হচ্ছে, জ্যান্ত মানুষ-শিশুকে গুলি পর্যন্ত করা হচ্ছে। এই খালেদা জিয়া বিরোধী দলে থাকতে অগ্নি সন্ত্রাস করে চলন্ত বাসে আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে। বাপ দেখেছে নিজের চোখের সামনে আগুন পুড়ে সন্তান মারা যাচ্ছে। সে রকম নিষ্ঠুর ঘটনা তো বাংলাদেশে ঘটেছে। এটাই হচ্ছে সব থেকে দুর্ভাগ্য এই বাংলাদেশের।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এইটুকু চাইব এখানে মানবতার প্রশ্ন যারা তুলে তারা যেন এই ঘটনাগুলো ভালোভাবে দেখে যে বাংলাদেশে কী ঘটল। কিন্তু আমরা সরকারে আসার পর থেকে আমাদের প্রচেষ্টা যে কোনো শিশু রাস্তায় ঘুরে বেড়াবে না, টোকাই থাকবে না। তাদের যেন একটা ঠিকানা থাকে, তারা যেন একটু ভালোভাবে বসবাস করতে পারে।তিনি বলেন, আমাদের একটাই লক্ষ্য এই দেশের প্রতিটি মানুষ একটা ঘর পাবে গৃহহীন মানুষ। প্রতিটি মানুষ শিক্ষা পাবে, চিকিৎসা পাবে; ভালোভাবে বাঁচবে। প্রতিটি শিশু তার মেধা, জ্ঞান, বুদ্ধি বিকশিত হতে পারবে। বাংলাদেশকে তারা যেন সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। সেই চেষ্টাই আমি করে যাচ্ছি।বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হবে না বলে দেশে আইন হয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বে অনেকই মানবাধিকারের কথা তোলে। আমাকে অনেক সময় মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন করে। তখন আমার মনে হয়। আমি জিজ্ঞেস করি, তাঁদের কী অধিকার আছে এ প্রশ্ন করার। যেখানে আমার বাবা, মা, ভাইদের হত্যা করার পরে বিচার চাইতে পারিনি।

সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের সময়ে কীভাবে সেনাবাহিনী সুশৃঙ্খল ছিল- সেই প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘৭৫ এর পর বাংলাদেশে ১৯টা ক্যু হয়েছে। আমি জানি বিএনপির অনেক নেতা, বা বিএনপিতে আগে ছিল তারা অনেকে দাবি করে জিয়াউর রহমানের হাতে সেনাবাহিনী খুব নাকি ডিসিপ্লিন ছিল। শক্তিশালী হয়েছে। সেখানে আমার প্রশ্ন, ১৯ ক্যু যখন হয় একটা দেশে, অর্থ্যাৎ ৭৫-৮১ এর মধ্যেই ১৯টা ক্যু হয়েছিল। তাহলে সেই দেশে সেনাবাহিনী ডিসিপ্লিন থাকে শক্তিশালী থাকে এই দাবি করে কোন মুখে। আর এ কথা বলেই বা কোন মুখে?’তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান শুধু জাতির পিতার হত্যার সঙ্গে জড়িত তাই নয়। সে তো সেনাবাহিনীর হাজার হাজার সৈনিক ও কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে। বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের হত্যা করেছে।শেখ রাসেলের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, রাসেল আমাদের সবার ছোট। ৬৪ সালে জন্ম। বেঁচে থাকলে এখন ৫৭ বছর বয়স হতো। কিন্তু মাত্র ১০ বছরে বয়সে তাকে হারিয়ে যেতে হলো ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে। আমার হাত ধরেই কিন্তু রাসেল হাঁটা শিখে। আমরা পাঁচটা ভাইবোন ছিলাম। সে আমাদের চারজনের অত্যন্ত আদরের। কিন্তু বাবার স্নেহ বঞ্চিত।গণভবন প্রান্ত থেকে আলোচনা সভার সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বক্তব্য রাখেন, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ।

Advertisement