ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: ট্রাম্প প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে শনিবার সৌদি তেল স্থাপনায় হামলা ইরান থেকে হয়েছে এবং এটা ছিল ক্রুজ মিসাইল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তার বরাতে বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে এমন তথ্য দিয়েছে।
আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এ সংশ্লিষ্ট প্রমাণাদি হাজির করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
ইরানের মাটি থেকে ক্রুজ মিসাইল দিয়ে সৌদিতে হামলা হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র কি নিশ্চিত? জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, হ্যাঁ, অবশ্যই।
কতটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, এতটা বিস্তারিত তথ্য আমার কাছে নেই।
এর আগে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তারা ওয়ালস্ট্রিট জার্নালকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা সৌদি আরবকে গোপন প্রতিবেদন দিয়েছেন, যাতে ইরান এই হামলা চালিয়েছে বলে আভাস দেয়া হয়েছে।
তারা বলেন, অন্তত ২০টি ড্রোন ও একডজন ক্ষেপণাস্ত্র এ হামলায় জড়িত ছিল।
হামলার পরপরই ইরানকে দোষারোপ করতে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। তেল স্থাপনায় হামলার পর সম্ভাব্য জবাব নিয়ে আলোচনায় বসতে মঙ্গলবার সৌদি আরবে রওনা দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাইক পম্পেও।
এর আগে ওয়াশিংটন বলেছে, সৌদি তেল স্থাপনায় হামলা ইরান থেকে হয়েছে বলে তাদের কাছে প্রমাণ আছে।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ঘোষণা করেন যে আমাদের জবাব কী হবে তা নিয়ে আলোচনা করতে পম্পেও সৌদি আরবের পথে রয়েছেন।
ওয়াশিংটনে দেয়া এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট যেমনটি বলেছিলেন, আমরা কারও সঙ্গে কোনো যুদ্ধে জড়াতে চাই না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য প্রতিধ্বনিত করে পেন্স বলেন, আমাদের অস্ত্র প্রস্তুত। মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের ও মিত্রদের স্বার্থ সুরক্ষায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ওয়াশিংটনের সঙ্গে যে কোনো স্তরের আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দেয়ার পর দেশটির বিরুদ্ধে মার্কিন অবস্থান আরো কঠোরতর হয়েছে।
কাজেই জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে নাটকীয় বৈঠকের আশা ধুলায় মিশে গেছে বলেই ধরে নেয়া যায়।
ক্যালিফোর্নিয়ায় এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, কূটনৈতিকভাবে সম্ভব নয় বলে মনে হওয়া এমন কিছু নিয়ে আমার মথা ঠাণ্ডা থাকে। আমি কোনো কিছুই উড়িয়ে দিচ্ছি না। কিন্তু তার সঙ্গে বৈঠকে বসাকে আমি পছন্দ করছি না।
শনিবারে সৌদি তেল স্থাপনায় হামলার দায় স্বীকার করেছে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। এতে মার্কিন মিত্র পেট্রো-রাষ্ট্রটির তেল উৎপাদন অর্ধেকের বেশি কমে যায়।
কিন্তু হুতিদের দাবি নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন যুক্তরাষ্ট্রের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, যখন হুতিরা বলছেন, তারা ১০টি ড্রোন ব্যবহার করেছেন, তখন একটি সৌদি তেল স্থাপনায় অন্তত ১৭ বার হামলা হয়েছে। আরেকটিতে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলায় সক্ষম সামরিক অস্ত্র দিয়ে দুই বার হামলা হয়েছে।
তিনি বলেন, ইয়েমেন থেকে সৌদি লক্ষ্যবস্তুতে হামলায় সক্ষম কোনো ধরনের ড্রোন কিংবা ক্রুজ মিসাইল মোতায়েন করা হয়নি। এটা সম্ভব না।
ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের বিরুদ্ধে ২০১৫ সাল থেকে লড়াই করে আসছেন হুতি বিদ্রোহীরা। এতে দারিদ্র্য রাষ্ট্রটি আঞ্চলিক বৈরী তেহরান ও রিয়াদের ছায়াযুদ্ধের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
ইরানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মধ্যপ্রাচ্যে ইরনের প্রভাব খর্ব করতে চাচ্ছে মার্কিন প্রশাসন।
চার বছর আগে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে সই করা ইরানের পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার পর দুই দেশের সম্পর্কে অবনতি ক্রমে বাড়ছে।
ট্রাম্প বলেন, তেহরান প্রতারণা করছে এবং গোপন পরমাণু অস্ত্র বানাচ্ছে, যা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে ইরানকে তার হাঁটুর কাছে নিয়ে যাওয়া।
টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের প্রচার অর্থহীন। ইরানের কর্মকর্তারা সর্বসম্মতভাবে মার্কিনিদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে নারাজ।
তার মতে, যখন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে, তখন সরাসরি আলোচনা অসম্ভব।