গলাচিপা উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন শাহর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: পটুয়াখালীর গলাচিপায় নারী আইনজীবীকে পেটানো সেই উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা হয়েছে।

রোববার পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে গলাচিপা উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন শাহকে আসামি করে অভিযোগ দায়ের করেন ওই আইনজীবী উম্মে আসমা আঁখি।

ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিতাই চন্দ্র সাহা অভিযোগ আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট থানাকে এজাহার নেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন।

এদিকে নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় ওই নারী আইনজীবীর শ্বশুর কলাগাছিয়া ইউপি চেয়ারম্যানকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

মামলার বিবরণে বলা হয়, ১২ সেপ্টেম্বর দুপুরে গলাচিপা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিন শাহ ওরফে শাহিন প্যাদা প্রথমে মামলার বাদীর শ্বশুর কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি দুলাল চৌধুরীকে ফোনে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে হুমকি দেন।

পরে এর সূত্র ধরে নারী আইনজীবী উম্মে আসমা আঁখিকে প্রকাশ্যে গালমন্দের একপর্যায়ে চরথাপ্পড়, কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে তার শ্লীলতাহানি ঘটান।

পরে এ ঘটনার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করে নির্যাতনের শিকার পরিবারটি। অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিনও।

এর আগে সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করে ভুক্তভোগী পরিবার। পাশাপাশি জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়।

এদিকে শ্লীলতাহানির ঘটনার রেশ ধরেই উপজেলা চেয়ারম্যান কর্তৃক নানাভাবে হয়রানির শিকার নারী আইনজীবীর পরিবারটি।

সর্বশেষ রোববার দুপুরে উম্মে আসমা আঁখি বাদী হয়ে শাহিনকে আসামি করে পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন।

অপরদিকে চেয়ারম্যান শাহিন কর্তৃক শ্লীলতাহানির ঘটনায় বিচার চাওয়ার জের ধরে তার শ্বশুর গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

শনিবার রাতে গলাচিপা উপজেলা দলীয় কার্যালয়ে দুলাল চৌধুরী উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি থেকে বহিষ্কার করার এ সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য সভা আহ্বান করে উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি অংশ।

ওই মিটিংয়ে দুলাল চৌধুরীর পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন থাকায় উপজেলা চেয়ারম্যানের উদ্দেশ্য সফল হয়নি বলে জানান উপজেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীরা।

দুলাল চৌধুরী অভিযোগ করেন, তার পদ থেকে বহিষ্কার করার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন উপজেলা নেতাকর্মীদের মৌন চাপ প্রয়োগ করছেন। কিন্তু জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী আলমগীর রাতে ফোন করে সিদ্ধান্ত নিতে নিষেধ করায় তা বাস্তবায়ন হয়নি। এ ছাড়াও শাহিন নানাভাবে হয়রানি করতে পাঁয়তারা এবং অপপ্রচার চালাচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক সন্তোষ দে বলেন, দলীয় কার্যালয়ে আমরা প্রতিদিনই বসে আড্ডা দেই। আমার স্বাক্ষর ছাড়া দুলাল চৌধূরীকে পদ অব্যাহতি দেয়া যাবে না।

কেন তাকে পদ থেকে বহিষ্কার করা হবে- এ প্রশ্নে তিনি নীরব থাকেন।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা টিটু বলেন, আমরা শনিবার রাতে বসেছিলাম, কিন্তু সিদ্ধান্ত এখন নেইনি।

কোন্ অপরাধে তাকে বহিষ্কার করা হবে- এমন প্রশ্নে টিটু বলেন, তার পরিবার দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে তাই।

পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী আলমগীর এ প্রসঙ্গে বলেন, আমি রাতে ঘটনা শুনে উপজেলা আওয়ামী লীগকে নিষেধ করেছি। এটা শাহিনের চক্রান্ত। উপজেলা আওয়ামী লীগ কাউকে বহিষ্কার করতে পারে না।

প্রসঙ্গত, এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি নুরের ওপর হামলা চালায় উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন নিজেই। এ ছাড়াও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন শাহিন। এর ফলে গলাচিপা উপজেলার ১১ জন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গত জুন মাসে ঢাকায় অবস্থান নিয়ে স্থানীয় এমপি শাহজাদা সাজুর স্মরণাপন্ন হন। পরে এমপির হস্তক্ষেপে তা মীমাংসা করা হলেও স্থায়ীভাবে সমাধান হয়নি বলে জানান উপজেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতা।

এসব বিষয়ে জানতে উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিনকে একাধিকবার মোবাইল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

Advertisement