চ্যারিটি ওয়ার্কে অনন্য ভূমিকার স্বীকৃতি : বিশেষ এওয়ার্ড পেলেন চ্যানেল এসের ফাউণ্ডার মাহি ফেরদৌস

ব্রিটবাংলা ডেস্ক : ব্রিটেনের মুসলিম তথা বাঙালী কমিউনিটিতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ার কাজ কিংবা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থ মানবতার সেবা সর্বোপরি করোনা মহামারীতে দেশ-বিদেশে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি প্রতিনিয়ত টিভিতে বসে করোনার ব্যাপারে কমিউনিটিকে সচেতন করা, এমন কি এনএইচএসের জন্যে ফান্ড রেইজ, এমন অসংখ্য চ্যারিটি এবং মানবিক কাজের প্রত্যক্ষ এবং নেপথ্য কারিগড় হলেন চ্যানেল এসের ফাউন্ডার মাহি ফেরদৌস জলিল।

২০০৪ সালে চ্যানেল এস চালুর পর থেকে কমিউনিটিকে ফ্রি টেলিভিশন দেখার সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি চ্যানেল এসের মাধ্যমে চ্যারিটি এবং মানবিক সেবামূলক কাজে সহযোগিতা করে আসছেন তিনি।

গত ২১ নভেম্বর, সেন্ট্রাল লন্ডনে একটি অভিজাত হোটেলে ১১তম এশিয়ান কারী এওয়ার্ডস অনুষ্ঠানে মিডিয়ার মাধ্যমে ও ব্যক্তিগতভাবে চ্যারিটি এবং মানবসেবায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ‘স্পেশাল রিকোগনিশন’ ক্যাটাগরিতে মাহি ফেরদৌস জলিলকে এওয়ার্ড প্রদান করা হয়। ব্রিটিশ মন্ত্রী পল স্ক্যালি এমপি এবং এশিয়ান ক্যাটারিং ফেডারেশনের চেয়ারপার্সন ইয়াওর খান মাহি ফেরদৌসের হাতে এই এওয়ার্ড তুলে দেন। এর আগে বিবিসির জনপ্রিয় নিউজ প্রেজেন্টার কেইট সিলভারস্টন মাহি ফেরদৌসের নাম ঘোষণা করে চ্যারিটি এবং মানবসেবায় তার অসাধারণ অবদানের কথা অতিথিদের সামনে তুলে ধরেন। এ সময় মাহি ফেরদৌসের উপর একটি ভিডিও চিত্র প্রর্দশন করা হয়।

মাহি ফেরদৌস বৃটিশ বাংলাদেশী টেলিভিশন মিডিয়ায় এক নবজাগরণ সৃষ্টি করেন। ২০০৪ সালে নিজস্ব স্থাপনায় কমিউনিটিতে প্রথমবারের মতো ফ্রি-ভিউ চ্যানেলের সূচনা করেন। তার পর থেকে কোনো খরচ ছাড়াই অন্যান্য চ্যানেল দেখার সুযোগ পান দর্শকরা। এর আগে মাসিক সাবস্ক্রিপশন তো ছিলোই, মাঝে মধ্যে কোনো কোনো চ্যানেল বন্ধ হয়ে গেলেও সে অর্থ ফেরত পাননি দর্শকরা। চ্যারিটি এবং মানবতার সেবায় টেলিভিশনে লাইভ চ্যারিটি আপীলের সফল সূচনাও করেন তিনি। যার ফলে কমিউনিটিতে বিশ্বমানবতার জন্য একটি দানশীল সমাজও তৈরি হয়েছে।

সাধারণ মানুষের ভাষায় টিভিতে সাবলীলভাবে কথা বলে গণমানুষের কাছে পৌঁছার ক্ষেত্রে নজির স্থাপন করেছেন মাহি ফেরদৌস। চ্যানেল এসে তাঁর উপস্থাপনায় সাপ্তাহিক লাইভ শো-‘রিয়েলিটি উইথ মাহি’ অনুষ্ঠানে সবসময়ই স্থান পেয়েছে কমিউনিটির হট টপিক, বিশ্ব মানবতা এবং সমাজের চরম বাস্তবতা। লাইভ রিয়েলিটি অনুষ্ঠানে খোলামেলা আলোচনা সমালোচনার কারণেই মাহি ফেরদৌস থাকেন আলোচনার চূড়ান্তে। করোনার কঠিন সময়ে ‘কোভিড নাইনটিন’ শিরোনামে লাইভ প্রোগ্রাম ছিলো সাধারণ মানুষের জন্য পরম পাওয়া।

মাহি ফেরদৌস জলিলের উদ্যোগে চ্যানেল এস এর সাথে যুক্ত হয়ে ইউকে ও আন্তর্জাতিক চ্যারিটিগুলো গত ১৬ বছরে প্রায় ৬৫ মিলিয়ন পাউণ্ড সংগ্রহ করেছে। সে অর্থে উপকৃত হয়েছেন যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপদগ্রস্ত দেশগুলোর মানুষ। বাংলাদেশসহ নানা দেশের শিক্ষা, চিকিৎসা ও সামাজিক নানা প্রজেক্ট সফলতা পেয়েছে চ্যানেল এসের সহযোগিতায়। মাহি ফেরদৌস জলিল কোভিড নাইনটিন মহামারীতে ‘লাভ ফর এনইচএস’ এবং ‘ফিড টুয়েনটি থাউজেণ্ড’ নামে চ্যানেল এসের দুটি চ্যারিটি প্রজেক্টে সরাসরি নেতৃত্ব দেন। এনএইচএসকে প্রথমবারের মতো প্রায় ১১৫ হাজার পাউণ্ড ডোনেশন দেয়া হয় কমিউনিটির পক্ষ থেকে। এছাড়া ফিড প্রজেক্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের ১০টি জেলায় প্রায় ১৫ হাজারের বেশি পরিবার তথা লাখের বেশি মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দেয়া হয় এই করোনা মহামারিতে। বাজেট ছিলো প্রায় দেড় কোটি টাকা। ২০১৮ সালে ‘সেইভ তাফিদা’ নামের একটি মানবিক প্রজেক্টের নেতৃত্বেও ছিলেন মাহি ফেরদৌস জলিল। তিনি নিজে উপস্থাপনায়ও অংশ নেন। এনএইচএস ইংল্যান্ডে শিশু তাফিদার চিকিৎসায় অপারগতা দেখালে তার জন্য চ্যানেল এসের মাধ্যমে ১৬০ হাজার পাউণ্ড ফাণ্ডরেইজ করেন মাহি জলিল।


মাহি ফেরদৌস জলিল মূলত একজন সফল ব্যবসায়ী। তাই চ্যানেল এসের মাধ্যমে ব্যবসার কোনো লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য তাঁর কখনোই ছিল না। এজন্য কমিউনিটিকে ফ্রি টিভি দেখার সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি চ্যানেল এসে চ্যারিটি এবং মানবতার কাজকে অগ্রাধিকার দিয়েছেলে এবং দিচ্ছেন।

একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি এ্যাকসিডেন্ট ম্যানেজম্যান্ট, কন্সট্রাকশন ও প্রপার্টিসহ বেশ কিছু ব্যবসার সাথে যুক্ত আছেন। তার সন্তানরা পড়াশোনায় সফলতার প্রমাণ রাখছে। বড় মেয়ে নাজনিন ফেরদৌসী বিখ্যাত কিংস কলেজে মেডিসিনে ৩য় বর্ষ শেষ করেছেন। একই সাথে সে লণ্ডনের আরেকটি বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইউনির্ভাসিটি কলেজ (ইউসিএল) থেকে পলিটিক্স, ফিলোসোফি এণ্ড ইকোনমিক্স (পিপিআই) বিষয়ে ডিসটিংশনসহ গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন। ওয়েসমিনস্টারে বসবাসকারী মাহি ফেরদৌস জলিলের মা, বাবা ষাটের দশকে লণ্ডন এসেছেন। তাদের গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজার জেলায়।

এওয়ার্ড পাওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় মাহি ফেরদৌস জলিল বলেন, ‘কখোনোই এওয়ার্ড নিয়ে ভাবিনি। সাধারণভাবে নিজের মন থেকে সমাজ ও কমিউনিটির জন্য কাজ করার চেষ্টা করি। চ্যানেল এস এর যাত্রাও শুরু হয়েছিলো কমিউনিটিকে অগ্রাধিকার দিয়ে। এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের কোনো আশাও ছিলো না এবং এখনো নেই। আর চ্যানেল এসে লাইভ চ্যারিটি আপীলের মাধ্যমে আমরা যে মানুষের জন্য কিছু ভূমিকা রাখছি তা খুবই সুখের বিষয়। কারণ এ দুনিয়ায় আমরা যতোই প্রভাবশালী হই না কেনো, কেউই চিরদিন থাকবো না। শুধু আমাদের কল্যাণকর কাজই টিকে থাকবে লিগেসী হিসেবে। ভবিষ্যত প্রজন্মও উৎসাহিত হবে এসব ভালো কাজের কারণে।‘

সেবামূলক কাজ অব্যাহত রাখতে সবার দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেন মাহি ফেরদৌস জলিল। একই সঙ্গে চ্যানেল এসের সাথে থাকতেও সবাইকে আহ্বান জানান তিনি।

Advertisement