জি–২০ কি এখনো প্রাসঙ্গিক?

জিম ও’নিল :: ২০০৮ সালের শেষ দিকে যখন জি-২০–এর নেতারা তাঁদের প্রথম শীর্ষ সম্মেলনে মিলিত হন, তখন অনেকে একে স্বাগত জানিয়েছিল। তখন তারা একে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সমস্যার সাধারণ সমাধানের উচ্চ প্রতিনিধিত্বমূলক নতুন ফোরাম হিসেবে দেখেছিল। কিন্তু পরে দেখা গেছে, জোটটি বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকটের বিষয়ে সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের বেশ ভালোভাবে বিরত রেখেছে। তবে কিছু সময়ের জন্য জি-২০ আন্তর্জাতিক নীতি সমন্বয়ের জন্য একটি ফোরাম হিসেবে উদ্ভূত হয়েছিল।

জি-২০–এর প্রাথমিক অর্জনের প্রশংসা যারা করেছিল, আমি অবশ্যই তাদের মধ্যে একজন। ২০০১ সালের পর থেকে, যখন আমি ব্রিকভুক্ত দেশগুলোর (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন) উত্থান লক্ষ করেছি, তখন থেকে আমি বিশ্বশাসন কাঠামোগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। আমি বলে আসছি যে জি-৭–এর মতো আরও অনেক ফোরাম দরকার।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে গত মাসে জাপানের ওসাকাতে অনুষ্ঠিত জি–২০–এর শীর্ষ সম্মেলনের পর আমি এটা দেখে আশ্চর্য হলাম যে তারা তাদের আসল উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলেছে। প্রকৃতপক্ষে এই শীর্ষ সম্মেলনে একটা বিষয়েই কেবল অগ্রগতি হয়েছে, আর সেটা হচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়া এবং উভয় দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়া।

বিশ্বের ক্ষমতাধর, তথা ধনী দেশগুলোর জোট হচ্ছে জি-২০। এর সদস্যরা বিশ্বব্যাপী জিডিপির প্রায় ৮৫ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে এবং এদের বেশির ভাগ নেতৃস্থানীয় উদীয়মান অর্থনীতি। গ্রুপটিকে এখন বিশ্বব্যাপী সংলাপকে সহজতর করার জন্য যথাযথ মাধ্যম বলেই মনে হচ্ছে।

বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জসমূহের অস্তিত্ব স্বীকার করার ক্ষেত্রে জি-২০ বেশ দক্ষতার পরিচয় দিলেও তারা এটা প্রমাণ করেছে যে তারা এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অক্ষম। কেউ কেউ এই যুক্তি দিতে পারেন যে আমলাদের একটি দল পৃথিবীর সবকিছু ঠিক করে দেবে, এটা আশা করা বাস্তবসম্মত নয়।
পরিবর্তনের জন্য সবাইকেই কাজ করতে হবে। কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য রাজনৈতিক নেতাদের চাপ দেওয়ার দায়িত্ব উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে চিন্তাবিদ, সবার। অনেকের মতে, বৈশ্বিক সমস্যা উত্থাপনের জন্য জি-২০–এর মতো সংস্থার কোনো বিকল্প নেই। এমনকি রাজনৈতিক নেতারা যদি সঠিক ধারণা গ্রহণ করে থাকেনও, ধারণাগুলো সমন্বিত নীতিতে পরিণত করার জন্য জি-২০–এর মতো একটি ফোরাম দরকার।

আমার মতে, জি–২০–এর সাফল্যের পথে দুটি বাধা দাঁড়িয়ে আছে। প্রথমটি হচ্ছে, যদিও এটি ধনী রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে, কিন্তু এটি আকারে খুব বড়। ২০০১ সাল থেকে আমি বলে আসছি যে বিশ্বের প্রকৃতপক্ষে যা প্রয়োজন তা হলো জি-৭–এর (কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র) মতো আরও একটি ফোরাম। এই নতুন ফোরাম জি–২০–এর মধ্যেই থাকবে এবং বিশ্বব্যাপী জিডিপির তিন–চতুর্থাংশ প্রতিনিধিত্ব করবে।

জি-২০–এর দ্বিতীয় ঘাটতি হলো যে এর (এবং সেই সঙ্গে জি-৭) উদ্দেশ্যমূলক কাঠামোর অভাব রয়েছে, যার মাধ্যমে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হবে এবং সেসব লক্ষ্য বাস্তবায়িত হবে। এক দশক আগে জোটটি সাফল্য পেলেও এখন তার অ্যাজেন্ডাগুলো আর তত জোরালো নয়।

সদস্যদেশগুলো প্রতিবছরের সম্মেলনে নতুন কিছু যোগ করায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যেমন: ওসাকা শীর্ষ সম্মেলনে জাপান সরকার সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা চালু করার প্রস্তাব দিয়েছে। কোনো সন্দেহ নেই যে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা মনোযোগ দাবি করে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, জি-২০ আসলেই স্বতন্ত্র সদস্যরাষ্ট্রগুলোতে স্বাস্থ্যসেবাব্যবস্থা প্রসারিত করতে কখনোই খুব একটা সহায়তা করেনি।

জি-২০–এর কাছে সারা বিশ্বের অনেক প্রত্যাশা থাকলেও বিশ্বব্যাপী সামাজিক অসমতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণে জি-২০ কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারেনি। শিল্পোন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক নীতির নির্যাস বাস্তবায়নেই এই জোটের আগ্রহ বেশি। অথচ বৈশ্বিক সম্পদের সুষম ব্যবস্থাপনার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নীতি প্রণয়নের সুযোগ এই জোটের আছে। চাইলে এই জোটের আওতায় বিশ্ব অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করা সম্ভব। কিন্তু আদৌ এমনটি হবে, সেই প্রত্যাশা কেউ করছে বলে মনে হচ্ছে না।

Advertisement