জ্বলে পুড়ে মর হে জ্ঞান পাপিরা

।। এম.হাসানুল হক উজ্জ্বল ।।

প্রতিদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা সংবাদপত্রে চোঁখ রাখলে গাঁ শিউরে উঠার মতো সংবাদ পাঠকের চোখে ভাসছে। আর আমরা যারা লেখালেখি করি পাঠকদের খোরাক যোগান দিচ্ছি। আমাদের কলমের খোঁচায় উঠে আসছে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু, ডাক্তারের ভুল অপারেশনে মৃত্যু বা পঙ্গুত্ব বরন, ব্যাংক কেলেংঙ্কারী, বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে চাঁদা নিয়ে ঈদ পালন, বালিশ কান্ড, হাসপাতালের পর্দা কেলেঙ্কারী, একখানা টিনের মূল্য এক লাখ টাকা এছাড়াও আরো কত চটকদার খবর। রাজনৈতিক ভাবে যদিও কেউ কেউ এসব খবরকে নেতিবাচক হিসেবে দেখে থাকেন তারপরও দেশ প্রেমিকরা এসব নিয়ে আর্তনাদ করছেন। এ রকম অভিশাপ দিচ্ছেন, ’জ¦লে পুড়ে মর হে জ্ঞান পাপিরা’। আল্লাহ তদের উচ্চ আসনে বসিয়েছেন জাতির কল্যাণের জন্য কিন্তু তোরা দেশকে কিংবা দেশের সম্পদকে লুটেপুটে খেয়ে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করতে চাইছিস।

রাজনৈতিক সরকারের আমলে লুটপাট আর অবৈধ অর্থ অর্জন আর বিদেশ পাচার করার খরব নতুন কিছু নয়। তা চলে আসছে অনেক আগ থেকে এরশাদের আমল বলেন আর জিয়াউর রহমান কিংবা খালেদা জিয়ার আমল বলেন, কেউ তো আর এসবের বাহিরে ছিলেন না। সকলের আমলেই লুটপাটের কাহিনী ঘটেছে। অনেকে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন।

বিগত বিএনপি-জামাত সরকারের কথা চিন্তা করেন। হাওয়া ভবন কাহিনী থেকে শুরু করে দেশে লুটপাটের কাহিনী কি কম হয়েছিল ? কতিপয় লুটপাটকারীর কারণে বিএনপি নামক দলটি আজ মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারছেনা। তাদের ভরাডুবির পর অনেক প্রথম শ্রেনীর নেতা দেশ ত্যাগ করেছেন। আর যারা দেশে রয়েছেন তারা জেল খাঁটছেন। বিএনপি নেত্রীও একই অভিযোগে রয়েছেন জেলে। সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান স্ব পরিবারে লন্ডনে অবস্থান করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির মামলা রয়েছে। যদিও বিদেশ থেকে তারা এসব অস্বীকার করছেন। কথা হলো যদি তোরা দেশের সম্পদ হরণ না করো তাহলে বিদেশে কেন? দেশের মাটিতে এসে প্রমাণ করো এসব ষড়যন্ত্র। বিদেশ পালিয়ে থাকা কি প্রমাণ করে না দুর্ণীতির সাথে জড়িত থাকার কথা ?

কোন দল কিংবা ব্যক্তি দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকলে সে কোথাও মাথা উচু করে কথা বলার সাহস পাবেনা। যা এখন বিএনপি’র ক্ষেত্রে প্রমাণীত। সাবেক প্রধান মন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘ দিন থেকে জেল খাঁটছেন। ছেলে লন্ডনে পরিবার নিয়ে আরাম আয়েশে দিন কাটাচ্ছেন। এটাকে কোন ধরণের দেশ প্রেম বলে তা কারো বোধগম্য নয়।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর নানা ভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যাকে বিতর্কিত করতে দলের ভেতরে থাকা একটি চক্র ষড়যন্ত্র শুরু করে। এসব লোকদের ষড়যন্ত্রে আওয়ামীলীগ অনেকটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা প্রধানমন্ত্রীকে এসব দুর্নীতিবাজদের সব সময় সতর্ক করে আসছিলেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যে কোন বিষয় ধৈর্য্য সহকারে মোকাবেলা করেন তা কারো অজানা নয়। তাই দেরিতে হলেও প্রধানমন্ত্রীর কতিপয় পদক্ষেপ জনগণের আস্থা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

দেশে যখন হরতাল আর জঙ্গিবাদে আর মানুষ খুনের মহোৎসবে পরিণত হয়েছিল আওয়ামীলীগ সরকার তখন কঠোর অবস্থানে যায়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর হাতে তা দমন করতে সামর্থ হন। যা নিয়ে বিশে^ আওয়ামীলীগ সরকারের ভাবমুর্তি অনেকটা বেড়ে যায়। এখন আশার খবর হচ্ছে, এই কয়েক বছরে শেখ হাসিনার সরকার হরতাল নামক যন্ত্রণার নিরসন করতে পেরেছে। মানুষ আর হরতাল নামক যন্ত্রনার কবলে পড়ে অসহায় অবস্থায় রাস্তায় দাড়িয়ে থাকছে না। নিরাপদে চলাফেরা করতেও দ্বিধাবোধ করছেন। দেশে এখন আর নেই আগুন বাহিনী। গাড়ীতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার সংবাদ এখন আর দেশ/বিদেশ দেখছে না। কঠোর হস্তে জঙ্গি দমনেও রেখেছে অসামান্য অবদান। যা বিশে^র উন্নত দেশগুলোর নজর কাঁড়তে সক্ষম হয়েছে।

ইদানিং কালে দেশে মাদক/ ইয়াবা ব্যবসা বাড়লেও তা আর আগের মত নয়। রোহিঙ্গাদের দয়া করা আর নিজ ঘরে কুমির পালন একই কথায় পরিণত হয়েছে। রোহিঙ্গাদের আগমনের সাথে সাথে আমাদের দেশে ইয়াবার আমদানী বেড়েছে। আমাদের সরলতাকে কাজে লাগিয়ে রোহিঙ্গারা কৌশলে আমাদের বিনাশ করে দিচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে এখন নাকি ইয়াবার কারখানা গড়ে উঠেছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্য গুলো যদি সঠিক হয় তাহলে তা হবে আমাদের জন্য অশনি সংকেত। এছাড়া সীমান্ত এলাকাগুলোতে দু’দেশের মানুষের অবাধ চলাফেরা ও কতিপয় এলাকায় দু’দেশের মানুষের একত্রে বসবাসের কারণে মাদক নিয়ন্ত্রনে আনতে অনেকটা বেগ পেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। তবে তা নিয়ন্ত্রনে আনতে প্রশাসনের তৎপরতার কমতি নেই। তারপরও শর্ষের মধ্যে কোথাও ভূত লুকিয়ে রয়েছে!

বাস্তব দৃষ্টে যে বিষয়টি পরিলক্ষিত হয় এখনকার যুগের রাজনীতি আর আগের আমলের রাজনীতি এক নয়। এখন চলছে দলের ভেতর উপদল সৃষ্টি করে নিজের ফায়দা হাসিলের ধান্ধা। দেশের জন্য দেশের উন্নয়নের জন্য কতজন এখন রাজনীতি করছেন ? তার হিসেব মেলানো অনেক কষ্টকর হবে। বর্তমান কালের রাজনীতি নিয়ে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে এখনকার রাজনীতিক নেতাদের কর্মীরা নেতার রাজনীতি করেন। দলের নয়! এ পর্যায়ে একটি বাস্তব গল্প মনে পড়ে গেল, একটি কলেজে এক ছাত্র ভর্তি হতে গেছে। স্যার ফি আদায় করে ছাত্রকে জিজ্ঞেস করলেন তুমি কোন গ্রুপে (বিভাগে) ভর্তি হবে। ওই ছাত্র বুক ফুলিয়ে তার নেতার নাম উচ্চারণ করে বললো আমি অমুক গ্রুপে ভর্তি হবো। কলেজে শিক্ষকদের মধ্যে হাসির রোল পড়ে গেল। হাল জমানার রাজনীতিতে দলের প্রধানকে এখন আর কেউ ভালো করে চিনতে চায়নি। স্থানীয় গ্রুপের নেতার নাম জানলেই চলে। নেতাকে খুশি করে ‘মাল কামানোই’ অনেকটা কর্মীদের ধান্ধা হয়ে গেছে। একবার আওয়ামীলীগ করেন উপজেলা পর্যায়ের এক বড় নেতাকে জিজ্ঞেস করলাম ‘বঙ্গবন্ধুর জন্ম তারিখটা কত হতে পারে? ওই নেতা তখন আমতা আমতা করে অনেকটা দুরে চলে গেলেন। পক্ষান্তরে বিএনপি’র আরেক নেতাকে একই প্রশ্ন করা হলে তিনিও একই হাল দেখালেন। তাতেই বুঝা যায় এ জমানার রাজনীতি কোন পর্যায়ে চলে গেছে। দলের প্রতি নেতাদের মুল্যায়ন নেই। নেতাদের প্রতিও কর্মীদের মুল্যায়ন নেই। গ্রুপিং রাজনীতির কারনে এখন আস্তা সংকটে ভুগছে রাজনীতি।
এখন আসি আসল কথায়। দেশে/বিদেশে ইদানিং দেশের জ্ঞান পাপিদের নিয়ে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন আসতে পারে বালিশ কান্ড, কয়লা গায়েব কিংবা পর্দা দুর্নীতি, বিশ^বিদ্যালয় থেকে চাঁদা এনে ঈদ পালন কিংবা টিনের মুল্য একলাখ টাকা নির্ধারণ করে বিল আদায়সহ ফাঁস হওয়া সকল দুর্নীতি কি রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগিতা ছাড়া হয়েছে ?
ছাত্রলীগ বাংঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন। আর এই সংগঠনের অবৈধ কর্মকান্ড কি কবরে, জাতির জনককে কলংকিত করছে না ?
প্রধানমন্ত্রী কতটুকু আস্তা ও বিশ্বাস রেখে ওদেরকে শীর্ষ আসনে বসিয়েছিলেন। ওদের দুর্নীতি কি প্রধানমন্ত্রীকে জাতির কাছে লজ্জিত করেনি। ওদের লাগাম টেনে শেষ নয়; ওদেরকে জাতির সামনে বিচার করে নজির স্থাপন করতে হবে।
তবে ইদানিং প্রধানমন্ত্রী কঠোর হয়েছেন বলে দেখা যাচ্ছে। যুবলীগের বিরুদ্ধে কথা বলতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঢাকার ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে অবৈধভাবে ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এছাড়াও বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলামের বাড়ি থেকে সরকারি খাদ্য কর্মসূচির ৫৬০ বস্তা চাল উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনা দুটি বুধবারের।
দেশ প্রেমিক বলেন/ আর দেশ দরদী বলেন/ তারা কিন্তু দেশ কিংবা দেশের জনগনের অধিকার হরণ করবে না। তাই যারা দেশের ক্ষতি করে তারা কিছুতেই দেশের বন্ধু হতে পারেনা। তাই সকল দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। আইন করে এমন ভাবে ওদেরকে বিচারের সম্মুখিন করতে হবে যাতে করে দুর্ণীতিবাজদের চৌদ্দগুষ্টি মাথাচাড়া দিয়ে দাঁড়াতে না পারে।

মাদার অব হিউমিনিটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শক্ত অবস্থানে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। একদিন প্রতিষ্ঠা লাভ করবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা।

লেখক ঃ সাংবাদিক/কলামিষ্ট।

Advertisement