জয়ের মাধ্যমে সিরিজ শুরু করলো বাংলাদেশ

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ৩৩ রানের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করতে নেমে ৫০ ওভারে ছয় উইকেটে ২৫৭ রান তোলে টাইগাররা।জবাবে ১১ বল বাকি থাকতেই ২২৪ রানে অলআউট হয় সফরকারীরা।এটি ওয়ানডে সুপার লিগে টাইগারদের চতুর্থ জয়।স্বাগতিকদের দেওয়া ২৫৮ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুটা অবশ্য দারুণ হয় লঙ্কানদের।৫ ওভারে তারা তুলে ফেলে ৩০ রান। কিন্তু লঙ্কানদের আত্মবিশ্বাসী সূচনায় আঘাত হানেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও মুস্তাফিজুর রহমান।

মেহেদী মিরাজ শুরুতে সাফল্য পাননি যদিও। শুরুতে মেরে খেলার দিকে মনোযোগী ছিলেন ওপেনার গুনাথিলাকা। ১৯ বলে ৫টি চারে ২১ রান তুলেছিলেন তিনি। অধিনায়ক কুশল পেরেরা অবশ্য ধীরে চলো নীতিতে খেলতে থাকেন। আক্রমণাত্মক গুনাথিলাকা শেষ পর্যন্ত মেরে খেলতে গিয়েই বিপদ ডেকে আনেন পঞ্চম ওভারের শেষ বলে। মিরাজের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে লঙ্কান ওপেনার ফেরেন ২১ রানে।এরপর বল করতে আসেন মুস্তাফিজুর রহমান। দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলে বোলিংয়ে নেমে উইকেটও তুলে নেন কাটার মাস্টার। নিসাঙ্কাকে আফিফের ক্যাচ বানান তিনি।

তাৎক্ষণিক দুই উইকেট পড়ে যাওয়ায় লঙ্কানদের এগিয়ে নিচ্ছিলেন ওপেনার কুশল পেরেরা ও কুশল মেন্ডিস। ৪১ রান তুলে ফেলেছিল এই জুটি। মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ানো জুটিটিই ভেঙেছেন সাকিব। ১৯তম ওভারে তালুবন্দি করান মেন্ডিসকে (২৪)। অবশ্য নিজের প্রথম ওভারেই পেরেরাকে ফেরানোর সুযোগ তৈরি হয়েছিল। তার বলে ক্যাচ উঠলেও সেটি পড়েছিল কিঞ্চিত বাইরে। তবে সাকিব না পারলেও বিপজ্জনক পেরেরাকে পরে ঠিকই ফিরিয়েছেন মিরাজ। ৩০ রান করা লঙ্কান অধিনায়ককে বোল্ড করেছেন তিনি। এরপর ধনঞ্জয় ডি সিলভাকেও তুলে নেন এ বোলার।

শেষ দিকে লঙ্কানদের হয়ে হাল ধরেন ওয়ানিন্দু হাসারাংগার। ঝড়ো ব্যাটিং করে দলকে জয়ের স্বপ্ন দেখান তিনি। তবে তাকে সাজঘরে ফিরিয়ে দলকে ম্যাচে ফেরান পেস বোলিং অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিন। অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে ৬০ বলে তিনি করেন ৭৪ রান।বাংলাদেশের পক্ষে মেহেদী মিরাজ ৩০ রানে নেন ৪ উইকেট। এছাড়া ৩৪ রানে ৩ উইকেট মুস্তাফিজুর রহমান। সাইফউদ্দিনের শিকার দুই উইকেট। বাকি এক উইকেট নেন সাকিব আল হাসান।এর আগে প্রথম ইনিংস শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছয় উইকেট হারিয়ে ২৫৭ রান। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮৪ রান এসেছে মুশফিকের ব্যাট থেকে। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল। ম্যাচটি শুরু হয় দুপুর একটায়।

বাংলাদেশের হয়ে ইনিংস উদ্বোধনে নামেন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। প্রথম ওভারে একটি চার হাঁকান তামিম। তিনি দেখেশুনে খেললেও ব্যর্থ লিটন। নিজের খেলা তৃতীয় বলে কোনো রান না করেই স্লিপে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। বোলার ছিলেন দুশমন্থ চামিরা। এরপর তামিমকে সঙ্গে নিয়ে ইনিংস এগিয়ে নিচ্ছিলেন সাকিব। বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে দুজনে যোগ করেন ৩৯ রান। দানুশকা গুনাথিলাকার করা ত্রয়োদশ ওভারের প্রথম বলেই চিপ করে উড়িয়ে মারতে যান সাকিব। ব্যাটে বলে ঠিকমতো সংযোগ না হওয়ায় বল সোজা চলে যায় পাথুম নিশাংকার হাতে। আউট হওয়ার আগে ৩৪ বলে ১৫ রান করেন তিনি।শুরু থেকেই দারুণ খেলতে থাকা তামিম ইকবাল ৬৬ বলে ক্যারিয়ারের ৫১তম ফিফটি পূরণ করেন। লক্ষ্মণ সান্দাকানের বলে সিঙ্গেল নিয়ে এই মাইলফলকে পৌঁছান তিনি। এর আগে ওয়ানডেতে সাড়ে সাত হাজার ও তিন ফরম্যাট মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৪ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন দেশসেরা ওপেনার।

ধনঞ্জয় ডি সিলভার বলে লেগ সাইডে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন তামিম। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে ৭০ বলে ৫২ রান করেন ওয়ানডে অধিনায়ক। তার জায়গায় নামা মোহাম্মদ মিঠুন ফেরেন পরের বলেই। মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলে প্যাডল সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন এই ব্যাটসম্যান।এরপর মুশফিক ও রিয়াদ মিলে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন। রান রেট ঠিক রেখে দুজনই ব্যতিব্যস্ত করে রাখেন লঙ্কান বোলারদের। এরই মাঝে ধনঞ্জয় ডি সিলভাকে চার হাঁকিয়ে ফিফটি পূরণ করেন মুশফিক। ৫২ বলে এই মাইলফলকে পৌঁছান তিনি, যা ক্যারিয়ারের ৪০তম অর্ধশতক। ওয়ানিন্দু হাসারাংগার বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ আউট হন মুশফিক। এর আগে তিনি খেলেন ৮৭ বলে ৮৪ রানের ইনিংস। মিস্টার ডিপেন্ডেবল সাজঘরে ফেরার পর ৬৯ বলে ফিফটি পূরণ করেন রিয়াদ। ধনঞ্জয় ডি সিলভার তৃতীয় শিকারে পরিণত হওয়ার আগে তিনি করেন ৫৪ রান।

Advertisement