ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ্যালামনাই ইউকের উদ্যোগে বিজয় দিবসে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বিজয় ফুল ওয়ার্কশপ

বাঙালী জাতিকে মেধাশূন্য করার হীন নীল নকশা বাস্তবায়ন করার জন্য বিজয়ের মাত্র দুদিন আগে ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানী হানাদার বর্বর বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার আলবদর আলশামস এর নরঘাতকরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক্ষকসহ সাংবাদিক, লেখক, ডাক্তার, প্রকৌশলী সহ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। প্রতিটি সংগ্রামে আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।

আমাদের প্রতিটি অর্জনের পেছনে রয়েছে অনেক আত্মত্যাগ। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি।

তাই তো বিজয় দিবসেও আমরা প্রাণ খুলে আনন্দ করতে পারিনা। ‘৫২ সালে ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগে আমরা বাংলা ভাষা রক্ষা করতে পেরেছি।

তারপর দীর্ঘ সংগ্রামের পর নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর আমরা অর্জন করেছি চূড়ান্ত বিজয় ।
নতুন প্রজন্মের কাছে বিজয় ফুলের তাৎপর্য তুলে ধরা, বিজয় দিবসের আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে ১৮ ডিসেম্বর মঙ্গলবার পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আর্ট সেন্টারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ্যালামনাই ইউকের উদ্যোগে মহান বিজয় দিবসে বক্তারা উক্ত মন্তব্য করেন।

অনেক বক্তাই মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তাদের পরিবারের উপর পাকিস্তানী সেনা ও রাজাকারদের নৃশংস অত্যাচার ও হত্যাকান্ডের বর্ণনা দেন। স্বজন হারানোর এই স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অনেকে বক্তাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন, দর্শক সাড়িতে বসা শ্রোতারও অশুসিক্ত হয়ে পড়েন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ্যালামনাই এর বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহকারী হাইকমিশনার মোহাম্মদ জুলকার নাইন।

মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ্যালামনাই ইউকের আহ্বায়ক মারুফ চৌধুরী উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধোদের পরিচয় করিয়ে দেন। মুক্তিযোদ্ধদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যালামনাই গৌস সুলতান, আবু মুসা হাসান ও মোহাম্মদ আবদুল হাদি এবং লোকমান হোসাইন, ফয়জুল ইসলাম খান ও প্রকৌশলী মেফতা ইসলাম ।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ছিল নতুন প্রজন্মের কাছে বিজয় ফুলের তাৎপর্য তুলে ধরা।

বহির্বিশ্বে বসবাসরত বাংলাদেশীদের কাছে বিজয়ফুল হয়ে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক। এই কর্মসূচীর মাধ্যমে দেশ-বিদেশে বিজয় ফুল তৈরীর ফাঁকে ফাঁকে মুক্তিযোদ্ধারা নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কাছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলে থাকেন। এখানে বিজয় ফুল একটা উপলক্ষ্য। বাচ্চারা বিজয় ফুল তৈরী করার সময় একজন মুক্তিযোদ্ধা পাশে বসে মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধ জয়ের গল্প শোনান। এতে নতুন প্রজন্মের কাছে একাত্তরের বার্তা পৌঁছে যায়।


ছেলেমেয়েরা যখন নিজ হাতে পাঁচটি সবুজ পাঁপড়ি ও একটি লাল গোলকের সম্মিলনে ফুল তৈরী করে তখন তাদের বলা হয় মাঝখানের লাল বর্ণের বৃত্ত আমাদেও রক্তে কেনা বিজয়ের লাল সূর্য, আর পাঁচটি পাঁপড়ির মাধ্যমে আমাদের ধর্মনিরপেক্ষতা- নানা ধর্মের মানুষের সহমর্মিতা, আমাদের মৌলিক অধিকার, দেশের নদী, সবুজ প্রকৃতি ইত্যাদি।

তাই বিজয় ফুল বানানোর সময় নতুন প্রজন্মের সামনে গোটা বাংলাদেশ ফুটে উঠে।

বিজয় ফুলের সমন্বয়কারী কবি মিল্টন রহমানের পরিচালনায় নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যুক্তরাজ্যে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ব্যরিষ্টার আনিস রহমান ওবিই, মুক্তিযোদ্ধা আবু মুসা হাসান ও মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসাইন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপট এবং মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরেন। নতুন প্রজন্মের মধ্যে উপস্থিত ছিল সৈয়দ রাহা দেওয়ান, অনুভা হক, সৈয়দ আদিত্য, ডানা দত্ত, শায়ান্ন, আলমীর, নীরবান, আদরীত প্রমূখ।


বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন এম এ রকিব, ইসমাইল হোসাইন, জালাল উদ্দীন, ফয়জুর রহমান খান, নিলুফা ইয়াসমীন, সৈয়দ ইকবাল, অজয় রায় রতন, বিধান গোস্মামী, এস এ মকু, প্রদীপ মজুমদার, আবু হুসাইন, প্রসান্ত দত্ত পুরাকায়স্ত, চৌধুরী হাফিজ, সিরাজুল বাসিত চৌধুরী, সৈয়দ হামিদুল হক, তানভীর আহমেদ, কামরুল হাসান, মুস্তাফিজুর রহমান, একেএম রবিউল ইসলাম, সৈয়ত আনিসুজ্জামান, একেএম সালিম, মুজাহিদুল ইসলাম, কাজী শাহীন শাহ, আবদুল মুকিত চৌধুরী, মুনীর চৌধুরী, কাজী আসিক রহমান, রিপা রকীব, নারগিস সাহেদা,আরিনা সিদ্দিকী, ঝুমুর দত্ত, ইউসুফ ইকবাল, শাহ আকবর আলী। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন হাইকমিশনের হেড অব চ্যান্সেরী সদীপ্ত আলম ও ফাস্ট সেক্রেটারী সফিকুল আলম।
আলোচনা ও স্মৃতিচারণ শেষে তানভীর আহমেদ ও সুপ্রভা র পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয় সাংর্স্কতিক অনুষ্ঠান। এতে কথা সাহিত্যিক সৈয়দ সামসুল হকের পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় কাব্য নাটক থেকে আবৃত্তি করেন উদয় শংকর দাস। সংগীত পরিবেশন করেন রিপা সুলতানা রকীব, কনক বারমা, তামান্না ইকবাল, মিলন বিশ্বাস এবং অনন্ত।
ব্যারিষ্টার আনিস রহমান ওবিইর সমাপনি বক্তৃতার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

Advertisement