তারকা ফুটবলারের মানবিক গোল

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: বিপক্ষ দলের গোলবারেই শুধু বল জড়ান না, তারকা ফুটবলারদের অনেকেই গোল করেন দরিদ্র্যতার বিরুদ্ধে, মানবতার পক্ষে। এবারের বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলছেন এমন পাঁচজন তারকা ফুটবলারের মানবিক উদ্যোগের কথা থাকছে এই প্রতিবেদনে।

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো পর্তুগাল
শক্তপোক্ত শারীরিক গঠন কিংবা মুখের কাঠিন্য দেখে সত্যিই কি বোঝার উপায় আছে, পর্তুগালের এই মহাতারকার ভেতর বাস করে কোমল হৃদয়ের এক মানুষ! নিজের ছেলেবেলা কেটেছে চরম দারিদ্র্যে। এই জন্যই কি না, অসহায় মানুষের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসা অনুভব করেন রোনালদো। সুযোগ পেলেই ছুটে যান নিজের জন্মস্থান ছোট্ট দ্বীপ ফুনচালে, এখানেই বেড়ে উঠেছেন তিনি। ২০১২ সালে ফিলিস্তিনি শিশুদের জন্য তাঁর গোল্ডেন বুট নিলামে তুলে পাওয়া ১৫ লাখ ইউরো দান করেন। ২০১৪ সালে মারাত্মক ব্যাধি নিয়ে জন্ম নেওয়া পর্তুগিজ এক দম্পতির সন্তান এরিক অরতিজের চিকিৎসার সব খরচ দিয়েছিলেন। ২০১৬ সালের নভেম্বরে ফুনচালে দ্বীপে আগুন লেগে অনেক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়লে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তিনি। তাঁর হৃদয়ের একটি বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে শিশুরা। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শিশুদের সাহায্যের জন্যও বিশ্ববাসীর কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
নিয়মিত রক্ত দান করেন বলে শরীরে উল্কি আঁকান না রোনালদো। এক মুমূর্ষু রোগীকে অস্থিমজ্জা দান করার সংবাদটিও ভক্তদের কাছে অজানা নয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়েবসাইট অ্যাথলেটস গন গুড, ডুসামথিং ডটওআরজি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে ২০১৫ সালে দানশীল ক্রীড়াবিদের একটি তালিকা প্রকাশ করে। সেই তালিকাতে সবার শীর্ষেই আছে রোনালদোর নাম। ভক্তরা তাঁর জার্সি চাইলে মনে করে তা-ও দিয়ে যান।

লিওনেল মেসিলিওনেল মেসি আর্জেন্টিনা
‘ইউনিসেফের একজন শুভেচ্ছাদূত হিসেবে আমি তাদের বিরুদ্ধে খেলতে পারি না, যারা নিরীহ ফিলিস্তিন শিশুদের বিনা অপরাধে হত্যা করে। আমাদের খেলাটি অবশ্যই বাতিল করতে হতো, কারণ ফুটবলার হওয়ার আগে আমরা মানুষ।’ রাশিয়া বিশ্বকাপ উপলক্ষে ইসরায়েলের বিপক্ষে জেরুজালেমে প্রস্তুতি ম্যাচটি বাতিলের পর আর্জেন্টাইন ফুটবল জাদুকরের এই বক্তব্যে মানবিকতার দৃষ্টান্তই ফুটে ওঠে। প্রতি মিনিটে ৫০ হাজার ডলারের লোভনীয় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে তিনি বরং ম্যাচটি বাতিলে মুখ্য ভূমিকা রাখেন।
২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘লিও মেসি ফাউন্ডেশন’। ২০১৩ সালে নিজ শহর রোজারিওর শিশু হাসপাতালে ৬ লাখ ইউরো সহায়তা দেন। ২০১৫ সালে প্রবল বন্যায় আর্জেন্টিনার অন্তত ১১ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়লে মেসি তাদের পাশে দাঁড়ান। ২০১৬ সালের শেষের দিকে আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশন আর্থিক সংকটে পড়লে এবং দুর্নীতির কারণে নিরাপত্তারক্ষীদের বেতন পরিশোধ না হওয়ায় মেসি নিজের ব্যাংক হিসাব থেকে তাদের বেতন মিটিয়ে দেন।

নেইমারনেইমার ব্রাজিল
ব্রাজিলীয় ফুটবল তারকা নেইমার জুনিয়র ২০১৪ সালে নিজ শহর সাওপাওলোতে সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের জন্য গড়ে তোলেন ‘নেইমার জুনিয়র ইনস্টিটিউট’। ইএসপিএনের সাংবাদিক ডেরমট করিগানের তথ্যমতে, প্রায় ২৪০০ সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোর নিয়ে যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। লেখাপড়ার পাশাপাশি ফুটবল, বাস্কেটবল, জুড়ো ইত্যাদি খেলা শেখানো হয়। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৫ সালে সাওপাওলোর পায়া গ্র্যান্ডে স্টেডিয়ামে প্রথমবারের মতো আয়োজন করে ব্যতিক্রমী ফুটবল ম্যাচ ‘ওয়ার্ল্ড বুট কমপিটিশন-২০১৫’। শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য আয়োজিত অভিনব এই ম্যাচে ৬ জন শারীরিক প্রতিবন্ধীর সঙ্গে ১৬ জন পেশাদার ফুটবল তারকার ১৬টি দল প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। নেইমার জুনিয়রের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে মানবতার প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতার সাক্ষ্যই বহন করে। এ ছাড়া মরণ ভাইরাস ইবোলা মোকাবিলায় সহযোগিতা করেছেন, ব্রাজিলের নাগরিকদের জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

মেসুত ওজিলমেসুত ওজিল জার্মানি
সুন্দর চেহারা, ভুবন ভোলানো হাসি আর অত্যন্ত বিনয়ী ওজিল শুধু ফুটবল ক্যারিশমার জন্যই নন, মানবিক হিসেবেও ভক্তদের হৃদয় দখল করে আছেন।
২০১৪ সালে জার্মানির বিশ্বকাপ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে বোনাস হিসেবে পেয়েছিলেন সাড়ে তিন লাখ পাউন্ড। এই অর্থের পুরোটাই তিনি দান করে দিয়েছিলেন ব্রাজিলের ২৩ জন শিশুর চিকিৎসার জন্য। ২০১৬ সালে ‘বিগ শো ইলেভেন’-এর উদ্যোগে ফরাসি মিডফিল্ডার পল পগবাকে সঙ্গে নিয়ে ১১ জন করে আফ্রিকার ২২ জন শিশুর অস্ত্রোপচারের খরচ বহন করেন। টুইটারে এক ভিডিও টুইটে ওজিল বলেন, ‘ইউরো চলার সময়ে ১১ জন শিশুর চিকিৎসার ভার নিচ্ছি আমি। এরাই আমার এগারো জন। আমার সবচেয়ে পছন্দের দল।’

মোহাম্মদ সালাহমোহাম্মদ সালাহ মিসর
একক ক্যারিশমায় নিজ দেশ মিশরকে বিশ্বকাপের মূল পর্বে পৌঁছে দিয়েছেন ‘ওয়ানম্যান আর্মি’ মোহাম্মদ সালাহ। সম্প্রতি সাড়ে চার লাখ ডলার অনুদান দিয়েছেন নিজ গ্রামে নির্মীয়মাণ পানি পরিশোধনের কারখানার জন্য। শুধু নিজ গ্রামের জন্যই নয়, জাতীয় অর্থনীতিতেও অবদান রাখছেন তিনি। মিশরের অর্থনীতির বিকাশের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত ফান্ডে ২ লাখ ৮২ হাজার ডলার প্রদান করেছেন। একবার তাঁর বাড়ির জানালা ভেঙে ঘরে চোর ঢুকলে তিনি চোরকে ধরে ফেলেন। কিন্তু পুলিশে খবর না দিয়ে অত্যন্ত আন্তরিকভাবে তার সঙ্গে কথা বলেন এবং আর্থিক সাহায্য দিয়ে বিদায় করেন।

Advertisement