দুনিয়া বদলানো ঘটনা জীবনের বিনিময়ে নারীরা যেভাবে ভোটাধিকার পেলেন

১৮৯৩ সালে নিউজিল্যান্ডের নারীরা ভোট দেওয়ার অধিকার পান। সেটাই ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে নারীদের ভোটের অধিকার পাওয়ার প্রথম ঘটনা। কিন্তু নারীর ভোটাধিকারের ধারণা নানান দেশে ছড়িয়ে পড়লেও বিশ শতকের গোড়ার দিকেও ভোটাধিকার বঞ্চিত ছিলেন খোদ ইংল্যান্ডের নারীরা! কেননা অন্যান্য অনেক দেশের মতো সেখানকার নারীদেরও পুরুষের সমকক্ষ বলে মনে করা হতো না। ব্রিটিশ নারী অধিকারকর্মী এমেলিন প্যাংকহার্স্ট ১৯০৩ সালের শেষের দিকে নারীর ভোটাধিকার এবং অন্যান্য অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উইমেনস সোশ্যাল অ্যান্ড পলিটিক্যাল ইউনিয়ন (ডব্লিউএসপিইউ) নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এর প্রায় দুই বছর পর, ১৯০৬ সালে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল–এ সাংবাদিক চার্লস ই হ্যান্ডস বিষয়টির বিরোধিতা করে একটি লেখা লেখেন। সেখানে লেখক এই সংগঠনের সদস্যদের ব্যঙ্গ করে ‘সাফ্রেজেটিস’ নাম দেন। তখন থেকেই নামটি প্রচলিত

হতে থাকে। ভোটাধিকারপ্রাপ্তির জন্য লড়া নারীরা পরিচিতি পান সাফ্রেজেটিস নামে। যদিও এই শব্দের উৎপত্তি বিদ্বেষপ্রসূত এবং এটি ব্যবহার করা হতো ব্যঙ্গার্থে। তখনকার সময় বেশির ভাগ সংবাদপত্র নারীর ভোটাধিকারপ্রাপ্তির আন্দোলনকে অহেতুক, অসার এবং ফালতু আখ্যা দিয়ে নানান ধরনের রচনা প্রকাশ করে।সাফ্রেজেট বা ভোটাধিকারপ্রাপ্তির জন্য লড়া এই নারীরা কিন্তু দমে যাওয়ার পাত্র ছিলেন না। তাঁরা কাজে বিশ্বাসী ছিলেন, কথায় নয়। এই আন্দোলনকারীরা জানালা ভাঙচুর করতেন, দালানে আগুন দিতেন এবং রেলিংয়ের সঙ্গে নিজেদের শিকলবন্দী করে রাখতেন ইস্যুটির প্রতি সর্বস্তরের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। কিন্তু এত করেও যেন কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। ১৯১৩ সালে ব্রিটিশ ‘সাফ্রেজেট’ অধিকারকর্মী এমিলি ডেভিসন ইংল্যান্ডের সারের এপসম শহরে এক ঘোড়দৌড়ের সময় ঘোড়ার পায়ের নিচে পড়ে প্রাণ হারান। অনেকে মনে করেন, সেটি ছিল আত্মহত্যা। তবে এটা নিশ্চিত করা যায়নি যে তিনি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন নাকি শুধু দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছিলেন। যে ঘোড়ার পায়ের নিচে পড়ে প্রাণ হারান ডেভিসন, সেই ঘোড়াটি ছিল ব্রিটেনের রাজা পঞ্চম জর্জের। সুতরাং এটা অসম্ভব নয় যে ডেভিসন নারীর ভোটাধিকার আন্দোলনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই তা করেছিলেন। কিন্তু যে উদ্দেশ্যেই হোক, ডেভিসনের মৃত্যু আবারও ইস্যুটিকে সামনে নিয়ে আসে।বেশ কয়েক বছর ভয়ডরহীন আন্দোলন করার পর

অবশেষে সাফল্য ধরা দেয়। ১৯১৮ সালে ব্রিটিশ নারীরা ভোট দেওয়ার অধিকার পান। মার্কিন নারীরা পান এর দুই বছর পর—১৯২০ সালে। এরপর ধীরে ধীরে অনেক দেশেই নারীরা ভোটাধিকার লাভ করেন। বর্তমানে বিশ্বের হাতে গোনা কয়েকটি দেশ ছাড়া প্রায় সব অঞ্চলেই নারীরা তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।
যেভাবে দুনিয়া বদলে গেলভোটাধিকারপ্রাপ্তিতে নারীরা সমাজের উন্নয়নে আরও বেশি ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছেন। নারী অধিকার আদায়ে এটা ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। নারীর মতামতের গুরুত্ব এর মাধ্যমেই রাষ্ট্র ও সমাজে অনেকটাই প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয়। পৃথিবীতে এখনো সমান অধিকারের জন্য নারীদের লড়ে যেতে হচ্ছে।সূত্র: হানড্রেড ইভেন্ট দ্যাট মেড হিস্ট্রি এবং ব্রিটানিকা ডটকম

Advertisement