দুর্নীতিমুক্ত, গতিশীল ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন যে পথে

।।মো: আব্দুল মালিক।।

সম্প্রতি বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর খবর প্রকাশিত হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ আতংকিত, সরকার বিব্রত, দেশের উন্নয়ন ও সুনাম ক্ষতিগ্রস্থ। যা জনসাধারণ, সরকার ও দেশের জন্য মোটেই কাম্য নয়। দূর্ণীতি অনিয়মের এসব ঘটনা ফাঁস হচ্ছে একের পর এক। আর মাত্রা অতিক্রম করছে একটি থেকে আরেকটি। যেন তীব্র প্রতিযোগিতা ও দূর্নীতি অনিয়মের মহোৎসব চলছে। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জিরো টলারেন্সের কথা বললেও কোনভাবেই লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হচ্ছেনা। আগে কোন কোন বিশেষ সেক্টরে অনিয়ম দূর্ণীতি হতো। এখন আর তা নেই। সকল সেক্টরই কম বেশি দূর্নীতিগ্রস্থ। যার প্রমাণ ডিআইজি মিজান, ফেনির ওসি, জামালগঞ্জের ডিসি, তাহিরপুরের ইউএনও, বালিশ, পর্দা, বই, ঢেউটিন, ঔষধ, সার্জিকেল আইটেম ক্রয়, কম্পিউটার মেরামত ইত্যাদি। এমনকি মাননীয় উচ্চ আদালতের মাননীয় তিনজন বিচারপতিকে সম্প্রতি বিচার কাজ থেকে বিরত রাখা হয়েছে। দূর্ণীতি দমনের জন্য যে দূর্ণীতি দমন কমিশন সেই কমিশনেও দূর্ণীতি। সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আওয়ামীলীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। যুবলীগের ২/৩ জন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একজন মহিলা ভাইস চ্যান্সেলরের বিরুদ্ধে দূর্ণীতির অভিযোগে উত্থাপিত হয়েছে। সর্বাঙ্গেঁ ব্যাথ্যা ঔষধ দিব কোথা ?
বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা বা বিচারহীনতার কারণে দূর্নীতি অনিয়ম দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোন কোন সময় একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা অধ:স্থন দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কাছে অসহায়। কারণ একজন দূর্নীতিবাজ উপরস্থদের ছত্রছায়ায় দূর্নীতি করে থাকে।
দূর্নীতির যেসব কাহিনী প্রকাশিত হয়েছে তা মোট দূর্ণীতির ভগ্নাংশমাত্র। প্রকাশিত ঘটনা থেকে দূর্ণীতির ধরণ ও ভয়াবহতা সম্পর্কে কিছুটা অনুমান করা যায়। একটি ঘটনা ঘটার পর অপরাধীকে যতই শাস্তি দেওয়া হউক না কেন ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। যেমন নুসরাত হত্যা মামলায় ওসি ও মৌলানা গং জেলে, বিচারাধীন। এক সময় হয়ত তাদের যথাযথ শাস্থিও হবে। কিন্তু নুসরাতকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব ? অবশ্যই না। ফেনির পুলিশ ও জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় সরকারদলীয় নেতারা নূন্যতম দায়িত্ব পালন করলে নুসরাত অকালে ঝরে যেত না। তেমনিভাবে ফেরীঘাটে তিতাসকে বিনা চিকিৎসায় মরতে হতো না। তিতাসের বেলায় ৯৯৯ ও কাজে আসে নি।
একটি দূর্নীতি অনিয়মের তদন্তপূর্বক বিচারকাজ সম্পন্ন করে শাস্থি প্রদান পর্যন্ত সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনেক কর্মঘন্টা নষ্ট হয়, অনেক অর্থের অপচয় হয়। এখানেও দূর্নীতি, কারচুপি থাকে ফলে প্রকৃত দোষীরা যথাযথ শাস্তি পায় না। দূর্নীতি অনিয়মের যেসব ঘটনা ফাঁস হয়েছে তা সংশ্লিষ্ট অফিস থেকেই ফাঁস হয়েছে। তাই কোন অফিসের বা দেশের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনীতিবিদ দূর্নীতিগ্রস্থ এটা বলা যাবে না। প্রতিরোধ হচ্ছে না সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব অবহেলার কারণে। বলা হয়ে থাকে ‘প্রতিষেধকের চাইতে প্রতিরোধই শ্রেয়।’ দূর্নীতি প্রতিরোধের জন্য দূর্নীতি দমন কমিশন আছে। এখন দূর্নীতিবিরোধী টাক্স ফোর্স গঠনের কথা চিন্তা করা হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হবে বলে মনে হয় না। কারণ টাক্স ফোর্স করতে হবেত এদেশের মানুষ দিয়েই। কিছুদিন পূর্বে একজন ম্যাজিস্ট্রেট একটি প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর একটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করায় তাকে রাতের আঁধারে বদলি করা হয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিদেশ থেকে এই বদলির আদেশ বাতিলের নির্দেশ দিলে এই অন্যায় অনিয়মের বদলি বাতিল করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশে ছিলেন না কিন্তু সরকারের অন্যান্য মন্ত্রী, মন্ত্রনালয়ের সচিব, দূর্নীতি দমন কমিশন সহ সবাইত ছিল, কেউত এগিয়ে আসে নি। এভাবে অনেক বিষয়েই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। নিরব অনিয়ম দূর্নীতির আরো দু/একটি উদাহরণ দেই।
ক) একটি অফিস তিন মাস পর তুচ্ছ বিষয়ে একটি আবেদন ফেরত পাঠিয়েছে। ততদিনে আবেদনের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেছে। আবেদনটি ছিল বহি: বাংলাদেশ গমনের অনুমতির জন্য।
খ) মন্ত্রনালয়ের গেজেট হচ্ছে ৩১ তারিখ পর্যন্ত আবেদন জমা নেয়া হবে, পরের ১৭ তারিখের মধ্যে প্রার্থির চূড়ান্ত করে ৩১ তারিখের মধ্যে মন্ত্রনালয়ে পাঠাতে হবে। কিন্তু ডিসি মহোদয়ের ১৭ বা ৩১ তারিখের মধ্যেও সভা করে প্রার্থি চূড়ান্ত করার সময় হয়নি। তিনি সভা করেছেন এর পরের মাসের ০৯ তারিখ। সিন্ধান্ত দিয়েছেন প্রার্থির বিরুদ্ধে। কারণ এত দেরীতে পাঠালে যদি মন্ত্রণালয় কোন প্রশ্ন করে।
গ) বর্তমান সরকারের নীতি হচ্ছে বেসরকারী চাকুরী সরকারী করা। বেসরকারী চাকুরীজীবিদের জন্য পেনশন সুবিধা চালু করা। কিন্তু খোদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অধীনে পরিচালিত মন্ত্রানালয়ের একটি অধিদপ্তর সরকারী চাকুরী বেসরকারী করেছে। পেনশনযোগ্য চাকুরীকে পেনশন অযোগ্য করেছে। এমন আরো বহু উদাহরণ আছে। অথচ এসব দূর্ণীতি অনিয়ম হিসেবে গণ্য হচ্ছে না।
এসব থেকে বুঝা যায় মানুষ আজ কতটা অসহায়। এছাড়াও আরো বহু বিষয় আছে। যেমন সরকারি কাজে রডের পরিবর্তে বাঁশের ব্যবহার, কাজ না করে বিল উত্তোলন, পুরো মাস কর্মস্থলে না গিয়ে ০১ তারিখ বেতন ভাতা গ্রহণ, অফিস সময়ে হাসপাতালে বসে প্রাইভেট রোগী দেখা ইত্যাদি।
তাই দূর্নীতি অনিয়ম রুখতে, গতিশীল প্রশাসন, জঙ্গী মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেই দায়িত্ব নিতে হবে। প্রশ্ন উঠতে পারে একজন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কী এতসব দায়িত্ব পালন করা সম্ভব ? হ্যাঁ সম্ভব।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার সচিব কমিটির সভায়, ডিসি সম্মেলনে জোর দিয়ে বলেছেন, সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি যথাযথ গুরুত্বের সাথে বাস্তবায়ন করার জন্য। কিন্তু কার কথা কে শুনে। ফাইল নড়ে না, উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন হয় না বরং কৌশলে প্রতিহত করা হয়। এসব ব্যাপারে সরকারদলীয় নেতাকর্মী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এমপি, মন্ত্রী পর্যন্ত যথাযথ দায়িত্ব পালন করছেন না বলে প্রতীয়মান হয়। সবাই কৌশলে দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন। যার প্রমাণ ফেণী ও ফেরীঘাটের ঘটনা, ছাত্রলীগ যুবলীগের কর্মকান্ড। অনেক ঘটনা আজকাল মানুষ নীরবে সহ্য করে যাচ্ছে। কারণ প্রশাসন, থানা পুলিশ, জনপ্রতিনিধি বা স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিকে অবহিত করলে হীতে বিপরীত হয়। তাই পারত পক্ষে মানুষ বিচারপ্রার্থী হতে চায় না। প্রশাসনের নীতিমালার কারণে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে ডিসি, ইউএনও তেমন কাজে আসছেনা। আবার জনপ্রতিনিধি যেমন উপজেলা ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের উপর প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। মানুষের ইজ্জত, সম্পদ হানি হচ্ছে, বিচারহীনতা চলছে, অনেক সময় বিচারের নামে অন্যায়ভাবে আপোষ করতে বাধ্য করা হচ্ছে ইত্যাদি।
এই যে অরাজক পরিস্থিতি তার কী কোন সমাধান নেই ? অবশ্যই আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর দলীয় নেতাকর্মী, প্রশাসন দূর্নীতি করুক, মন্থর গতিতে কাজ করুক তা মোটেও চান না। তাঁর শত্রুরাও স্বীকার করবে তিনি দূর্নীতি চান না। সুশাসন, মানুষের ও দেশের কল্যাণ চান। কিন্তু তাঁর একার পক্ষে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি তাঁর অভীষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়নে মন্ত্রী, এমপি, দলীয় নেতাকর্মী এবং আমলাদের কাংখিত সহযোগিতা পাচ্ছেন না। সচিব, ডিসি, এসপি বা এ ধরণের গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য পদে সরকারের পছন্দসই, বাছাই করা ব্যক্তিদের নিয়োগ করা হয়। এসব পদাধিকারী যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতেন তাহলে প্রশাসন দূর্নীতিমুক্ত, গতিশীল হতো। মন্ত্রী, এমপি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, দলীয় নেতাকর্মীরা দূর্নীতিমুক্ত ও সচেতন হলে আমলারা দূর্নীতিমুক্ত, গতিশীল না হয়ে পারতেন না। কিন্তু বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রে তা দেখা যাচ্ছে না। তাহলে কী এইসব সমস্যার কোন সমাধান নেই ? অবশ্যই আছে। আর এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাস্তবায়ন করতে পারেন তাঁর ডিজিটাল বাংলাদেশের কনসেপ্টকে কাজে লাগিয়ে অতিরিক্ত কোন ব্যয় ছাড়া। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম ও গতিশীল নেতৃত্বে যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছেন, সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ দিয়ে তিনি দূর্নীতিমুক্ত, গতিশীল, জনকল্যানমুখী প্রশাসন অনায়াসে গড়ে তুলতে পারেন। আর সেখানে মন্ত্রী, এমপি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, দলীয় নেতা কর্মী এবং সংশ্লিষ্ট আমলারা অবশ্যই দায়িত্বশীল হবেন, হতে বাধ্য। আমরা দেখি শপিংমল, মার্কেট বা দোকানে এক বা একাধিক সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। এসব ক্যামেরার বদৌলতে সেখানে চুরি, ডাকাতি ইত্যাদি হচ্ছেনা বা হলেও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অপরাধীদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় অনায়াসে নিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে। এ ধরণের একটি সিসি ক্যামেরা যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্থাপন করা যায়, যেটি সারা বাংলাদেশকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজরে রাখবে এবং যেখানে দূর্নীতি অনিয়ম সেখানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দেশ পাঠাবে। বাস্তবে বিজ্ঞানীরা বা কোন কোম্পানী এ ধরণের কোন ক্যামেরা এখনো আবিষ্কার করেননি। তাহলে উপায় কী ? উপায় আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাশে একটি কক্ষে ২৪ ঘন্টা ২০/২৫টি মোবাইল নম্বর সচল থাকবে। এই নম্বরগুলো সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে এবং প্রতিটি অফিসের বাইরে সাইনবোর্ড আকারে লাগিয়ে রাখতে হবে, যাতে সহজেই এই নম্বরগুলো পাওয়া যায়। যেখানে, যে কেউ, যে কোন অনিয়মের সম্মুখীন হবে বা দেখবে সাথে সাথে এসব নম্বরে ফোন করে, ছবি তুলে বা লাইভ দেখিয়ে জানিয়ে দিবে। সংশ্লিষ্ট অপারেটর ফোন রিসিভ করে ঐ অফিসে ঐ সময় যিনি উপস্থিত আছেন তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করবেন। একটি রেজিস্টারে তা সংরক্ষণ করবেন এবং সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্তা ব্যক্তি, জেলা, উপজেলার কর্তাব্যক্তি বা অন্য যেকোন সংস্থা, জনপ্রতিনিধিকে মোবাইলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিবেন বা জানার চেষ্টা করবেন। এই নির্দেশ দেওয়ার জন্য সেখানে সচিব পদ মর্যাদার একজন কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন। এই নির্দেশের প্রেক্ষিতে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো তা আবারো সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, দপ্তর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করবেন। যেমন একজন রোগী নিয়ে যে কোন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুপুর ২টায় যাওয়া হলো। সেখানে কোন ডাক্তার নেই। এক্ষেত্রে রোগী বা রোগীর আত্মীয়স্বজন এসব নম্বরে ফোন করে অভিযোগ করবেন। সাথে সাথে ঐ কমপ্লেক্সের পিয়ন- করণীক যিনি উপস্থিত আছেন তার বক্তব্য নেওয়া হবে এবং এ বিষয় তদন্ত করার জন্য মোবাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান, সিভিল সার্জনকে অবহিত করা হবে। উনারা তাৎক্ষণিক খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং প্রতিবেদন দিবেন। অনেক সময় থানা পুলিশ মামলা নেয় না, জোর করে আপোষ করতে বাধ্য করে। এরকম ক্ষেত্রে অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে থানার ওসি, ইউএনও, উপজেলা চেয়ারম্যান, এসপি, ডিসিকে মোবাইলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তাৎক্ষণিক জানতে চাওয়া হবে, নির্দেশ দেওয়া হবে। এইভাবে যদি বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চলে যায় তাহলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, সচিব, ডিজি, বিভাগীয় কর্মকর্তা, ডিসি, এসপি, সংশ্লিষ্ট এলাকার এমপি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সতর্ক থাকতে বাধ্য হবেন। এতে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে দায়িত্বশীলতা বাড়বে, দূর্ণীতি কমবে, প্রশাসন গতিশীল হবে। যদি ফেণীর নুসরাত বা তিতাসর কথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকত তাহলে এসব ঘটনা ঘটতে পারত না। প্রতি সপ্তাহের শেষে কোন জেলার কোন বিভাগ থেকে (অর্থাৎ পুলিশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি) কতটি অভিযোগ গেছে তা জানিয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা ও বিভাগীয় কর্মকর্তাদের কারণ দর্শাতে বলা হলে প্রশাসনের জবাবদিহিতা বেড়ে যেত। এর ফলে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত ডিসি, এসপি বা অন্যান্য কর্মকর্তাদের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, সততার প্রমাণ পাওয়া যেত। কে প্রমোশনের যোগ্য আর কে অযোগ্য এখানেই নির্ধারণ হয়ে যেত।
এক্ষেত্রে প্রতিটি জেলা ও মহানগরের জন্য একটি করে রেজিস্টার এবং সে সব রেজিস্টারে থানা ও উপজেলা ভিত্তিক অভিযোগের রেকর্ড সংরক্ষণ করা হলে সহজেই থানা ও উপজেলা ভিত্তিক অভিযোগের সংখ্যা, ধরণ ইত্যাদি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তাৎক্ষণিক জানা সম্ভব হবে। তখন কোন মন্ত্রী, এমপি, নেতা কতটা সততা নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন তাও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জানা সহজ হবে। এ পদ্ধতির একটি অসুবিধা হলো অনেকে ভূয়া ফোন করতে পারে। এক্ষেত্রে তদন্ত করে ভূয়া ফোনকারীকে সনাক্ত করে শাস্তি প্রদান এবং ঐ নম্বর স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া হলে এরকম ঘটনা তেমন ঘটবেনা।
বর্তমানে অনেক তথ্য সাংবাদিকরা বিভিন্ন কারণে তাৎক্ষণিক সংগ্রহ করতে পারেন না বা সাংবাদিক, গোয়েন্দা ইত্যাদি সংস্থাকে ম্যনেজ করে দূর্নীতি চলে। সাধারণ জনগণ সাংবাদিক বা গোয়েন্দা হলে তাৎক্ষণিক ছবি/ডকুমেন্ট পৌঁছে যাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। ফলে দূর্নীতি অংকুরেই ধরা পড়ে যাবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি মাত্র তিন মাস এই কার্যক্রম পরিচালনা করেন তাহলে রডের পরিবর্তে বাঁশ, থানায় মামলা না নেওয়া বা তথাকথিত আপোষ করা, বাঁধ না দিয়ে বিল উঠানো, ফাইল আটকানো, কর্তা ব্যক্তিদের অনিয়ম দূর্ণীতি, অপরাধ অনিয়ম দেখেও না দেখার ভান করা বা অভিযোগ উত্থাপিত হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা না নেয়া বা অভিযোগের বিপক্ষে সাফাই গাওয়া, এমন কী দলীয় কর্মকান্ড কোথায় কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে, কোথায় মন্ত্রী, এমপির ছত্রছায়ায় রাজাকার পূর্ণবাসিত হচ্ছে, প্রশাসনে দালালি হচ্ছে ইত্যাদি যাবতীয় তথ্য অতি সহজেই স্বল্প সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চলে যাবে। প্রধানমন্ত্রী ক্ষেত্র বিশেষে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত করে ও প্রকৃত অবস্থা জানতে পারবেন। ফলে দূর্ণীতিমুক্ত, গতিশীল প্রশাসন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ গড়া সহজেই সম্ভব হবে।

Advertisement